দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: দেশে নতুন করে আরও ৪৩ জন চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর আগে ১০৪ জন আক্রান্ত ছিলেন। এ নিয়ে এ পর্যন্ত ১৪৭ জন চিকিৎসক আক্রান্ত হলেন। এখন পর্যন্ত  প্রতি ২০ জন সাধারণ রোগীর মধ্যে একজন চিকিৎসক আক্রান্ত হয়েছেন।

বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) তথ্যানুযায়ী চিকিৎসক ছাড়া দেশে ৫১ জন নার্স ও ১০৩ জন স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন। চিকিৎসক নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী সব মিলিয়ে ৩০১ জন আক্রান্ত হয়েছেন। সেই হিসেবে ১০ জনে একজন স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন।

একদিনে ৪৩ জন চিকিৎসক আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি সাধারণভাবে দেখছেন না চিকিৎসক নেতারা।

তারা বলছেন, দায়িত্বশীলদের কিছু ভুলের কারণে আজ চিকিৎসকসহ দেশবাসীকে হুমকির মুখে পড়তে হয়েছে। আইইডিসিআর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কিছু ভুলে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে তাদের দাবি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক নেতা বলেন, ‘বারবারই তারা বলে এসেছেন- সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। তারা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শকে গুরুত্ব দেননি। কিন্তু তিন মাসের প্রস্তুতির ফসল তো আমরা দেখছি পাচ্ছি। কোনো কিছুই ঠিকঠাক হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘মহামারীর সময়ে যে ধরনের ব্যবস্থা নিতে হয়, তারা নিতে পারেননি। তারা ভেবেছেন, এই ভাইরাস আমাদের দেশে আসবে না। কিন্তু সারা বিশ্বের জন্য যখন মহামারি ঘোষণা করা হলো, তখনই নড়েচড়ে বসা দরকার ছিল। কেননা সাধারণ রোগী বলে কিছু থাকে না। এ সময়ে সবাইকেই আক্রান্ত ধরে নিতে হয়। যে রোগীই আসুক না কেন তাকে আক্রান্ত ধরে নিয়ে সেই মানের চিকিৎসা দিতে হয়, পরীক্ষার রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত। নেগেটিভ হলে তো আর কথাই নেই । সেই রোগীর ব্যাপারে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া। কিন্তু আমরা করলাম কী। আমার ১০ জন ১৫ জন করে পরীক্ষা করিয়েছি। আর বলেছি আক্রান্ত নেই। বিভিন্ন হাসপাতালেও এসময় রোগীরা গেছেন। যখন একজন আক্রান্ত হয়েছেন। সেই একজনের দ্বারা অন্যরাও আক্রান্ত হয়েছেন। চিকিৎসক আক্রান্ত হয়েছেন। তবে এখন আর বসে না থেকে মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে মনে করে সেইভাবে প্রস্তুতি রাখা দরকার।’

বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন বিএমএ মহাসচিব ডা. মো. ইহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, ‘শিশু হাসপাতালে চার ভাগে ভাগ করে ডিউটি রোস্টার করার চিন্তা করা হয়েছিল। প্রতিদিন ১২ ঘণ্টা করে চিকিৎসকরা এক এক গ্রুপে ভাগ করে ডিউট করতেন। এভাবে সাত দিনে ৮৪ ঘণ্টা ডিউটি শেষে কোয়ারেন্টাইনে যাবে। কোয়ারেন্টাইন শেষে হলে আবার ডিউটিতে যোগ দিতেন। কিন্তু কিছু কারণে এটা সম্ভব হয়নি। এমন রোস্টার করতে পারলে চিকিৎসকরা কম আক্রান্ত হতেন। সবাইকে একবারে নামানোটা ভুল ফর্মুলা। যাই হোক, রোস্টারে এখন কিছু পরিবর্তন এসেছে। এটা ভালো দিক।’

চিকিৎসক আক্রান্তের পেছনে রোগীদের তথ্য গোপনকেও তিনি দায়ী করেন। তিনি সবাইকে তথ্য গোপন না করার আহ্বান জানান।

বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) অধ্যাপক ডা. মো.শহিদ উল্লাহ বলেন, ‘চলমান পরিস্থিতিতে চিকিৎসকদের পর্যাপ্ত ও মানসম্মত সুরক্ষা সামগ্রী সরবরাহ, তাদের আবাসন, ট্রান্সপোর্ট ও চিকিৎসার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করা না হলে কয়েকদিন পর রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য কোনো চিকিৎসক পাওয়া যাবে না।’

করোনায় আক্রান্ত হয়ে দেশে আরও ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে করোনায় মৃতের সংখ্যা ১০১ জনে দাঁড়িয়েছে।

এছাড়া, নতুন করে আরও ৪৯২ জনের শরীরে করোনাভাইরাসে উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়া গেছে। এর আগে ২ হাজার ৪৫৬ জন আক্রান্ত ছিল। এ নিয়ে দেশে আক্রান্তে সংখ্যা ২ হাজার ৯৪৮ জনে দাঁড়িয়েছে।

বাংলাদেশ ডক্টরস ফোরাম (বিডিএফ) এর তথ্যানুযায়ী দেশে ১৭০ জন নার্স ও সোসাইটি ফর নার্সেস সেফটি অ্যান্ড রাইটস সংগঠনের তথ্যানুযায়ী দেশে ৮৭ জন নার্স করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।

এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, ‘আমার সবাই জানি এটা একজন থেকে আরেক জনে ছড়ায়। আমাদের কিমিউনিটি ট্রান্সমিশন হয়ে গেছে। চিকিৎসক কর্মস্থলে রোগীর মাধ্যমেও আক্রান্ত হতে পারেন। আবার বাইরে কমিউনিটি থেকেও আক্রান্ত হতে পারেন। অনেক রোগী আছেন যারা লুকান। আবার অনেক রোগী আছেন, যারা জানেনই না, তারা আক্রান্ত। সেক্ষেত্রে তাদের মাধ্যমেও আক্রান্ত হতে পারেন। এখন যারা আক্রান্ত হয়ে গেছেন, তো গেছেন। এখন থেকে যারা চিকিৎসা দেবেন, পর্যাপ্ত সুরক্ষা নিয়েই চিকিৎসা দেবেন। তাদের জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/২১এপ্রিল,২০২০)