ইসলামে পাপ মোচনের যত উপায়
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: জেনে না জেনে আমরা শত শত গোনাহ বা পাপ করে বসে আছি, হয়তো করছি এখনো। শয়তানের ধোঁকায়, নফসের প্ররোচনায়, ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায় ইত্যাদি নানাভাবে আমাদের পাপ যেন পাহাড়সম হয়ে উঠেছে। কিন্তু আশার কথা কি জানেন। মহান আল্লাহ পাক তার প্রিয় বান্দাদের জন্য রেখেছেন পাপ মোচনের অসংখ্য পথ।
যে কোনো পাপ মোচনের জন্যই আল্লাহ পাক বান্দাদের জন্য খোলা রেখেছেন তাওবার দরজা। সেইসাথে বিভিন্ন উপলক্ষে নেক আমলের মাধ্যমেও আল্লাহ বান্দার পাপ মোচনের ব্যবস্থা রেখেছেন। মুমিনরা বুদ্ধিমান। তারা এ সকল আমল ও উপলক্ষকে কাজে লাগায়। সেইসাথে পাপ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে সচেষ্ট থাকে। তাই চলুন হাদীস ও কোরআনের আলোকের মুমিনের পাপ মোচনের কিছু উপায় জেনে নেই। আর পূর্বে করা সমস্ত পাপের জন্য পরম করুণাময় আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করি। একইসাথে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, যাতে বাকি জীবনে পাপ করা থেকে বিরত থাকতে পারি।
তওবা করা
পাপ করানোর জন্য প্রতিনিয়ত শয়তান আমাদের উস্কানি দিচ্ছে। আর এমনিভাবে সারাদিনের এবাদত, এমনকি দীর্ঘদিনের অর্জিত সওয়াবকে ব্যর্থ করে দিতে পারে শয়তান। আর তাই মুমিনকে আল্লাহ তাআলা দান করেছেন এক মোক্ষম অস্ত্র। যা ব্যর্থ করে দিতে পারে শয়তানের সকল চক্রান্ত।
আর তা হল তাওবা। তাওবার মাধ্যমে মহাপাপীও হয়ে যেতে পারে গোনাহমুক্ত। এই বিষয়ে হাদীস শরীফে বলা হয়েছে, গোনাহ থেকে তওবাকারী গোনাহমুক্ত ব্যক্তির মত। সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ৪২৫০
তাছাড়া, এই বিষয়ে মহান রাব্বুল আলামীন সূরা আলে ইমরান (৩) ১৩৫ নাম্বার আয়াতে বলেন, এবং তারা সেই সকল লোক, যারা কখনো কোনো অশ্লীল কাজ করে ফেললে বা (অন্য কোনোভাবে) নিজেদের প্রতি যুলুম করলে সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং তার ফলশ্রুতিতে নিজেদের গোনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আল্লাহ ছাড়া কেই বা আছে, যে গোনাহ ক্ষমা করতে পারে? আর তারা জেনে শুনে তাদের কৃতকর্মে অবিচল থাকে না।
একই বিষয়ে বলা হয়েছে সহীহ মুসলিম এর ২৭৫৯ নং হাদীসে। বলা হয়, আল্লাহ তাআলা রাতে তাঁর (ক্ষমার) হাত প্রসারিত করেন, যাতে দিনে যারা পাপ করেছে তারা তওবা করতে পারে। আর দিনে তাঁর (ক্ষমার) হাত প্রসারিত করেন, যাতে রাতে যারা পাপ করেছে তারা তওবা করতে পারে। এভাবে (তাঁর অবারিত ক্ষমা) চলতে থাকবে সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদিত হওয়া পর্যন্ত।
নেক আমল
কোনো পাপ হয়ে গেলে একজন খাঁটি মুমিনের করণীয় কী? পাপ হওয়ার সাথে সাথেই মুমিন পেরেশান হয়ে যায় তা মোচনের জন্য। আর তাই মহান আল্লাহ তাআলা মুমিনকে বাতলে দিয়েছেন সে পথ। তওবা কর ও নেক আমল দ্বারা সেটি মিটিয়ে দাও।
নেক আমলের দ্বারা পাপ মোচনের বিষয়ে সূরা হূদ এর (১১) : ১১৪ নং আয়াতে বলা হয়েছে, তুমি সালাত কায়েম কর দিবসের দুই প্রান্তভাগে এবং রজনীর প্রথমাংশে। অবশ্যই নেক আমল পাপসমূহ মিটিয়ে দেয়। যারা উপদেশ গ্রহণ করে, এ তাদের জন্য এক উপদেশ।
জামে তিরমিযীর ১৯৮৭ নং হাদীসেও বলা হয়েছে একই বিষয়ে। বলা হয়, হে আবু যর! যেখানেই থাক আল্লাহকে ভয় কর এবং কোনো পাপ হয়ে গেলেই নেক আমল কর; তা তোমার পাপ মিটিয়ে দিবে।
সেইসাথে এই বিষয়ে মুসনাদে আহমাদ এর ২ নং হাদীসে বলা আছে, কারো কোনো পাপ হয়ে গেলে সে যদি উত্তমরূপে ওযু করে এবং দুই রাকাত নামায পড়ে আল্লাহর কাছে মাফ চায় আল্লাহ তাকে মাফ করে দেন।
তাছাড়া, পাঁচ ওয়াক্ত নামায, এই মধ্যবর্তী সময়ের সকল গোনাহগুলো মিটিয়ে দেয়। জুমার নামায মুমিনের সারা সপ্তাহের গোনাহ মিটিয়ে দেয়। ওযু, মুমিন বান্দার সকল গোনাহ ধুয়ে দেয়। নামাযের জন্য মসজিদে গমন করলে প্রতি কদমে কদমে বান্দার গোনাহ মাফ হয়ে যায়। বান্দার পাপ মোচনের এই উপায়গুলো বিভিন্ন হাদীসে বর্ণনা করা হয়েছে।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/২৩এপ্রিল,২০২০)