দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: স্পেনে করোনার প্রকোপ কমতে থাকায় ৪৯ দিন পর শনিবার থেকে দেশটির নাগরিকরা ঘর থেকে বের হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। এমনকি এক শহর থেকে অন্য শহরেও যাওয়ার অনুমতি পাচ্ছেন আর মাত্র একদিন পর থেকে।

প্রথমে অস্ট্রিয়া, পরে ইতালি- ধীরে ধীরে খুলতে শুরু করেছে ইউরোপের করোনা জট। তালিকায় তৃতীয় নম্বরে থাকা দেশটির নাম স্পেন। টানা ৪৯ দিন হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার পর দেশটির নাগরিকগণ ঘর থেকে বের হওয়ার এই সুযোগ পেয়েছেন।

করোনাভাইরাসের প্রকোপ কমতে থাকায় পরিস্থিতি বিবেচনা করে শিশু কিশোরদের পাশাপাশি বয়স্ক নাগরিকদেরও শনিবার (২ এপ্রিল) থেকে মুক্ত বাতাসে বের হওয়ার সুযোগ দিয়েছে সরকার। তবে বয়সের তারতম্য অনুসারে নির্দিষ্ট সময়ও ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। তাদের এই নির্দিষ্ট সময় মেনে চলতে হবে।

বলতে গেলে করোনাভাইরাসের কারণে দেওয়া লকডাউন কার্যত তুলে নিচ্ছে স্পেন সরকার। ভাইরাসটিতে আক্রান্ত রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা কমতে থাকায় চলমান জরুরি অবস্থার অনেকগুলো বিষয় শিথিল করেছে।

শনিবার সারাদিন স্পেনের রাস্তায় নাগরিকদের চলাচল করতে দেখা গেছে। খোলা হয়েছে কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, রেস্তোরাঁ। তবে প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকদের মানতে হচ্ছে সরকারের বেধে দেওয়া কিছু শর্ত। এ ছাড়া শহরজুড়ে ৪ ধাপের পরিকল্পনা নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ধীরে ধীরে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ব্যবসায় চালু করা হবে বলেও জানিয়েছে সরকার।

কী কী নিয়ম পালন করতে হবে নাগরিকদের-
শারীরিক অনুশীলন ও সংক্ষিপ্ত হাঁটা বা পায়চারির জন্য সকাল ৬টা থেকে সকাল ১০টা ও বিকাল ৮টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ১৪ বছর ঊর্ধ্ব নাগরিকরা এ সময়ের মধ্যে দিনে একবার ঘর থেকে বের হতে পারবেন। তবে তাদেরকে বাড়ির ১ কিলোমিটারের মধ্যে থাকতে হবে।

একই বাড়ির দুইজন একসঙ্গে সংক্ষিপ্ত হাঁটতে বা পায়চারি করতে পারবেন। তবে অন্য লোকজন থেকে ২-৩ মিটার দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। এছাড়া খেলাধূলা কিংবা শারীরিক অনুশীলন করতে হলে এককভাবে তা করতে হবে।

সত্তর বা সত্তোরোর্ধ্ব প্রবীণ ও পরনির্ভরশীল ব্যক্তিরা সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা ও বিকেল ৭টা থেকে বিকাল ৮টা পর্যন্ত একা কিংবা কোনো সঙ্গী বা সাহায্যকারী একজনকে (যাদের বয়স ১৪ থেকে ৭০ বছর) নিয়ে ঘর থেকে বের হতে পারবেন।

১৪ বছরের নিচের কম বয়সী শিশুদের বাইরে বের হওয়ার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা। বাবা-মা বা আয়ার মধ্যে যেকোনো একজন তাদের সঙ্গে যেতে পারবেন। বাড়ির ১ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থান এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দিনে একবার বাড়ি থেকে শিশুদের নিয়ে বেরুতে পারবেন অভিভাবক।

স্পেনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, যেসব মিউনিসিপালিটির জনসংখ্যা ৫ হাজারের কম, সেখানে উল্লেখিত সময় নির্ধারণ তালিকা প্রযোজ্য হবে না।

প্রসঙ্গত, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ফলে স্পেনে গত ১৪ মার্চ থেকে জরুরি সতর্কতা জারি করা হয়। এরপর থেকেই দেশটির নাগরিকরা কার্যত গৃহবন্দী ছিলেন। করোনাভাইরাসের প্রকোপ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে না এলেও সরকার চলমান জরুরি অবস্থায় অনেকগুলো বিষয় শিথিল করেছে। ২৬ এপ্রিল থেকে শিশু কিশোরদের একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘর থেকে বের হওয়ার সুযোগ পেয়েছে।

স্পেনজুড়ে ৪ ধরনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করছে সরকার- তথ্য দেওয়া হলেও সেগুলো কী তা এখনো প্রকাশ করা হয়নি। প্রধানমন্ত্রী পেদ্র সানচেজ মনে করছেন, পরিকল্পনার সঠিক বাস্তবায়ন ও ফলপ্রসূ হলে জুন মাসের শেষের দিকে করোনাভাইরাস থেকে স্বাভাবিক জীবন যাত্রায় ফিরবে স্পেন।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/০৩মে,২০২০)