ওয়ালটনকে নিয়ে করোনা আক্রান্তের আবেগঘন লেখা
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: লেখাটা ধন্যবাদ দিয়ে শুরু করবো নাকি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে- বুঝতে পারছি না।
হাসপাতালে আইসোলেশনে থাকায় পানি গরম করার জন্য একটি ইলেক্ট্রিক কেটলি ও মশা মারার জন্য একটি ইলেক্ট্রিক ব্যাট খুবই প্রয়োজন ছিল। পুরো শহর লকডাউন থাকায় সব ইলেক্ট্রনিক্স দোকান বন্ধ। গত তিন দিন ঠান্ডা পানি খেয়ে আছি। অনেক চেষ্টা করেও কোনোভাবেই একটি কেটলি সংগ্রহ করতে পারিনি।
ইভ্যালি, দারাজ সব জায়গায় খোঁজ নিলাম। তাদের ভাষ্যমতে ঢাকাতেও হোম ডেলিভারি পেতে ৩ থেকে ৭ কর্মদিবস সময় লাগবে! এদিকে এতোদিন অপেক্ষা করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ গরম পানি পান না করলে যে কোনো মুহূর্তে আমার সর্দি-কাশি লেগে যেতে পারে।
এমন সময় ফেসবুক হোমপেজ স্ক্রল করতে করতে ওয়ালটনের ফেসবুক পেজ চোখে পড়ল। তারা লকডাউন অবস্থায় সীমিত আকারে হোম ডেলিভারি দিচ্ছে। তাদের টোল ফ্রি হেল্পলাইন নম্বরে কল দিয়ে জানলাম, তাদেরও ঢাকার ভেতরে হোম ডেলিভারি দিতে কমপক্ষে ৪৮ ঘণ্টা সময় লাগবে।
বিস্তারিত খুলে বললাম, কিন্তু তিনি নিরুপায় হয়ে ক্ষমা চাইলেন এবং বললেন, ওয়েব সাইটে দেওয়া এরিয়া ভিত্তিক শো-রুমে কথা বলার জন্য।
আল্লাহর নাম নিয়ে কল দিলাম পল্টন ওয়ালটন শোরুমে। রিসিভ করলেন শো-রুমের ম্যানেজার। তিনিও জানালেন এই অবস্থায় ৪৮ ঘণ্টার ভেতর ডেলিভারি সম্ভব নয়। তাকে বললাম, ভাই আমি করোনা পজেটিভ হয়ে হাসপাতালে আইসোলেশনে আছি। এ কথা শোনার পর তিনি ব্যথিত হয়ে জানালেন, অনলাইনে অর্ডার না করার জন্য। কারণ তিনি ব্যক্তিগতভাবে আমাকে হোম ডেলিভারি দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন এবং আমার কাছে ঠিকানা জেনে নিলেন।
১৫ মিনিট পর অন্য একটি নাম্বার থেকে কল এলো। ফোনের অপর প্রান্ত থেকে জানালো সে আমার প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো নিয়ে এসেছে। আমি তো পুরোই অবাক! চার তলার জানালা দিয়ে গেইটের দিকে তাকিয়ে দেখলাম একজন পিপিই পরে দাঁড়িয়ে আছেন। বুঝলাম তিনিই ডেলিভারি দেওয়ার জন্য এসেছেন। আমি সঙ্গে সঙ্গে ম্যানেজারকে ফোন করলাম এবং বিকাশে কতো টাকা পাঠাবো জানতে চাইলাম। ম্যানেজার দুটি প্রডাক্টেই ১০ শতাংশ ছাড় দিয়ে যে টাকা হয় সেটি দিতে বললেন এবং একইসঙ্গে ডেলিভারি চার্জ দিতেও নিষেধ করলেন। শুধু তাই নয়, পরে যে কোনো সময় কোনো প্রোডাক্ট লাগলে ফোন দিতে বললেন। এতো সুন্দরভাবে গুছিয়ে তিনি কথাগুলো বলছিলেন শুনে মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছিলাম!
ম্যানেজার পর্ব শেষ। এবার আরেক চমকের পালা! ডেলিভারি ম্যান প্রোডাক্ট দুটি আমার হাতে দিয়ে যাবেন ম্যানেজারের এমনই নির্দেশ। সুতরাং ডেলিভারিম্যান আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাইলেন। আমি করোনা পজেটিভ তাকে অনেক বুঝানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু তিনি নাছোড়বান্দা। যতোটা সময় লেগেছে শোরুম থেকে এখানে আসতে তার চেয়ে বেশি সময় লেগেছে তাকে বোঝাতে যে, আমার কাছে আসা খুবই রিস্কি পিপিই পরা থাকলেও। অনেক বলার পর ফাইনালি সে গেইটে প্রোডাক্ট দুটি রেখে যায় এবং আমি ওয়ার্ড বয়কে দিয়ে সেগুলো রুমে নিয়ে আসি। খুব কিউট লেগেছিলো ছেলেটির কথাগুলো, দেখতে মন চাচ্ছিলো। কিন্তু আমি নিরুপায়।
আসলে আমার অতিপ্রয়োজনীয় প্রোডাক্ট দুটি হাতে পেয়ে যতোটুকু না খুশি হয়েছি তারচেয়ে বেশি খুশি হয়েছি তাদের আন্তরিকতায়। অনেক ধন্যবাদ, স্যালুট আপনাদের। আল্লাহ আপনাদের হেফাজতে রাখুক।
দাম কম রেখেছে কিংবা ডেলিভারি চার্জ নেয়নি বলে এতো কিছু লিখিনি। তাদের আন্তরিকতা ও দায়িত্ববোধ দেখে আরো অনেক কিছু লিখতে মন চাইছে। তাছাড়া ওষুধ খাওয়া, ফল খাওয়া, নামাজ পড়া আর শুয়ে থাকা ছাড়া আইসোলেশনে থাকা অবস্থায় কিই-বা কাজ আছে আমার?
এখন সবারই খুব আন্তরিক এবং দায়িত্বশীল হওয়া প্রয়োজন; তবে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে। অতি উৎসাহের প্রয়োজন নেই।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/০৪মে, ২০২০)