দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: বিশ্ব মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে সবশেষ কয়েকটি জেলা মুক্ত ছিল। সেগুলোকে সৌভাগ্যবান জেলা হিসেবেই মনে করা হচ্ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত একে একে সব জেলাতেই শনাক্ত হলো করোনা আক্রান্ত রোগী। সবশেষ একমাত্র করোনামুক্ত ছিল পার্বত্য জেলা রাঙামাটি। বুধবার সেখানেও থাবা বিস্তার করেছে করোনা। ফলে ৬৪ জেলাতেই বিস্তৃত হলো করোনার থাবা।

বুধবার রাঙামাটিতে একজন স্বাস্থ্য কর্মীসহ চারজনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। তবে কীভাবে আক্রান্ত হয়েছেন সে সম্পর্কে নিশ্চিত কোনো তথ্য নেই জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে।

রাঙামাটি সির্ভিল সার্জন ডা. বিপাশ খীসা বলেন, আক্রান্তদের নমুনার রিপোর্ট গত ২৯ এপ্রিল চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজেজেজে (বিআইটিআইডি) পাঠানো হয়েছিল। এর মধ্যে বুধবার দুপুরে এই চারজনের রিপোর্ট পজেটিভ এসেছে। রাঙামাটি জেলায় এখন পর্যন্ত ২৯২ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। আর রেজাল্ট এসেছে ২০২ জনের। এর মধ্যে চারজনের করোনা পজিটিভ এসেছে। এই চারজনের বয়সভিত্তিক হিসেবে ১৯ বছরের একজন পুরুষ, ৩৮ বছরের একজন নার্স (মহিলা) এবং ৫০ বছরের পুরুষ একজন আছেন। তবে এর মধ্যে নয় মাসের একটি ছেলে শিশুও রয়েছে বলে জানান এই সিভিল সার্জন।

আক্রান্তদের মধ্যে থাকা একজন স্বাস্থ্য কর্মীর স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী অর্থাৎ পিপিই থাকার পরেও করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এ বিষয়ে রাঙামাটি করোনার ফোকাল পারসন ডা. মোস্তফা কামাল বলেন, 'রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে একজন নার্স করোনা আক্রান্তদের একজন। তার স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী ছিল। যেহেতু এটি কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতাল না সে ক্ষেত্রে সবসময় হয়তো পিপি পরে থাকেননি বা কোনো না কোনোভাবে হয়তো সংক্রমিত হয়ে থাকতে পারেন। যেহেতু হাসপাতাল এরিয়া সে ব্যাপারে আসলে নিশ্চিত কিছু বলা যাচ্ছে না।' এছাড়াও করোনা আক্রান্ত অন্য তিনজনের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

ডা. মোস্তফা কামাল আরো বলেন, 'নয় মাস বয়সী যে ছেলে শিশুটি আক্রান্ত হয়েছে তার বাবা নোয়াখালী থেকে এসেছে মার্চের ১৫ তারিখ। আর আমরা পরীক্ষা করেছি এপ্রিলের ২৯ তারিখ। তাই সেখান থেকেও কোনো উত্তর পাওয়া যাচ্ছে না। আর বাকি দুজন এখানকারই বাসিন্দা। রাঙামাটি শহরের জেনারেল হাসপাতাল এলাকার মোল্লা পাড়ায় দুজন, দেবাশীষ নগর এলাকায় একজন এবং রিজার্ভ বাজার এলাকার একজন।

এদিকে আক্রান্তদের এলাকা লকডাউন করে দেয়া হয়েছে এবং আক্রান্তদের স্বজনদের ইতিমধ্যে হোমকোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা হয়েছে বলেও সিভিল সার্জন।

ডা. বিপাশ খীসা বলেন, 'আগামীকাল আক্রান্তদের স্বজনদের নমুনা সংগ্রহ করা হবে।'

সর্বপ্রথম গত ৮ মার্চ দেশে করোনাভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হওয়ার কথা জানা যায়। এরপর ১৮ মার্চ কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে প্রথম ব্যক্তির মৃত্যুর কথা জানায় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা বিভাগ এবং২৫ মার্চ প্রথমবারের মতো সীমিত আকারে কম্যুনিটি ট্রান্সমিশন বা সামাজিকভাবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হচ্ছে বলেও জানা যায়। এখন সারাদেশেই ছুঁয়েছে করোনা। প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। ৮ মার্চ শুরু হয়ে ৬ মে আক্রান্ত ছাড়িয়েছে ১০ সহস্রাধিক। মৃত বেড়ে প্রায় দু’শো। সচেতনতাই এখন একমাত্র অবলম্বন বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/০৭মে, ২০২০)