নাজাতের ১০ দিন যে কারণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: নাজাত শব্দের অর্থ মুক্তি। পবিত্র রমজান মাসে টানা ২০দিন সিয়াম সাধনার পর রোজাদার পরম প্রাপ্তির পর্যায়ে পৌঁছে যান। বান্দার জন্য জাহান্নামের আগুন ও শাস্তি থেকে মুক্তির চেয়ে বড় পাওনা আর কিছু নেই। নবী করীম (সা.) বলেন, রমজানের প্রথম ১০দিন রহমতের, পরের ১০দিন মাগফিরাত লাভের ও শেষের ১০দিন হল জাহান্নাম থেকে নাজাত প্রাপ্তির। শুরু হচ্ছে বান্দার পাপ মোচনের সময়। বান্দার কৃত পাপের ক্ষমা করার জন্য মহান রাব্বুল আলামীন রমজান মাসকে প্রতিবছর পাঠিয়ে দেন। আর এতে করে তারা স্রষ্টার নৈকট্য লাভ করে ধন্য হতে পারে। মুসলমানরা মাহে রমজানকে নিজের জীবন নিষ্পাপ পুণ্যময় করার সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করে।
রমজান মাস যখন শুরু হলে মহান রাব্বুল আলামীন এই মাসের প্রথম রাতেই দশ লক্ষ বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। যাদের জন্য জাহান্নাম ওয়াজিব হয়ে রয়েছে, এমন সব গুণাহগারদের মাফ করে দেন তিনি। আর নাজাতের সময়ে পবিত্র লাইলাতুল কদরের রাতে অগণিত বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। পবিত্র মাহে রমজানের ২৯তারিখ রাতে সারা মাসের যত মাফ করা হয়েছে তার দ্বিগুণ, আর ঈদের রাতে আরো দ্বিগুণ সংখ্যক বান্দার গুনাহ মাফ করে দেন। এমন সুসংবাদ জানা যায় হাদীস থেকে। সেইসাথে কবীরা গুনাহের জন্য তওবা করে ক্ষমা প্রার্থনার কথাও বলা হয়েছে। পবিত্র মহান রাব্বুল আলামীন আমাদের জন্য গুনাহ মাফের এক সুবর্ণ সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে।
রমজানের প্রথম দশকে মহান রাব্বুল আলামীন তাঁর বান্দাকে রহমতের বারিধারা বর্ষণ, মাগফিরাত ও ক্ষমার উপযোগী করে তুলে। আর দ্বিতীয় দশকে ক্ষমা করে, শেষ দশকে বান্দার জন্য নাজাতের ফায়সালা করেন। হাদিস শরিফে নাজাতের এই সময়কে ‘ইতক্বুম মিনান নার’ বা জাহান্নাম থেকে মুক্তির দশক বলা হয়েছে। হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণিত একটি হাদীস থেকে জানা যায়, যখন রমজানের শেষ ১০ রাত আসত, তখন নবী করিম (সা.) কোমরে কাপড় বেঁধে নেমে পড়তেন (বেশি বেশি ইবাদতের প্রস্তুতি নিতেন) এবং রাত জেগে থাকতেন। আর পরিবার-পরিজনকেও তিনি জাগিয়ে দিতেন।
মুসলিম শরীফে হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণিত অন্য একটি হাদীসেবলা হয়, ইন্তেকাল পর্যন্ত নবী করীম (সা.) রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করেছেন, এরপর তাঁর স্ত্রীরাও ইতিকাফ করেছেন। এ সময় তিনি আল্লাহর ইবাদতে মসজিদে নির্জন বাস করতেন। দুনিয়াবি সব ধরনের সম্পৃক্ততা থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহর দিকে মনোনিবেশ করতেন, ইবাদতে মশগুল থাকতেন। তাঁর ইতিকাফের জন্য মসজিদে একটি তাঁবু পাতা হতো। ইতিকাফকালীন তিনি রোগী দেখতে বের হতেন না, জানাজায় যেতেন না এবং নারীদের সংস্রব ত্যাগ করতেন। প্রাকৃতিক প্রয়োজনে র মতো জরুরি কিছু ছাড়া তিনি তাঁর ইতিকাফস্থল ত্যাগ করতেন না।
নাজাতের এই সময়ে ইতিকাফের মাহাত্ম্য ব্যাখ্যা করতে গিয়ে একজন আলেম বলেন, মসজিদের ইতিকাফ হচ্ছে হৃদয়ের প্রশান্তি, আত্মার পবিত্রতা ও চিত্তের নিষ্কলুষতা। চিন্তার পরিচ্ছন্নতা ও বিশুদ্ধতা। ফেরেশতাকুলের গুণাবলি অর্জন এবং লাইলাতুল কদরের সৌভাগ্য ও কল্যাণ লাভসহ সব ধরনের ইবাদতের সুযোগ লাভের সর্বোত্তম উপায়। এ জন্য রাসুল (সা.) নিজে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ইতিকাফ পালন করেছেন এবং তাঁর বিবিরাসহ সাহাবায়ে কেরামের অনেকেই এই সুন্নতের ওপর মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত আমল করেছেন।
রমজানের প্রথম দুই দশকের গুরুত্ব ও ফজিলত থাকলেও শেষ দশকের গুরুত্ব ও ফজিলত আরো অনেক গুণ বেশি। কেননা এ দশকেই রয়েছে পবিত্র রজনী লাইলাতুল কদর। শবে কদর হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। অর্থাৎ এক হাজার মাস ইবাদত করলে যে সওয়াব হতে পারে, এই রাতের ইবাদতে তার চেয়েও বেশি সওয়াব পাওয়া যাবে। এ রাতের কারণেই পুরো রমজান তাৎপর্য ও ফজিলতপূর্ণ হয়েছে। পবিত্র গ্রন্থ আল কোরআনও অবতীর্ণ হয়েছে এই কদরের রাতে। এই বিষয়ে পবিত্র কোরআনে বলা হয়, আমি এই কিতাব অবতীর্ণ করেছি এক বরকতময় রজনীতে। অবশ্যই আমি সতর্ককারী। এ রজনীতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয়।
তাই পবিত্র মাহে রমজানের বিগত দিনগুলো যাদের অবহেলায় কেটে গেছে। তাদের এখনো সময় আছে নিজেকে শুধরে নেওয়ার। মুক্তির অবারিত সুযোগ পেয়েও যারা নিজেদের মুক্ত করে নিতে পারল না, তাদের চেয়ে হতভাগা আর কেউ নেই।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/১৪মে, ২০২০)