ইতিকাফের যত ফযিলত ও বিধি বিধান
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: ইতিকাফ শব্দের অর্থ স্থির থাকা বা অবস্থান করা। শরিয়তে জাগতিক কার্যকলাপ ও পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মসজিদ বা ঘরের নির্দিষ্ট স্থানে একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অবস্থান করা করাকে ইতিকাফ বলে। পবিত্র মাহে রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করা সুন্নতে মুয়াক্কাদায়ে কেফায়া। প্রত্যেকটা মহল্লা বা ছোট গ্রামে কোন একজন ইতিকাফ করলেই সবাই দায়মুক্ত হবে। তবে কেউ না করলে সবাই গোনহগার হবে।
মাহে রমজানের ২০তারিখ সূর্যাস্তের পূর্ব থেকে ঈদুল ফিতরের চাঁদ দেখা পর্যন্ত ইতিকাফের সময়। এই সময়ে মহিলারাও ঘরে নীরব কোন নামাজের স্থানে ইতিকাফ আদায় করতে পারবে। তবে বিবাহিতা নারীরা স্বামীর অনুমতি নিয়ে ইতিকাফে বসবে। ইতিকাফের বিষয়ে পবিত্র কোরআনে সূরা বাকারা’র ১২৫ নম্বর আয়াতে বলা হয়, আর আমি ইবরাহিম ও ঈসমাইলকে আদেশ করলাম, তোমরা আমার গৃহকে তাওয়াফ কারী, ইতিকাফকারী ও রুকু-সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র রাখ। বুখারি শরিফের একটি হাদিস থেকে জানা যায়, নবী করীম (সা.) প্রতি রমজানে ১০দিন ইতিকাফ করতেন, তবে যে বছর তিনি ইন্তেকাল করেন, সে বছর তিনি ২০দিন ইতিকাফে কাটান।
তবে দশ দিনের কম সময় করলে তা নফল ইতিকাফ হিসেবে গণ্য হবে। নফল ইতিকাফও অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। মাহে রমজানে ইতিকাফের অন্যতম উদ্দেশ্য হল শবে কদর প্রাপ্তি। রমজানের শেষ দশক ইতিকাফ করলে শবে কদর প্রাপ্তি নিশ্চিত হয়। নফল ইতিকাফ বছরের যেকোনো সময়ই করা যায়। ইতিকাফের জন্য রোজা শর্ত। কিন্তু স্বল্প সময় (এক দিনের কম সময়) ইতিকাফ করলে তার জন্য রোজা রাখা শর্ত নয়।
ইতিকাফের সময় প্রাকৃতিক প্রয়োজন ও প্রয়োজন ছাড়া নির্দিষ্ট ঘর বা কক্ষ থেকে বের হবেন না। অজু বা পাক পবিত্রতার জন্য বের হলে কারও সঙ্গে কথাবার্তা বলবেন না বা সালাম বিনিময় করবেন না। তবে দরকার হলে ওই কক্ষের ভেতর থেকে বাইরের কাউকে ডাকতে পারবেন। কেউ ভেতরে এলে তাঁর সঙ্গে কথাবার্তা বলতে পারবেন। ইতিকাফ অবস্থায় এমন সব কথা বলা ও কাজ করা বৈধ যাতে কোনো গুনাহ নেই। প্রয়োজনীয় সাংসারিক কথাবার্তা বলতেও নিষেধ নেই। তবে অহেতুক কথাবার্তা বলে ইবাদতের পরিবেশ নষ্ট করা যাবে না। তাছাড়া, ইতিকাফ কারী মসজিদের মধ্যে সুগন্ধি ব্যবহার করতে পারবেন। সেইসাথে মাথায়, দাড়িতে ও চুলে তেল লাগাতে পারবেন। মাথার চুলে ও দাড়িতে চিরুনি করতে পারবেন।
ইতিকাফের ফযিলত সম্পর্কে ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিস থেকে জানা যায়, নবী করীম (সা.) বলেন, ইতিকাফকারী যাবতীয় গোনাহ থেকে মুক্ত থাকে এবং তার জন্য ওই পরিমাণ নেকি লেখা হয়, যে পরিমাণ আমলকারীর জন্য লেখা হয়ে থাকে। অন্য আরেকটি হাদীস থেকে জানা যায়, যে ব্যক্তি রমজান মাসে ১০ দিন ইতিকাফ করবে, সে দুই হজ ও দুই ওমরার সওয়াব পাবে। ইতিকাফ একটি মহান ইবাদত। মদিনায় অবস্থান কালে রাসুল (সা.) প্রতি বছরই ইতিকাফ পালন করেছেন। এমনকি দাওয়াত, তরবিয়াত ও যুদ্ধ-সংগ্রামে ব্যস্ত থাকা সত্ত্বেও রমজানে তিনি ইতিকাফ ছাড়েননি।
ইতিকাফকারীর জন্য মসজিদে অবস্থান করাটাই ইবাদত। তাসত্ত্বেও এ সময় বেশি করে নফল ইবাদত করা উচিত। বিশেষ করে কোরআন তেলাওয়াত, নফল নামায, দোয়াদরুদ পাঠ, জিকির ইত্যাদি আমল করা উচিত। এছাড়া কোরআনের অনুবাদ-তাফসীর, হাদিস ও ফেকাহর কিতাবাদি চর্চা করা যেতে পারে। শবে কদর প্রাপ্তিই যেহেতু ইতিকাফের অন্যতম উদ্দেশ্য। তাই সার্বক্ষণিক ইবাদত করার মাধ্যমে একে অর্জন করে নিতে হবে।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/১৫মে, ২০২০)