সরকারি ব্যাংকগুলো পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে আগ্রহী
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: দুই মাসেরও বেশি সময় পর রোববার (৩১ মে) পুঁজিবাজারে লেনদেন চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ। ব্যাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী পুঁজিবাজারকে সাপোর্ট দিতে বিনিয়োগে আগ্রহী সরকারি ব্যাংকগুলো।
করোনা পরিস্থিতিতে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের চেয়ে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে বেসরকারি ব্যাংকগুলো। এ মুহূর্তে দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল রাখতে প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তবে পরিস্থিতি বিবেচনা করে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে জানিয়েছে বেশ কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের অপেক্ষায় রয়েছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। তাদের প্রত্যাশা, ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগে ফিরলে পুঁজিবাজার স্থিতিশীল হবে এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরবে।
এদিকে, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সোমবার (১ জুন) বিকেল ৩টায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের সঙ্গে বৈঠক করবেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। দুই পক্ষের ওই বৈঠকে পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগের বিষয়টি গুরুত্ব পাবে বলে বিএসইসি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
জানা গেছে, বিভিন্ন কারণে ধরাবাহিকভাবে দীর্ঘদিন পুঁজিবাজারে মন্দা পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি সরকারের সর্বোচ্চ মহলের নির্দেশে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য সম্মিলিতভাবে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠনের জন্য দেশের ৫৯টি তফসিলি ব্যাংককে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ফলে প্রতিটি তফসিলি ব্যাংক পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য সর্বোচ্চ ২০০ কোটি টাকার একটি বিশেষ তহবিল গঠনের সুযোগ পেয়েছে ব্যাংকগুলো।
তথ্য মতে, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা জারির পর সর্বশেষ গত ২৪ মার্চ পর্যন্ত ১৬টি ব্যাংক পুঁজিবাজারে ১৭ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। ব্যাংকগুলো হলো- সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, বিডিবিএল, পূবালী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক ও সাউথ ইস্ট ব্যাংক।
এ বিষয়ে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও আতাউর রহমান প্রধান বলেন, ‘পুঁজিবাজার খোলার পর পরিবেশ-পরিস্থিতি বিবেচনা করে অবশ্যই বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। পুঁজিবাজারে আমাদের আগে থেকেই বিনিয়োগ রয়েছে। আর বর্তমানে প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সোনালী ব্যাংকের চাপ অনেক বেশি। তারপরেও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে।’
অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোহাম্মদ সামস-উল ইসলাম বলেন, ‘অবশ্যই আমরা বিনিয়োগ করব। সরকারি ব্যাংক হিসেবে এটা আমাদের দায়িত্ব। এর আগেও আমরা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেছি। আমরা লাভ-লোকসান বুঝি না। আমরা চাই অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে। ক্ষেত্রে আমরা বিনিয়োগ করলে পুঁজিবাজারসহ সার্বিক অর্থনীতি ভালো থাকবে।’
রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, ‘পুঁজিবাজারে রূপালী ব্যাংক প্রচুর বিনিয়োগ রয়েছে। দীর্ঘদিন বিভিন্ন কারণে পুঁজিবাজার পতনমুখী ছিল। সে সময়ে আমরা প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও প্রচুর বিনিয়োগ করেছি। করোনার কারণে পুঁজিবাজার বেশ কিছুদিন বন্ধ থেকে পুনরায় চালু হচ্ছে। এ মুহূর্তে আমরা সপ্তাহখানেক পর্যবেক্ষণ করব তারপর বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেব।’
ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সভাপতি এবং ইস্টার্ন ব্যাংকের (ইবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও আলী রেজা ইফতেখার বলেন, ‘আগে পুঁজিবাজার চালুর হোক। কী অবস্থা হয় দেখব। তারপর ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব। করোনার প্রভাব মোকাবিলায় আমরা আগে প্রণোদনা প্যাকেজের টাকা ঠিকমতো বিতরণ করি তারপরেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।’
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের (এমটিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘এ মুহূর্তে আমরা প্রণোদনা প্যাকেজগুলো বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। প্রণোদনার ইস্যুগুলো সমাধান হোক তারপর পুঁজিবাজারের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে। বাণিজ্যিকগুলো এখন তার বেসিক দায়িত্ব পালন করছে।’
বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা আনয়নের লক্ষ্যে সরকারের নির্দেশে ব্যাংকগুলোকে বিনিয়োগের সুযোগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। করোনা পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগে ফিরলে পুঁজিবাজার স্থিতিশীল হবে এবং তারল্য সংকট কমবে।’
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/৩১মে, ২০২০)