দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: করোনা মহামারির মধ্যেই একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যগের মুখে পড়েছে ভারত। দিন কয়েক আগে সেখানে আঘাত হেনেছিল ঘূর্ণিঝড় আম্পান। সেই ঝড়ের ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতি সামাল দিতে না দিতেই এবার সেখানে চোখ রাঙাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় নিসর্গ৷ এই ঘূর্ণিঝড়ের অভিমুখ ভারতে পশ্চিমভাগে করোনায় বিপর্যস্ত মহারাষ্ট্রের দিকে। বিশেষ করে এর রাজধানী মুম্বাই। শতাধিক বছরে এমন ঘূর্ণিঝড়ের কবলে আগে কখনও পড়তে হয়নি ভারতের বাণিজ্যনগরীকে।

ভারতের আবহাওয়া অধিদফতর জানাচ্ছে, দক্ষিণে রায়গড় জেলায় বুধবার বিকেলের মধ্যে আছড়ে পড়বে ঘূর্ণিঝড়। ইতিমধ্যে এটি সুপার সাইক্লোনে রূপ নিয়েছে।

আবহাওয়া দফতরের বরাত দিয়ে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানাচ্ছে, বুধবার ঘূর্ণিঝড় নিসর্গ মহারাষ্ট্র উপকূলে আছড়ে পড়বে৷ এ সময় বাতাসের গতিবেগ থাকবে ঘণ্টায় ১১৫ কিলোমিটার। ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ ১২৫ কিমি পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে৷ সেইসঙ্গে ভারী বৃষ্টিপাতও হবে। ঢেউয়ের উচ্চতা হতে পারে ৬ ফুট।

শুধু সাইক্লোনই নয়, এটি আগামী ১২ ঘণ্টার মধ্যে ‘প্রবল সুপার সাইক্লোনে’ পরিণত হতে পারে বলে সতর্কবার্তা দিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর।

এমন পূর্বাভাস মাথায় রেখেই সব ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করেছে মহারাষ্ট্র সরকার৷

মুম্বাই, থানে ছাড়াও মহারাষ্ট্রের রায়গড়, পলগড়ের মতো উপকূলীয় জেলাগুলিতে ব্যাপক তাণ্ডব চালাতে পারে নিসর্গ। এ ছাড়া, গুজরাট রাজ্যের বলসাড, নবসারি, সুরাত, ভাবনগর এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল দাদরা ও নগর হাভেলি ও দমন-দিউতেও নিসর্গের ভয়াবহ প্রভাব পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে জানান, জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী, এনডিআরএফের ১০টি টিমকে মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন অংশে উদ্ধারকাজ চালানোর জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এই ১০টি এনডিআরএফ টিম ছাড়াও রিজার্ভে থাকছে আরও ৬টি এনডিআরএফ টিম। ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী পরিস্থিতি বুঝে তাদের কাজে লাগানো হবে।

মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে টুইট করে মুম্বাই শহর ও শহরতলি ছাড়াও থানে, পলঘর, রায়গড়, রত্নাগিরি ও সিন্ধুদুর্গ জেলাগুলিতে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই ৩৫টি গ্রামের ১০,০০০ মানুষকে সরানোর কাজ শুরু হয়েছে। নবসারি জেলায় ১২টি গ্রামের ১০,২০০ লোককে সরানো শুরু হয়েছে।

ভারতের সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, গুজরাটের ভালসাড় এবং নবসারি জেলার ৪৭টি গ্রামের ২০,০০০ মানুষকে সরানো হয়েছে।

কাঁচা বাড়ি থেকে লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে যেতে নির্দেশ দিয়েছেন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী। মুম্বাই শহরের বস্তিগুলি (বিশেষত নিচু অঞ্চলের) খালি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মেডিকেলে এমার্জেন্সি পরিস্থিতির জন্য করোনা ছাড়া অন্য হাসপাতালগুলিকে তৈরি থাকতে বলা হয়েছে।

বুধবার সন্ধ্যায় বাণিজ্যনগরী মুম্বাইর উপকূলে ঘূর্ণিঝড় নিসর্গ আছড়ে পড়লে, তা বিরল ঘটনা হিসেবে ঠাঁই পাবে ইতিহাসের পাতায়। কেননা, বিগত প্রায় ১৪০ বছরের ইতিহাসে মুম্বইয়ে কোনও ঘূর্ণিঝড় হয়নি।

আরব সাগরের উপকূলে গড়ে ওঠা মুম্বই শেষ ঘূর্ণিঝড় দেখেছিল ১৮৮২ সালে। এখনকার মতো সেই সময় ঘূর্ণিঝড়ের আলাদা করে নামকরণ করা হত না। মূলত যেখানে উপকূলে আছড়ে পড়ত, সেই জায়গার নামানুসারেই নাম হত। তাই সেই ঘূর্ণিঝড়ের নাম ছিল ‘বম্বে সাইক্লোন’। বম্বে সাইক্লোনে প্রাণ হারিয়েছিল প্রায় এক লাখ মানুষ। ভারতীয় আবহাওয়া দফতরের রেকর্ড বুকে তার আগে মুম্বাইয়ে আর কোনও সাইক্লোনের নজির নেই।

এছাড়া ২০০৫, ২০১৭ ও ২০১৯ সালে মুম্বাই ভয়াবহ বন্যার সম্মুখীন হলেও কোনওটির কারণ সাইক্লোন ছিল না। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আদম সোবেল জানান, ১৮৯১ সালের পর গুরুতর কোনও ঘূর্ণিঝড়ের অভিজ্ঞতা নেই মুম্বইয়ের।

মুম্বাইয়ে হঠাৎ করে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার সম্ভবনায় একাধিক ভৌগোলিক কারণকে দায়ী করছেন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/০৩জুন, ২০২০)