আরিফ সোহেল : শচিন টেন্ডুলকার কতটা বড়মাপের মানুষ তা ভাবতেও অবাক লাগে। ইডেনে তাকে নিয়ে যখন রাজ্যের উন্মাদনা। তখন এক প্রশ্নের উত্তরে শচিন বলেছেন, ‘আমি একজন ক্রিকেট পূজারী সাধারণ মানুষ।’ ক্রিকেট রেকর্ড বুক; সব ক্রিকেটের গল্প- যখন তাকে নিয়ে আরবতিত-বির্বতিত; তখন তার ওমন সাদা-মাটা উত্তর শচিনের মহানুভবতাকেই উদ্ভাসিত করে তোলে। তার জীবনের কোনো ক্রিকেটীয় অপরাধ নেই। অহমবোধকে তিনি প্রাণভরে ঘৃণা করেন। তাই মুম্বাই টেস্ট শুরুর আগে বিহগলে- কিশোর কুমারের হৃদয় ছোঁয়া গান- ‘তুমি নেই; ভাবতেই ব্যথায় ব্যথায় মন ভরে যায়’; খুব মনে পড়ছে। বারবার মন খুঁচিয়ে বেড়াচ্ছে একটি অনুভব; শচিন ইতিহাসের শেষদৃশ্য শুরু হচ্ছে ৪দিন পরেই।

১৪ নভেম্বর শুরু হওয়া মুম্বাই টেস্টে ক্যারিয়ারের ২০০তম ম্যাচ খেলে ক্রিকেটকে বিদায় জানাবেন এই ক্রিকেট ঈশ্বর। টানা ২যুগ ঐশ্বরিক ক্ষমতা নিয়ে মাঠে ছিলেন ক্রিকেটের উৎসর্গীকৃতপ্রাণ শচিন টেন্ডুলকার। ওঠে গেছেন সাধারণের স্পর্শ সীমানার উর্ধ্বে; ঠিক যেনো চাঁদের মতো। যা দেখা যায়; কিন্তু ছোঁয়া যায় না। যে রেকর্ডচূড়ায় তিনি সিংহাসন সাজিয়েছেন; তা শুধু অনুভব করা যায়। সেই ক্রিকেট ঈশ্বর শচিনকে আর দেখা যাবে না। শচিনের জন্য আলাদা করে সাজানো হবে না স্টেডিয়াম মঞ্চ। তা ভাবলে শুধু, কি যেনো নেই-এই মনে হচ্ছে।

মাত্র ১৬ বছর বয়সে শচিন ব্যাট হাতে নেমেছিলেন; ১৯৮৯ সালে। তার জীবদ্দশায় তিনি যে ক্রিকেট পাণ্ডুলিপি রচনা করেছেন তা রীতিমতো ঈর্ষণীয়। ১৯৯ টেস্টে তার রান ১৫৮৪৭; সেঞ্চুরি ৫১টি। ৪৬৩ ওয়ানডে ম্যাচে ১৮১১১। সেঞ্চুরি ৪৯, ডাবল একটি।

ঠিক সিরিজ শুরুর আগে ভারতের সফলতম অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি বলেছেন, ‘জানি তিনি বিদায় নিচ্ছেন, তবে এটা নিশ্চিত করে বলতে চাই, শচিন ভারতের জন্য যুগ যুগ অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবেন। ভারত যে পথে হাঁটছে; তিনি তার পথিকৃৎ।’

শচিনের খুব প্রিয় একজন যুবরাজ সিং। শচিনকে হারানোর কষ্টে কাতর ওই ক্রিকেটার বলেছেন, ‘তিনি এক মহান ক্রিকেটার। বিদায় বেলায় শচিন শুধু ভারত নয় সারা বিশ্বকে কাঁদাবেন। কারণ তার মধ্যে কোনো অহংকার ছিল না। তিনি যে কাউকেই সহজভাবে কাছে টেনে নিতে পারেন।’

এই সময়ের ভারতের অন্যতম বোলার কাম ব্যাটার বরিচন্দ্র অশ্বিন বলেছেন, ‘মুম্বাই টেস্টে কি হবে; তা কোনো মূখ্য ঘটনা নয়! আপনি বারবার ভেবে অবাক হবেন ওই ম্যাচে একজন ব্যাটসম্যান ২০০তম ম্যাচ খেলবেন। শচিনের মতো একজন বড়মাপের বিশ্বসেরা ক্রিকটারের জন্য এরচেয়ে স্মরণীয় আর কিইবা হতে পারে। ওই ম্যাচকে ঘিরে আমার মধ্যে কি আলোড়ন হচ্ছে তা প্রকাশের ভাষা নেই।’ তিনি আরো বলেছেন, ‘সত্যি বলতে দ্বিধা নেই সেই দিন কি ঘটতে যাচ্ছে, তা আমি ভাবতেও পারছি না।’

পাকিস্তানি সাকলাইন মুশতাক শচিনের বিদায়কে ভিন্নভাবে দেখছেন না। দেখার সুযোগও নেই। যার ক্যারিয়ারের পুরোটাই ক্রিকেট তাকে আরাধনা ছাড়া কিইবা করার থাকে! তিনি বলেছেন, ‘আমি মনে করি আমরা কখনও ক্রিকেটব্রহ্মাণ্ডে তার মত একটি চ্যাম্পিয়ন ব্যাটসম্যান দেখতে পারব না।’

শচিনের বির্তকিত আউটে ইডেনে শোক এবং ক্রোধ একসঙ্গে মিশেল অনুভূতির অবতারণা করেছিল। লেখার জন্য শব্দ পাওয়া কঠিন ছিল লেখিয়েদের৷ উন্মাতাল দর্শকারণ্য মাঠ; সেখানেও ছিলনা কোনও শব্দ। বড় বিজয়ের পরও শোকস্তব্ধ ছিল ইডেন; ওখানে এক বিষাদ সারাক্ষণ লেগেছিল অমোঘ ভাবেই৷ ফলে এখন সবাই পাখিরচোখ খুঁজে বেড়াচ্ছে মুম্বাইয়ে।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ এই সিরিজ থেকে কি পাবে তা বড় কথা নয়; তবে তারাও ক্রিকেটে বড় ইতিহাস হয়েই থাকবে। থাকবে শচিনের জন্য। কারণ ক্রিকেটে যতবার শচিনের নাম উৎচ্চারিত হবে; সেখানে ওঠে আসবে ক্যারিবিয়ানদের নাম। মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে শচিনের অপেক্ষায় হাজার হাজার ক্রিকেটপূজারী। তাকে বিদায় জানাতে নতুন করে বর্ণিল মঞ্চ সাজানো হচ্ছে। যেখানে শচিনের ক্রিকেট ক্যারিয়ারের মহাপ্রয়াণ ঘটবে।

(দিরিপোর্ট২৪/এএস/সিজি/নভেম্বর১০,২০১৩)