শেখ হাসিনার মুক্তির দিন
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: ২০০৭ সালে বাংলাদেশের শাসনভার চলে যায় তৎকালীন সেনা সমর্থিত ফখরুদ্দিন আহমেদ নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দখলে। অবৈধ এই সরকার দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করার সাজানো পরিকল্পনায় বেশ কয়েকটি দুর্নীতি মামলায় আসামী করে বাংলাদেশ সরকারের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ- সভাপতি শেখ হাসিনাকেও কারাগ্রে পাঠায়। এই মামলার শিকার তখন প্রভাবশালী রাজনৈতিকদের মধ্যে অনেকেই হয়েছে কিন্তু শেখ হাসিনার নামে করা মামলাগুলো ছিলো একেবারেই মিথ্যে যা তিনি জেলে যাবার পূর্বে লিখে রেখে যাওয়া তার চিঠিতে উল্লেখ করেছেন। তাকে নিয়ে যে সব সময়েই ষড়যন্ত্র হতো তা তিনি টের পেতেন এবং সাহস না হারিয়ে বরং আরো নির্ভিকচিত্তে শত্রুকে মোকাবেলা করে নিজস্ব অস্তিত্বকে টিকিয়ে রেখেছেন। তাই গ্রেপ্তার হওয়ার আগে তিনি চিঠিতে দেশবাসীর কাছে বলেছেন-
`প্রিয় দেশবাসী,
আমার সালাম নেবেন। আমাকে সরকার গ্রেফতার করে নিয়ে যাচ্ছে। কোথায় জানি না। আমি আপনাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ও অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যেই সারাজীবন সংগ্রাম করেছি। জীবনে কোনও অন্যায় করিনি। তারপরও মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ও আপনারা দেশবাসীর ওপর আমার ভরসা।
আমার প্রিয় দেশবাসী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের কাছে আবেদন কখনও মনোবল হারাবেন না। অন্যায়ের প্রতিবাদ করবেন। যে যেভাবে আছেন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবেন। মাথা নত করবেন না। সত্যের জয় হবেই। আমি আছি আপনাদের সঙ্গে, আমৃত্যু থাকব।আমার ভাগ্যে যা-ই ঘটুক না কেন আপনারা বাংলার জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যান। জয় জনগণের হবেই।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়বই। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবই।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু
শেখ হাসিনা`
অর্থাৎ কোনো দোষ না করেও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রোষানলে পড়েন তিনি এবং এরই প্রেক্ষিতে ২০০৭সালের ১৬ জুন তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এদিন ভোরে রাজধানীর ধানমণ্ডির ৫ নম্বর সড়কের ৫৪ নম্বরে প্রধানমন্ত্রীর নিজ বাসভবন- ‘সুধা সদন’ থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এরপএ সংসদ ভবন চত্বরে স্থাপিত বিশেষ কারাগারে তাকে রাখা হয়।
কিন্তু সত্যকে চেপে রাখা সম্ভব নয় কখনোই। গ্রেনেড হামলাসহ বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের শিকার একজন মানুষ যিনি চোখের সামনে নিজের দলের কর্মী ও নেতৃবৃন্দের আকস্মিক ও ভয়ংকর মৃত্যু দেখেছেন, নিজেও আহত হয়েছেন। এই মানসিক ও শারীরিক আঘাত থেকে বের হতে না হতেই মিথ্যে মামলা সাজিয়ে পুণরায় জেলহাজতে রেখে শাস্তি দেয়া জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিবেকের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছিল সেসময়! আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের তীব্র আন্দোলন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ২০০৮ সালের ১১ জুন শেখ হাসিনাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জামিনে ৮ সপ্তাহের জন্য মুক্তি দেওয়া হয়। পরে তিনি চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যান। চিকিৎসা শেষে ২০০৮ সালের ৬ নভেম্বর তিনি দেশে ফেরেন। এরই মধ্যে কয়েকদফা তার জামিনের মেয়াদ বাড়ানো হয়। তারপর দেশে ফিরলে জনগণের চাহিদায় তাকে স্থায়ী জামিন দেয় তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার। সে বছরই ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল সমর্থনে জনগণ তাকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত করেন। এরপর থেকে আজ পর্যন্ত অক্লান্তভাবে তিনি দেশের মানুষের মঙ্গলের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।
১১ মাস কারাবরণ শেষে শেখ হাসিনা যেদিন মুক্তি পেয়েছিলেন সেই হলো আজ অর্থাৎ ১১ জুন। ২০০৮ সালের এই দিনে কারাগার থেকে মুক্ত হয়েছিলেন। এই দিবসটিকে আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ এখনো একটি গুরুত্বপূর্ণ দিবস হিসেবে পালন করেন। তবে এ বছর বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে সৃষ্ট সংকটে শেখ হাসিনার নির্দেশে সব ধরনের জনসমাগমপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচি পরিহার করায় দিবসটি উপলক্ষে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করছে না বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে যার যার জায়গা থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ূ কামনা করে পরম করুণাময়ের কাছে দেশবাসীকে প্রার্থনা করার আহ্বান জানিয়েছে দলটি। একই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে সংকট জয়ের ঐক্যবদ্ধ সুরক্ষাব্যুহ সৃষ্টি করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরিচালিত সরকারকে সহযোগিতা করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/১১জুন, ২০২০)