‘বিএনপির পক্ষে এই বাজেটের ব্যাপকতা ও সম্ভাবনা অনুধাবন করা সম্ভব নয়’
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত ২০২০-‘২১ অর্থবছরের বাজেটকে ‘করোনার কবল থেকে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের এক ভারসাম্যপূর্ণ বাজেট’ হিসেবে অভিহিত করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। দলের পক্ষে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে এই কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেট বিদ্যমান সংকটকে সম্ভাবনায় রূপ দেওয়ার বাস্তবসম্মত দলিল।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপির পক্ষে এই বাজেটের ব্যাপকতা ও সম্ভাবনা অনুধাবন করা সম্ভব নয়।’
২০২০-‘২১ সালের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর দলের পক্ষ থেকে শুক্রবার (১২ জুন) প্রতিক্রিয়া জানান ওবায়দুল কাদের। নিজ বাসভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে উপস্থিত নেতাদের সঙ্গে যোগ দেন তিনি। দলীয় কার্যালয়ে শারীরিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি এমপি, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, প্রচার সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ এমপি, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া এবং উপ-দফতর সম্পাদক সায়েম খান প্রমুখ।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বাজেট ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে কোনও ধরনের বিচার-বিশ্লেষণ না করে বিএনপি আগেভাগে প্রস্তুত করা ও মনগড়া পুরনো ও গতানুগতিক গল্পের মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। বিএনপির নেতারা গত ১১টি বাজেট ঘোষণার পর বাজেট নিয়ে নানা ধরনের মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করেছেন এবং বরাবরই বলেছেন, বাজেট বাস্তবায়ন হবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়বে- বিএনপি নেতাদের এ ধরনের বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করতে দেখা গেছে। এবারও তারা সংকট জয়ের সুপরিকল্পিত উদ্যোগ এই বাজেটের বিরুদ্ধে চিরায়ত ভঙ্গিতে মিথ্যাচার করছে। বিএনপি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় মাত্র ৫০ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রণয়ন করেছিল। আর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজকের বাংলাদেশে শুধু স্বাস্থ্য খাতে ৪১ হাজার ২৭ কোটি টাকা এবং সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ৯৫ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়েছে।’
উল্লেখ্য, আজ শুক্রবার বাজেট নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানানোর কথা বিএনপির। তবে বৃহস্পতিবার বাজেট ঘোষণার পরপরই বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘এবারের বাজেটে জীবন-জীবিকা ও মানবতার বিষয়টি একেবারেই উপেক্ষিত হয়েছে। জিডিপি ও রাজস্ব আহরণে যে প্রবৃদ্ধির লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, তা দৃশ্যমানভাবেই প্রতারণার শামিল।’
এদিকে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, “এবারের বাজেট ভিন্ন বাস্তবতায়, ভিন্ন প্রেক্ষাপটে প্রণীত। এ বাজেট করোনার বিদ্যমান সংকটকে সম্ভাবনায় রূপ দেওয়ার বাস্তবসম্মত প্রত্যাশার দলিল। করোনা ভাইরাসে সৃষ্ট সংকটময় পরিস্থিতিকে সম্পূর্ণভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করে; সংকটকালীন ও সংকট পরবর্তী সম্ভাব্য অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার গতিপথ নির্ণয়ের লক্ষ্যকে সামনে রেখেই প্রণীত হয়েছে এবারের বাজেট। যা জীবন-জীবিকার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে দেশকে এগিয়ে নিতে শেখ হাসিনা সরকারের সময়োচিত সাহসী চিন্তার ফসল। গতানুগতিক ধারার সঙ্গে ‘আউট অব বক্স’ চিন্তার সমন্বয় করে সংকট জয়ের নবউদ্যোম সৃষ্টিতে এই বাজেট পেশ করা হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, করোনাভাইরাসের প্রকোপে বিদ্যমান সংকটময় পরিস্থিতিতে ‘অর্থনৈতিক উত্তরণ ও ভবিষ্যৎ পথপরিক্রমায় এটি যুগোপযোগী ও জনকল্যাণমুখী বাজেট। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক দাবি করেন, সবদিক বিবেচনায় নিয়ে করোনার কবল থেকে ‘অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের’ এক ভারসাম্যপূর্ণ বাজেট হচ্ছে এবারের বাজেট। এটি একটি জনবান্ধব ও জীবনঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক পরিকল্পনা। যার মাধ্যমে দেশের উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য উৎসাহ পাবে। এতে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সরকার বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। বাজেটে বিনিয়োগ বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। কর্মসংস্থানের ধারাবাহিকতার সামঞ্জস্য রাখা এবং ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক গতিশীলতা ধরে রাখতে মেগাপ্রকল্পসমূহ চলমান রাখা হয়েছে। অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহেও ২০.২৫ মার্কিন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (১১ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটের শিরোনাম করা হয়েছে 'অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও ভবিষ্যৎ পথপরিক্রমা’। করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রস্তাবিত বাজেটকে একটা আপৎকালীন বাজেট বলে অভিহিত করেছেন অর্থমন্ত্রী।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/১২জুন, ২০২০)