সূর্যগ্রহণের সময় যেভাবে নামাজ পড়বেন
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: সূর্যগ্রহণ দেখার বা উদযাপন করার কোনো বিষয় নয়। সূর্যগ্রহণের সুন্নাত আমল হচ্ছে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা, দোয়া করা, নামাজ পড়া এবং সাদকা করা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এসব আমলগুলোর মাধ্যমে সূর্যগ্রহণ অতিবাহিত করেছেন।
সূর্যগ্রহণ নিয়ে অনর্থক মাতামাতি, তা দেখতে যাওয়া কিংবা গল্প-গুজবে সময় ব্যয় না করে নামাজ ও প্রার্থনায় নিয়োজিত থাকা জরুরি। আল্লাহ তাআলা বান্দাকে সতর্ক করার জন্য আকাশ-মহাকাশে বিভিন্ন নির্দশন দিয়েছেন। সুরা বনি ইসরাঈলে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-
وَمَا نُرْسِلُ بِالاٌّيَاتِ إِلاَّ تَخْوِيفًا
অর্থাৎ আর আমি ভীতি প্রদর্শনের উদ্দেশ্যেই নিদর্শনাবলি প্রেরণ করি।' (সুরা বনি ইসরাঈল : আয়াত ৫৯)
তাই সূর্যগ্রহণের সময় অনর্থক গল্প-গুজব, হাসি-তামাশা ছেড়ে অন্তরে ভয় জাগ্রত রাখাই মুমিন মুসলমানের একান্ত কর্তব্য। হাদিসেও তা প্রমাণিত। সে কারণেই আল্লাহর প্রকৃত বান্দারা সূর্যগ্রহণের সময় তার ভয়ে ভীত থাকেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সূর্যগ্রহণের সময় নামাজ পড়তেন।
সূর্যগ্রহণের সময়ের নামাজ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সূর্যগ্রহণের সময় নামাজ পড়তেন। এ নামাজকে 'সালাতুল কুসুফ' বলা হয়। তাই সূর্যগ্রহণের সময় নামাজ পড়া সুন্নাত। তা জামাআতের সঙ্গে আদায় করাও সুন্নাত।
আরবিতে সূর্যগ্রহণকে ‘কুসুফ’ বলা হয়। আর সূর্যগ্রহণের নামাজকে ‘সালাতুল কুসুফ’ বলা হয়। দশম হিজরিতে যখন মদিনায় সূর্যগ্রহণ হয়, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা দিয়ে লোকদেরকে নামাজের জন্য সমবেত করেছিলেন। সম্ভবত সে সময় তিনি জীবনের সর্বাধিক দীর্ঘ নামাজের জামাআতের ইমামতি করেছিলেন।
সূর্যগ্রহণের সে নামাজের কিয়াম, রুকু, সেজদাহ মোটকথা, প্রত্যেকটি রুকন সাধারণ সময়ের (অভ্যাসের) চেয়ে অনেক দীর্ঘ (লম্বা) ছিলো। হাদিসে এসেছে-
হজরত আবু বাকরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘একবার আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে থাকাকালে সূর্য গ্রহণ শুরু হলো। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উঠে দাঁড়ালেন এবং পরিহিত চাদর টানতে টানতে মসজিদে প্রবেশ করলেন। তাঁর সঙ্গে আমরাও প্রবেশ করলাম। তিনি আমাদের নিয়ে দুই রাকাআত নামাজ আদায় করলেন এবং সূর্য গ্রহণ ছেড়ে গেলো। তিনি বললেন এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, কারো মৃত্যুর কারণে কখনও সূর্য বা চন্দ্রগ্রহণ হয় না। তোমরা যখন (সূর্য/চন্দ্র) গ্রহণ দেখবে তখন অবস্থাটি থাকা পর্যন্ত নাাজ আদায় করবে এবং দোয়ায় মগ্ন থাকবে।’ (বুখারি)
এ হাদিসের আলোকে বুঝা যায় যে, সালাতুল কুসুফ বা সূর্যগ্রহণের নামাজ দুই রাকাআত। আর তা সূর্যগ্রহণ শুরু থেকে নিয়ে শেষ সময়ে পড়তে হয়। দীর্ঘ তেলাওয়াত, রুকু ও সেজদার মাধ্যমে সালাতুল কুসুফ পড়তে হয়। কেননা বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কুসুফের নামাজ ছিল দীর্ঘ।
সূর্যগ্রহণের নামাজ পড়ার নিয়ম
সূর্যগ্রহণের নামাজ ২ রাকাআত। অন্য সাধারণ নামাজের মতই এই নামাজ আদায় করতে হয়। যদিও প্রতি রাকাআত অনেক দীর্ঘ করে পড়তে হয়। তবে প্রত্যেক রাকাআতে ২ রুকু, ৩ রুকু বা ৪ রুকু আদায়ের এক ব্যতিক্রমী নিয়মে নামাজ পাড়ার বিবরণও বর্ণিত হয়েছে। হাদিসে এসেছে-
হজরত আয়েশাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সময় একবার সূর্য গ্রহণ হয়েছিল। তিনি এক ব্যক্তিকে এ ঘোষণা দেয়ার উদ্দেশে পাঠিয়ে দিলেন- 'জামাআতে নামাজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। (ঘোষণা শুনে) সবাই একত্রিত হলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সামনে অগ্রসর হয়ে তাকবির উচ্চারণ করলেন এবং দুই রাকআত নামাজ আদায় করলেন। দুই রাকআতে চারটি রুকু’ ও চারটি সাজদাহ করলেন।' (মুসলিম)
সূর্যগ্রহণের নামাজে আজান ও ইকামত নেই। মাকরূহ ওয়াক্ত ব্যতিত মসজিদে এই নামাজ জামাআতের সঙ্গে আদায় করা সুন্নাত। দিনের বেলায় সূর্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। আর দিনের নামাজ হওয়ার কারণে কেরাত আস্তে পড়াই নিয়ম। হাদিসে এসেছে-
হজরত জাবির ইবনে সামুরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের নিয়ে ২ রাকাআত সূর্যগ্রহণের নামাজ পড়লেন কিন্তু উভয় রাকাআতে আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে (কেরাতের) কোনো আওয়াজ শুনিনি।’ (আবু দাউদ, নাসাঈ, তিরমিজি, ইবনে মাজাহ)
সূর্য গ্রহণ শেষ হওয়া পর্যন্ত এ নামাজ পড়া সুন্নাত। তবে সূর্যগ্রহণ শেষ হওয়ার আগে নামাজ শেষ করলেও কোনো সমস্যা নেই। তবে সূর্যগ্রহণ চলাকালীন বাকি সময়টুকতে জিকির, দোয়া, তাওবা-ইসতেগফা, দান-সাদকার মাধ্যমে কাটানো উত্তম।
সূর্যগ্রহণের সময় নারীদের করণীয়
নারীরাও সূর্যগ্রহণের সময় ঘরে একাকি নামাজ আদায় করবেন। নামাজ শেষে জিকির, দোয়া, তাওবা-ইসতেগফার, দান-সাদকার মাধ্যমে কাটানো উত্তম।
উল্লেখ্য যে, রোববার (২১ জুন) আফ্রিকা ও এশিয়ার ওপর দিয়ে অতিক্রম করবে। বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরও জানিয়েছে, আংশিক সূর্যগ্রহণ (‘রিং অব ফায়ার’) দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে দেখা যাবে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের থেকে জানানো হয়েছে, ২১ জুন বলয়গ্রাস সূর্যগ্রহণ ঘটবে। সকাল ৯টা ৪৬ মিনিট ৬ সেকেন্ডে কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের ইম্পফোন্ডো শহরে সুর্যগ্রহণ শুরু হবে। কেন্দ্রীয় গ্রহণ শুরু হবে ১০টা ৪৮ মিনিট ৩০ সেকেন্ডে। কঙ্গোর বোমা শহরে। সর্বোচ্চ গ্রহণ ঘটবে ভারতের যোশীমঠ শহরে ১২টা ৪০ মিনিট ৬ সেকেন্ডে। সর্বোচ্চ গ্রহণের সময় এর সর্বোচ্চ মাত্রা .৯৯৩৬ থাকবে। কেন্দ্রীয় গ্রহণ শেষ হবে দুপুর ২টা ৩১ মিনিট ৪২ সেকেন্ডে ফিলিপাইনের সামার শহরে। সূর্যগ্রহণ শেষ হবে বিকেল ৩টা ৩৪ মিনিটে ফিলিপাইনের মিন্দানাও শহরে। ‘রিং অব ফায়ারের’ বিষয়ে নাসার ওয়েবসাইটেও এ ধরনের তথ্য দেওয়া হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, রোববার (২১ জুন) বাংলাদেশ থেকেও আংশিক সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে।
ঢাকায় ১১টা ২৩ মিনিট ৩ সেকেন্ডে সূর্যগ্রহণ শুরু হবে, কেন্দ্রীয় গ্রহণ ঘটবে দুপুর ১টা ১২ মিনিট ২৯ সেকেন্ডে এবং গ্রহণ শেষ হবে দুপুর ২টা ৫২ মিনিট ৩ সেকেন্ডে। ময়মনসিংহে ১১টা ২৩ মিনিট ২ সেকেন্ডে সূর্যগ্রহণ শুরু হবে, কেন্দ্রীয় গ্রহণ ঘটবে দুপুর ১টা ১২ মিনিট ১৩ সেকেন্ডে এবং গ্রহণ শেষ হবে দুপুর ২টা ৫১ মিনিট ২ সেকেন্ডে। চট্টগ্রামে ১১টা ২৮ মিনিট ১২ সেকেন্ডে সূর্যগ্রহণ শুরু হবে, কেন্দ্রীয় গ্রহণ ঘটবে দুপুর ১টা ১৭ মিনিট ৩০ সেকেন্ডে এবং গ্রহণ শেষ হবে দুপুর ২টা ৫৫ মিনিট ১৩ সেকেন্ডে।
সিলেটে ১১টা ২৭ মিনিট ৪৭ সেকেন্ডে সূর্যগ্রহণ শুরু হবে, কেন্দ্রীয় গ্রহণ ঘটবে দুপুর ১টা ১৬ মিনিট ৫০ সেকেন্ডে এবং গ্রহণ শেষ হবে দুপুর ২টা ৫৪ মিনিট ৫২ সেকেন্ডে। খুলনায় ১১টা ২০ মিনিট ১৯ সেকেন্ডে সূর্যগ্রহণ শুরু হবে, কেন্দ্রীয় গ্রহণ ঘটবে দুপুর ১টা ৯ মিনিট ৪৫ সেকেন্ডে এবং গ্রহণ শেষ হবে দুপুর ২টা ৫০ মিনিট ৯ সেকেন্ডে।
বরিশালে ১১টা ২৩ মিনিট ৫ সেকেন্ডে সূর্যগ্রহণ শুরু হবে, কেন্দ্রীয় গ্রহণ ঘটবে দুপুর ১টা ১২মিনিট ৩২ সেকেন্ডে এবং গ্রহণ শেষ হবে দুপুর ২টা ৫২ মিনিট ১ সেকেন্ডে।
রাজশাহী ১১টা ১৭ মিনিট ১৪ সেকেন্ডে সূর্যগ্রহণ শুরু হবে, কেন্দ্রীয় গ্রহণ ঘটবে দুপুর ১টা ৬ মিনিট ২৬ সেকেন্ডে এবং গ্রহণ শেষ হবে দুপুর ২টা ৪৭ মিনিট ৫৫ সেকেন্ডে। রংপুরে ১১টা ১৭ মিনিট ৫৯ সেকেন্ডে সূর্যগ্রহণ শুরু হবে, কেন্দ্রীয় গ্রহণ ঘটবে দুপুর ১টা ৭ মিনিট ২০ সেকেন্ডে এবং গ্রহণ শেষ হবে দুপুর ২টা ৪৮ মিনিট ৩৩ সেকেন্ডে।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সূর্যগ্রহণের সময় হাদিসের আলোকে সালাতুল কুসুফ তথা সূর্যগ্রহণের নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। দুনিয়া ও পরকালের সব ক্ষতি থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/২১জুন, ২০২০)