কুমিল্লা প্রতিনিধি, দ্য রিপোর্ট: মুক্তিযোদ্ধা রণজিৎ রায়ের সম্পত্তি দখলের হীন চেষ্টায় দেওয়া বেড়া সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছেন কুমিল্লার দাউদকান্দির বিএনপি নেতা মজিবুর রহমান ভূঁইয়া। মুক্তিযোদ্ধা রণজিৎ রায়ের বাড়ির প্রবেশপথ বন্ধ করে বেড়া দিয়েছিলেন তিনি। পুলিশের হস্তক্ষেপে রোববার রাতের কোনো এক সময় তিনি বেড়া সরিয়ে নেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এর আগেও মুক্তিযোদ্ধা রণজিৎ রায় এবং তার চাচাতো ভাই নিত্যানন্দ রায়ের জমিতে ধর্মীয় স্থাপনা এবং দেয়াল নির্মাণ করেন ওই বিএনপি নেতা। এমনকি নিত্যানন্দ রায়ের বসতবাড়ি গাছপালাও সাবাড় করেছিল। এ ঘটনায় মামলা চলমান থাকা স্বত্ত্বেও গায়ের জোরে বেড়া দিয়ে বাড়ির প্রবেশ পথ বন্ধ করে দিতে চেয়েছিলেন।
ভুক্তভোগী ও স্থানীয় সূ্ত্রে আরো জানা যায়, কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার বারইকান্দি গ্রামের বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা রণজিৎ রায় এবং তার চাচাতো ভাই নিত্যানন্দ রায়ের জমি দখলে নিতে দীর্ঘদিন ধরেই অপচেষ্টা চালাচ্ছে স্থানীয় বিএনপি নেতা মজিবুর রহমান ভূঁইয়া। এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলমান বিবাদ গড়ায় থানা-পুলিশ-আদালত পর্যন্ত।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, থানা-পুলিশের হস্তক্ষেপে মজিবুর কিছুদিন চুপ ছিলেন। তবে দেশে করোনা মহামারির এই ক্রান্তিলগ্নে মজিবুর নতুন করে জমি দখলের পায়তারা শুরু করেন। তারই ধারাবাহিকতায় রবিবার জমির প্রবেশপথে টিনের বেড়া দিয়ে পুরোপুরি আটকে দিয়েছিলেন মজিবুর। বিষয়টি দেখতে পেয়ে মুক্তিযোদ্ধা রণজিৎ রায় স্থানীয়দের জানালে তারা মজিবুরকে বেড়া না দিতে অনুরোধ করেন। কিন্তু কারও কথা না শুনে দলবল নিয়ে গায়ের জোরে বেড়া দিয়ে পথ আটকে দেন মজিবুর।
এ বিষয়ে মুক্তযোদ্ধা পরিবারের পক্ষ থেকে স্থানীয় মেম্বার, চেয়ারম্যান ও দাউদকান্দি থানার ওসিকে জানানো হলে পরে পুলিশি হস্তক্ষেপে রোববার মধ্যরাতে বেড়া খুলে ফেলেন মজিবুর।
ভুক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধা রণজিৎ রায় জানিয়েছেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী তথা মুজিববর্ষ উপলক্ষে সারাদেশে বৃক্ষরোপণের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই নির্দেশনা মেনেই আমার ও চাচাতো ভাইয়ের বসতবাড়ির অব্যবহৃত জমিতে বৃক্ষরোপণের প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। স্থানীয় একজনকে দিয়ে শনিবার জমিতে গর্ত করে রোববার সকালে সেই গর্তে আরও কিছু কাজ করা হয়েছিল। কিন্তু পরে জানতে পারি, মজিবুর আমার বাড়ির প্রবেশপথ বন্ধ করে বেড়া নির্মাণ করেছে। মূলত আমার ও চাচাতো ভাইয়ের অবশিষ্ট জমি দখলের জন্যই দীর্ঘদিন ধরে সে আমাদের পরিবারের ওপর নানারকম অত্যাচার করে আসছে।’
এলাকাবাসীরা জানায়, বিএনপি নেতা মজিবুর দীর্ঘদিন ধরেই রণজিৎ রায় ও নিত্যানন্দের বাড়ি-জমি হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে। ইতোমধ্যে বেশকিছু জমি দখল করেও নিয়েছে। এর আগে রণজিৎ রায়কে বাড়িছাড়াও করেন মজিবুর ও তার অনুসারীরা। নিজের জায়গা-জমি থাকার পরেও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারটি ভয়ে একই এলাকায় অন্যত্র ভাড়া থাকেন। এছাড়া নিত্যানন্দের জমিতে বসবাসকারী তার আপন ছোটভাই স্বপন রায়কেও ভয়ভীতি দেখিয়ে বাড়িছাড়া করেছেন মজিবুর। তাদের জমির কিছু অংশ দখল করে ধর্মীয় স্থাপনা ও দেয়াল নির্মাণ করেছে মুজিবুর।
বারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনির তালুকদার গণমাধ্যমকে বলেন, আমি ঘটনার পর আমার পরিষদের মেম্বারকে পাঠিয়েছিলাম, সে তাকে অপমান করে দিয়েছে। সে খুবই খারাপ লোক। সে বিএনপি করলেও তার সঙ্গে আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতাদের যোগাযোগ আছে। তাই একবার গ্রেপ্তার হওয়ার পরেও ছাড়া পেয়ে আবার এসে জবরদখল শুরু করেছে। সে আরো কয়েকটি হিন্দু পরিবারের জায়গাজমি কিনে টাকা না দিয়ে তাদের উৎখাত করেছে।
দাউদকান্দি থানার উপপরিদর্শক মোস্তফা কামাল বলেন, জায়গাটি নিয়ে মামলা আছে আদালতে। ঘটনা জানার পর ওসি সাহেব বিষয়টি দেখার জন্য আমাকে পাঠান। আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে বিষয়টি দেখে বেড়া সরিয়ে নিতে বললে রাতেই বেড়া সরিয়ে নেন মজিবুর রহমান। (দ্য রিপোর্ট/ টিআইএম/২২জুন,২০২০)