রাতের আঁধারে বোরকা পরে পালাচ্ছিলেন সাহেদ
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: রাতের শেষভাগে লবঙ্গবতী নদীর তীর দিয়ে দৌড়াচ্ছে বোরকা পরা দশাসই এক নারী, তার আগে আগে এক একহারা পুরুষ। যে করেই হোক নদীতীরে বাধা নৌকায় পৌঁছাতে হবে। তারপর নদী পেরিয়ে ভারত যেয়ে পারলেই আর চিন্তা নেই। কিন্তু মানুষের চোখ ফাঁকি দিতে পারলেও র্যাবকে ধোঁকা দিতে পারেননি বোরকাওয়ালী।
লবঙ্গবতী নদীও তার বুকে ঠাই দেয়নি তাকে। তার আগেই দসাসই বোরকাওয়ালীকে ধরে ফেলে র্যাবের চৌকস সদস্যরা। ভোর তখন ৫টা ১০ মিনিট। বোরকার ভেতর আলোচিত প্রতারক মো। সাহেদ।
নদী তীরে পোঁছার আগে র্যাবের উপস্থিতি বুঝতে পেরে বোরকা পরা সাহেদ আর তার সঙ্গী মাঝি পালানোর জন্য দৌড়াতে থাকেন। নতীতীরে পোঁছেও গিয়েছিলেন। কিন্তু নিজের মোটা ও ভারী শরীরের জন্য সাহেদ র্যাবের সঙ্গে পেরে ওঠেননি।
সংশ্লিষ্ট র্যাব কমান্ডারের ভাষ্য, সাহেদকে সহায়তাকারী মাঝি নদী সাঁতরে পালিয়ে গেছেন। কিন্তু মোটা স্বাস্থ্যের জন্য বোরকা পরা সাহেদ তত দৌড়াতে পারেননি।
বুধবার ভোরে র্যাবের জালে আটকা পড়েন রিজেন্ট হাসপাতাল প্রতারণা মামলার প্রধান আসামি ও রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ। সাতক্ষীরা জেলার দেবহাটার রামগতি সীমান্ত এলাকার লবঙ্গবতী নদীর তীর থেকে তাকে অবৈধ অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করা হয়।
সরকারের সঙ্গে চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে টাকার বিনিময়ে করোনাভাইরাস শনাক্তের নমুনা সংগ্রহ করা এবং ভুয়া সনদ দেওয়ার অভিযোগ ৬ জুলাই র্যাব রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযান চালায়। পরদিন উত্তরা পশ্চিম থানায় র্যাব বাদী হয়ে মো. সাহেদকে এক নম্বর আসামি করে মামলা করে। সেই মামলায় ৯ দিন পলাতক থাকার পর গ্রেপ্তার হলেন মো. সাহেদ।
সাহেদ নিজেকে আওয়ামী লীগের পররাষ্ট্র উপকমিটির নেতা দাবি করতেন। বিভিন্ন টিভিতেও এই পরিচয়ে টকশোতে অংশ নিতেন। এ ছাড়া তিনি এর আগে বিভিন্ন সময় নিজেকে কখনো সেনা কর্মকর্তা, প্রধানমন্ত্রীর এডিসি বলে পরিচয় দিয়ে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করতেন।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ জানান, সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার শাঁখরা কোমরপুর গ্রামের লবঙ্গবতী নদী তীর সীমান্ত থেকে আনুমানিক ৫.০০ থেকে ৫.৩০তটার দিকে সাহেদকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেখান দিয়ে নদী পেরিয়ে সাহেদ ভারতে পালিয়ে যাবার চেষ্টা করছিলেন। এর আগেও একবার একই সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়েছিলেন তিনি।
এর আগে রিজেন্ট গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ পারভেজকে গ্রেফতার করে র্যাব। মঙ্গলবার বিকালে গাজীপুরের কাপাসিয়া থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
রিজেন্ট হাসপাতাল মামলায় সাহেদকে প্রধান আসামি করে মোট ১৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। সে সময় প্রধান আসামিসহ ৯ জনকে পলাতক দেখিয়ে এজাহারে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। অন্য আসামীরা হলেন রিজেন্ট গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ পারভেজ, রিজেন্ট হাসপাতালের কর্মী তরিকুল ইসলাম, আবদুর রশিদ খান জুয়েল, মো. শিমুল পারভেজ, দীপায়ন বসু, আইটি কর্মকর্তা মাহবুব, সৈকত, পলাশ, প্রশাসনিক কর্মকর্তা আহসান হাবীব (১), হেলথ টেকনিশিয়ান আহসান হাবীব (২), হেলথ টেকনোলজিস্ট হাতিম আলী, অভ্যর্থনাকারী কামরুল ইসলাম, রিজেন্ট গ্রুপের প্রকল্প প্রশাসক মো. রাকিবুল ইসলাম, রিজেন্ট গ্রুপের মানবসম্পদ কর্মকর্তা অমিত বণিক, রিজেন্ট গ্রুপের গাড়িচালক আবদুস সালাম ও নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুর রশিদ খান।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/১৫জুলাই, ২০২০)