দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর থেকে দেশে একক পেশাজীবী হিসেবে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে পুলিশ। এখন পর্যন্ত প্রায় ১৩ হাজার পুলিশ সদস্য করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ৫৩ জন।

দেশের এই দুর্যোগময় মুহূর্তে জননিরাপত্তা দেওয়া, শৃঙ্খলা রক্ষা, লকডাউন কার্যকর করা, মানুষের মাঝে সচেতনতা তৈরি, মাঠপর্যায় থেকে কর্মহীন মানুষের মাঝে খাদ্যসামগ্রী ও ত্রাণ বিতরণ সরাসরি তদারকি করছে পুলিশ সদর দপ্তর। আর এসব কাজে অংশ নিতে গিয়ে করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা। শুরুতে বিভিন্ন কারণে সমস্যা হলেও এখন আক্রান্ত পুলিশদের যথাযথ চিকিৎসার জন্য নানা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

গতকাল শুক্রবার পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, শুরুতে আক্রান্তদের চিকিৎসায় কিছু সমস্যা থাকলেও এখন সেগুলো নেই। তিনটি হাসপাতালে চিকিৎসা ছাড়াও রাজধানীর ২২টি আবাসিক হোটেলে রেখে আক্রান্ত পুলিশ সদস্য ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। শুরুতে চিকিৎসক সংকটের কারণে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসক সংযুক্তির অনুরোধ করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ হাসপাতালে জরুরি ভিত্তিতে ৩০ জন চিকিৎসক সংযুক্ত করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে নির্দেশনা দেয়। পাশাপাশি আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের সেবা নিশ্চিত করতে আগে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ছাত্র ছিলেন এমন কর্মকর্তাদের নিয়ে বিশেষায়িত সেল গঠন করা হয়। তিন দিনের বিশেষ প্রশিক্ষণ শেষে তাঁদের পুলিশের বিভিন্ন হাসপাতালে অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে সংযুক্ত করা হয়। পুলিশ সদস্যদের মনোবল ধরে রাখতে নিয়মিতভাবে রেঞ্জ ডিআইজি, মেট্রোপলিটন কমিশনার, ইউনিটপ্রধানদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নিয়ে থাকেন আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ।

করোনা আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের সর্বোচ্চ চিকিৎসায় গৃহীত পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালকে দ্রুত অর্থাৎ মাত্র দুই সপ্তাহে ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতাল থেকে ৫০০ শয্যার কভিড হাসপাতালে পরিণত করা হয়েছে। করোনা পরীক্ষার জন্য মাত্র ১২ দিনে পিসিআর মেশিন স্থাপন করা হয়েছে হাসপাতালটিতে। ঢাকায় একটি হাসপাতাল ভাড়া করা হয়েছে। ঢাকার বাইরে বিভাগীয় হাসপাতাল আধুনিকায়ন করা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, পুলিশ সদস্যদের সংক্রমণের ঝুঁকি এড়ানোর জন্য আবাসনব্যবস্থা ও ডিউটিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। ফলে পুলিশ সদস্যদের আক্রান্ত হওয়ার হার কমেছে এবং মৃত্যুর সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্যমতে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত মে মাসে এক দিনে প্রায় সাড়ে চার শ পুলিশ সদস্য হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। গতকাল পর্যন্ত সারা দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের সংখ্যা ১৩ হাজার ২৪৩ জন। পুলিশের এ-বিষয়ক এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, এখন পর্যন্ত এক হাজার ১৩০ জন কনস্টেবলসহ ৩১১ জন এএসআই, ২৬০ জন এসআই, ৯১ জন ইন্সপেক্টর, ৭৩ জন নায়েক, ৪৭ জন সার্জেন্ট, ২১ জন এডিসি, ১২ জন এসি, দুজন যুগ্ম কমিশনার ও একজন ডিসি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। সার্বিক হিসাবে করোনায় পুলিশের মৃত্যুহার ০.৪ শতাংশ। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন প্রায় ৯ হাজার সদস্য। বর্তমানে করোনা আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের সুস্থতার হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৭ শতাংশ।

গত ১৭ মের পর থেকে পুলিশে সর্বোচ্চ করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়। সে সময় এক হাজার ৪০০ পুলিশ করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে চলে গিয়েছিল যে আড়াই শ বেডের রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে তখন ধারণ ক্ষমতার বেশি করোনা রোগী ভর্তি হয়েছিল।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/১৮জুলাই, ২০২০)