করোনায় ব্যতিক্রমভাবে শুরু হল পবিত্র হজ
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের মধ্যেই শুরু হল ২০২০ সালের পবিত্র হজ। প্রতি বছর ৯ জিলহজ থেকে ১৩ জিলহজ পর্যন্ত এ ইবাদত পালন করতে হয়। মহামারী করোনার কারণে এবার হজ উৎযাপন নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছিল। সকল শঙ্কা কাটিয়ে গত ৬ জুলাই সৌদি আরব সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা শর্তে হজ পালনের ঘোষণা দেয়। আর সেজন্য গত ১৯ জুলাই থেকে হজে অংশ নিতে যাওয়া সবাইকে ৭ দিনের আইসোলেশন রাখা হয়। জানা যায়, হজ পালন শেষেও সবাইকে এমন বাধ্যতামূলক আইসোলেশনে থাকতে হবে।
গতকাল বুধবার মিনায় যাত্রার মাধ্যমে পবিত্র হজের আনুস্থানিক কার্যক্রম শুরু হয়। সৌদি গেজেটের প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, সীমিত পরিসরে সর্বোচ্চ ১০ হাজার ব্যক্তির অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবারের হজ। তবে লোকসংখ্যা কোনভাবেই এর চেয়ে বেশি হবে না বলে জানায় হজ কর্তৃপক্ষ। সেইসাথে প্রতি হজের মৌসুমে কাবা শরিফে স্বর্ণখচিত কুরআনিক ক্যালিগ্রাফির নতুন কালো গিলাফ পরানো হয়। এরই ধারা বাহিকতায় আজ বৃহস্পতিবার হজের দিন কাবা শরিফে নতুন গিলাফ পরানো হবে। কাবা শরিফের প্রধান তত্ত্বাবধায়ক শায়খ ড. আব্দুর রহমান আস-সুদাইসি’র বরাতে এমন প্রতিবেদন প্রকাশ করে সৌদি গেজেট। সবকিছু মিলিয়ে নানা কারণে ব্যতিক্রম এবারের করোনাকালীন হজ।
জরিমানা
করোনাকালীন হজের এই পবিত্র আনুষ্ঠানিকতায় এবার থাকছে জরিমানার বিধান। আরব নিউজের প্রকাশিত খবরে বলা হয়, হজ চলাকালীন নির্ধারিত সময় পবিত্র নগরী মক্কার হজ পালনের স্থান ঐতিহাসিক মিনা-মুজদালিফা ও আরাফাতের ময়দানে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করলেই ১০ হাজার সৌদি রিয়াল জরিমানা গুণতে হবে। অবশ্য জরিমানার এ বিধান ১৯ জুলাই থেকে ২ আগস্ট পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।
বিধি নিষেধ
করোনার মধ্যে পবিত্র হজ পালনে স্বাস্থ্য ঝুঁকির জন্য বেশ কিছু বিধি-নিষেধ কর্তৃপক্ষ। এগুলো হলঃ তাওয়াফের সময় কাবা শরিফ ও হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করা নিষিদ্ধ। একই পথে প্রবেশ ও বাহির হওয়া নিষিদ্ধ। প্রবেশ ও বাহিরের ক্ষেত্রে আলাদা নির্ধারিত পথ অনুসরণ বাধ্যতামূলক। হাজির ব্যক্তিগত জিনিসপত্র অন্যকে দেয়া বা শেয়ার করা নিষিদ্ধ। প্রত্যেক হাজির জন্য মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। ১.৫ মিটার দূরত্বে অবস্থান করা বাধ্যতামূলক। প্রত্যেক হাজির জন্য কাবা শরিফ তাওয়াফ, সাফা-মারওয়া সাঈ, মিনায় পাথর নিক্ষেপ, আরাফা-মুজদালিফায় অবস্থানের সময় মাস্ক পরা এবং ১.৫ মিটার শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা বাধ্যতামূলক। প্রত্যেক হাজির জন্যই যে কোনো ধরনের খাবার ও পানীয় বহন করা নিষিদ্ধ। সবাইকে ফ্রি খাবার সরবরাহ করবে হজ কর্তৃপক্ষ। মিনায় পাথর নিক্ষেপের জন্য আরাফা-মুজদালিফা থেকে কংকর বা নুড়ি পাথর সংগ্রহ নিষিদ্ধ। সব হাজিকে ফ্রি কংকর বা নুড়ি সরবরাহ করা হবে। মিনায় একসঙ্গে কংকর বা নুড়ি পাথর নিক্ষেপ নিষিদ্ধ।
তবে অবশ্যই প্রত্যেক হাজিকে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে কংকর নিক্ষেপ করা বাধ্যতামূলক। তা হজ কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থাপনায় বাস্তবায়ন করবে। প্রত্যেক হাজিকে মসজিদে হারামের কার্পেটের ওপর ব্যবহারের জন্য নিজ নিজ জায়নামাজ বাধ্যতামূলক নিয়ে আসতে হবে। প্রত্যেক হাজির জন্য চাহিদা মতো জমজমের পানি থাকবে আর তা যথযথ নিরাপত্তার সঙ্গে সরবরাহ করা হবে। প্রত্যেক হাজির জন্য জীবাণুমুক্তকরণ স্প্রে ব্যবহার বাধ্যতামূলক। প্রত্যেককেই জীবাণুমুক্তকরণ প্যাকেজ তথা হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও টিস্যু সরবরাহ করা হবে। মসজিদে হারাম তথা কাবা শরিফের ভেতরে কিংবা বাইরে সব জায়গায় সব সময় মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক।
সতর্কতা
হজে অংশগ্রহণকারী, স্বেচ্ছাসেবক কিংবা পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের মধ্যে কারো সন্দেহজ নক কোনো লক্ষণ দেখা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাকে আবাসিক ব্যবস্থাপনাসহ বাধ্যতা মূলক পৃথক রাখা হবে। এদের কোনো কাজে অংশগ্রহণ করতে দেয়া হবে না।
বাংলাদেশিদের হজ যাত্রা
বাংলাদেশ থেকে হজ যাত্রায় অংশ নেওয়া অধিকাংশ লোকই বয়স্ক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, এমন জনসংখ্যার করোনা আক্রান্তের ঝুঁকি অনেক বেশি। তাই করোনা মহামারি কারণে এবার দেশটি থেকে কেউ হজে অংশগ্রহণ করতে পারেনি। প্রতিবেশি দেশ ভারত থেকে ২ লাখের বেশি লোক হজে যাওয়ার কথা ছিল। পাকিস্তান অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি ছিল ১ লাখ ৮০ হাজার লোকের। কিন্তু মহামারির কারণে কেউ এবার হজে অংশগ্রহণ করতে পারেনি। অবশ্য ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, সেনেগাল, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ব্রুনাই এমন অনেক দেশ করোনা মহামারির কারণে হজে লোক পাঠাবে না বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছিল।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/৩০জুলাই, ২০২০)