দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: চলতি আগস্টের মাঝামাঝি সময় থেকে দেশের বিদ্যমান বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার সুসংবাদটি দিয়েছিল বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। কিন্তু তা বুঝি আর হচ্ছে না। এরই মধ্যে পূর্বাভাসে বলা হয়েছে এ মাসের শেষার্ধে মৌসুমি ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। এখনও কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নাটোর, জামালপুর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, রাজবাড়ী, মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, নওগাঁ এই ১৭ জেলার ২৭টি পয়েন্টে নদনদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স কো-অর্ডিনেশন সেন্টার (এনডিআরসিসি) সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, চলতি সপ্তাহে উজানের অববাহিকার অনেক স্থানেই মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। মৌসুমি বায়ুর অক্ষ পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, লঘুচাপের কেন্দ্রস্থল ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে উত্তরপূর্ব আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের ওপর সক্রিয় এবং বাংলাদেশের অন্যত্র তা মোটামুটি সক্রিয় ও উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি থেকে প্রবল অবস্থায় বিরাজ করছে।

আগস্টে বাংলাদেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এ মাসে বঙ্গোপসাগরে এক থেকে দুটি বর্ষাকালীন লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে, যার মধ্যে একটি বর্ষাকালীন নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। দেশের উত্তরাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলের বিদ্যমান বন্যা পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে উন্নতি হয়ে মধ্যভাগ নাগাদ স্বাভাবিক হয়ে আসতে পারে।

আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, তবে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে এ মাসের শেষ নাগাদ ফের স্বল্পমেয়াদি বন্যার সৃষ্টি হতে পারে। আগস্ট মাসের দীর্ঘমেয়াদি আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ তথ্য জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।

এদিকে বর্তমানে দেশে ধীরগতিতে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। নদনদীর পানি কমতে শুরু করেছে। মানুষজন নিজের বাড়িঘরে ফিরতে শুরু করেছেন। কেউ কেউ পানিতে ভেসে যাওয়া ঘরের চাল, বেড়া, মেঝে ঠিক করতে শুরু করেছেন।

জানতে চাইলে গাইবান্ধা সাঘাটার স্কুল শিক্ষক মোখলেছুর রহমান জানিয়েছেন, বন্যার পানি কমতে শুরু করায় বাড়ি ফিরেছি। এতদিন স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে উপজেলা সদরে এক আত্মীয়ের বাড়িতে ছিলাম। বাড়িঘর বন্যার পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। সেগুলো ঠিকঠাক করছি। কিন্তু এখন শুনছি আবারও বন্যার পানি বাড়বে। এনিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। আবার যদি বন্যা আসে তাহলে আবার কোথায় যাবো?

এদিকে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি কমছে, আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত কমা অব্যাহত থাকতে পারে। গঙ্গা নদীর পানি স্থিতিশীল রয়েছে। অপরদিকে পদ্মা নদীর পানি কমছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উজানে মেঘনা অববাহিকায় প্রধান নদীর পানি কমছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। রাজধানীর আশপাশের নদীগুলোর পানি স্থিতিশীল রয়েছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।

অন্যদিকে অপর এক পূর্বাভাসে আগামী ১০ দিনের (১০ আগস্ট পর্যন্ত) বিষয়ে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলেছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি ৭ আগস্টের মধ্যে কমতে পারে। আগামী সাতদিনে কুড়িগ্রাম, বগুড়া, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর, টাঙ্গাইল ও মানিকগঞ্জ জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি বাড়তে পারে। রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ পয়েন্ট, মুন্সীগঞ্জ জেলার ভাগ্যকুল পয়েন্ট এবং শরীয়তপুর জেলার সুরেশ্বর পয়েন্টে আগামী সাতদিন পানি ক্রমান্বয়ে কমতে পারে। যার ফলে আগামী সাতদিনে এসব জেলার বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হতে পারে।

ঢাকার চারপাশের নদীর পানি স্থিতিশীল থাকতে পারে। নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীর পানি আগামী ৫ আগস্ট পর্যন্ত স্থিতিশীল থাকতে পারে। তারপর কমে বিপৎসীমার নিচে চলে আসতে পারে। যার ফলে জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি আগামী ৪ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে দেশের পর্যবেক্ষণাধীন ১০১টি পানি স্টেশনের মধ্যে বাড়ছে ৩৫টিতে, কমছে ৬২টিতে এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৪টিতে।

আবারও বন্যা আসছে, সরকারের প্রস্তুতি কী, জানতে চাইলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান জানিয়েছেন, দুর্যোগে কারও হাত নাই। যে কোনও দুর্যোগে সব ধরনের সহায়তা নিয়ে জনগণের পাশে থাকা সরকারের দায়িত্ব। সরকার সেই দায়িত্ব পালনে পিছপা হবে না। সরকারের পক্ষ থেকে যে কোনও দুর্যোগ মোকাবিলায় সব ধরনের সক্ষমতা রয়েছে। যতদিন প্রয়োজন হবে ততদিন দুর্গত মানুষের পাশে সব ধরনের সহায়তা নিয়ে সরকার থাকবে। ঘরবাড়ির ক্ষতি হলে সেগুলো মেরামতও করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/০৬আগস্ট, ২০২০)