যে কারণে রেমিট্যান্সের রেকর্ড
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: করোনা মহামারির মধ্যেই অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলোর অন্যতম রেমিট্যান্স খাত স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। গত বছরের জুলাইয়ের চেয়ে এ বছরের জুলাইয়ে রেমিট্যান্স বেড়েছে ৬২ দশমিক ৭১ শতাংশ। আর গত জুনের চেয়ে বেড়েছে ৪২ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে প্রবাসীরা ২৫৯ কোটি ৯৫ লাখ মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এক মাসে বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনও এত পরিমাণ রেমিট্যান্স আসেনি।
শুধু তাই নয়, ইতিহাস বলছে এখন থেকে বিশ বছর আগে অর্থাৎ ২০০১-০২ অর্থবছরের পুরো সময়ে (১২ মাসে) রেমিট্যান্স এসেছিল ২৫০ কোটি ১১ লাখ ডলার। আর করোনাকালে শুধু জুলাই মাসেই প্রবাসীরা ২৫৯ কোটি ৯৫ লাখ মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন।
গত বছরের জুলাইয়ে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন ১৫৯ কোটি ৭৬ লাখ ডলার। এই হিসাবে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় রেমিট্যান্স বেড়েছে এক বিলিয়ন ডলারের বেশি। করোনাকালের আরেক মাস গত জুনে প্রবাসীরা ১৮৩ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। জুন মাসে এটি ছিল রেকর্ড। তবে সেই রেকর্ড ভেঙে জুলাইয়ে স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়ে নতুন রেকর্ড গড়েছেন প্রবাসীরা।
প্রবাসীরা করোনাকালে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স কেন পাঠাচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘দুই কারণে করোনাকালে প্রবাসীরা রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। একটি হলো—মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে যারা বেশি বেশি রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন, তারা মূলত দেশে ফিরে আসার জন্য দিন গুনছেন। এই দিন গোনা প্রবাসীরা সেখানে যে টাকা সঞ্চয় করেছিলেন তার সবই দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। ফলে রেমিট্যান্স আসার ক্ষেত্রে রেকর্ড হয়েছে।’ তিনি মনে করেন দ্বিতীয় আরেকটি কারণে রেমিট্যান্স প্রবাহে রেকর্ড হয়েছে, তা হলো—এই করোনাকালে ইউরোপ ও আমেরিকা থেকেও আগের চেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। এটা দীর্ঘমেয়াদের জন্য ভালো লক্ষণ।
ইউরোপ-আমেরিকা থেকে রেমিট্যান্স বাড়ার কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, দেশগুলোর প্রবাসীরা ওইসব দেশে টাকা রেখে এখন কোনও মুনাফা পাচ্ছেন না। অথচ বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোতে এই করোনাকালেও ৬ শতাংশ মুনাফা দিচ্ছে। আবার জাতীয় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করলে ১১ শতাংশের বেশি মুনাফা পাওয়া যাচ্ছে। ফলে ইউরোপ আমেরিকার অনেকেই লাভের আশায় বাংলাদেশে টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছেন। এর সঙ্গে ২ শতাংশ প্রণোদনা সুবিধা তো আছেই।
তিনি বলেন, ‘ইউরোপ আমেরিকার প্রবাসীরা বাংলাদেশে বেশি বেশি টাকা পাঠানোর পেছনে আরেকটি কারণ হলো, বাংলাদেশে এখন সস্তায় ফ্ল্যাট পাওয়া যাচ্ছে। এর সঙ্গে কালো টাকা বিনিয়োগ করারও সুযোগ রয়েছে। ফলে বিভিন্ন দেশের প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেদার ফ্ল্যাট কিনছেন।’ তিনি মনে করেন দীর্ঘদিন বিমান চলাচল বন্ধ থাকায় হুন্ডি কমে যাওয়ার কারণেও ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স বেড়ে গেছে।
তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক কাজী ছাইদুর রহমান বলেন, ‘কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে প্রবাসীরা বেশি বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এছাড়া দুই শতাংশ হারে প্রণোদনার কারণেও প্রবাসীরা বেশি বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, রেমিট্যান্সের গতি ধরে রাখতে গত অর্থবছরে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা ঘোষণা করেছিল সরকার। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরেও এই ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা অব্যাহত রাখা হয়েছে। করোনা মহামারিতে গত মার্চ থেকে বৈশ্বিক বিরূপ পরিস্থিতির কারণে রেমিট্যান্সও কমে গিয়েছিল। কিন্তু এপ্রিল থেকে এর ঊর্ধ্বগতির ধারা চলছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, সদ্য সমাপ্ত ২০১৯-২০ অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স এসেছে এক হাজার ৮২০ কোটি ৩০ লাখ (১৮.২০ বিলিয়ন) ডলার। এই অঙ্ক আগের ২০১৮-১৯ অর্থবছরের চেয়ে ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ বেশি। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মোট ১৬ দশমিক ৪২ বিলিয়ন রেমিট্যান্স এসেছিল। দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বিভিন্ন দেশে থাকা এক কোটিরও বেশি বাংলাদেশির পাঠানো অর্থ বা রেমিট্যান্স। দেশের জিডিপিতে এই রেমিট্যান্সের অবদান ১২ শতাংশের মতো।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/০৮আগস্ট, ২০২০)