ঘুম থেকে উঠে মুমিনের যে ৮ করণীয়
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: সাধারণত ঘুম থেকে ওঠার পর একজন মানুষের দিন শুরু হয়। কিন্তু মুমিনের দিনের শুরুটা অন্যদের চেয়ে ভিন্ন। একজন মুমিন শেষরাতে দ্রুত ঘুম থেকে ওঠার চেষ্টা করে। কেননা শেষরাতে দোয়া করার বিশেষ তাগিদ রয়েছে। এটি আল্লাহর কাছে তাওবা করার সর্বোত্তম সময়। আল্লাহ তাআলা জান্নাতবাসীদের সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘তারা শেষরাতে ক্ষমা প্রার্থনা করে।’ (সুরা: জারিয়াত, আয়াত: ১৮)
ভোররাতে বা দিনের শুরুতে সবচেয়ে বেশি কল্যাণ থাকে। শুধু ইবাদত বন্দেগিই নয়; বরং পার্থিব কাজের জন্যও এটি সবচেয়ে উপযুক্ত ও বরকতময় সময়। রাসুলুল্লাহ (সা.) ভোরবেলার কাজের জন্য বরকতের দোয়া করেছেন। সখর গামেদি (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুল (সা.) এ দোয়া করেছেন, ‘হে আল্লাহ, আমার উম্মতের জন্য দিনের শুরু বরকতময় করুন।’ এ জন্যই রাসুল (সা.) কোনো যুদ্ধের অভিযানে বাহিনী পাঠানোর সময় দিনের শুরুতে পাঠাতেন। বর্ণনাকারী বলেন, হজরত সখর (রা.)-ও তার ব্যবসায়ী কার্যক্রম ভোরবেলা শুরু করতেন। এতে তার ব্যবসায় অনেক উন্নতি হয় এবং তিনি সীমাহীন প্রাচুর্য লাভ করেন। (আবু দাউদ, হাদিস: ২৬০৬)
ঘুম থেকে উঠে মুমিনের করণীয় হলো-
১. ঘুম থেকে উঠে সর্বপ্রথম করণীয় হলো, হাত দিয়ে চেহারা থেকে ঘুমের প্রভাব দূর করা। (বুখারি, হাদিস: ১৮৩)
২. ঘুম থেকে ওঠার দোয়া পড়া। দোয়াটি হলো- উচ্চারণ: ‘আলহামদু লিল্লাহিল্লাজি আহইয়ানা বাদা মা আমাতানা ওয়া ইলাইহিন নুশুর।’ অর্থ: সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাদের মৃত বানানোর পর জীবিত করেছেন। আর তার দিকেই পুনরুত্থান। (বুখারি, হাদিস: ৬৩২৪)
৩. আল্লাহর কাছে দোয়া করা: উবাদা ইবনে সামেত (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি রাতের ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে এই দোয়া পাঠ করবে- উচ্চারণ: ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়্যিন ক্বাদীর, আলহামদুলিল্লাহ, ওয়া সুবহানাল্লাহ, ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ।’
অথবা সে বলবে, ‘আল্লাহুম্মাগ ফিরলি-হে আল্লাহ, আমাকে মাফ করে দিন’ কিংবা যেকোনো দোয়া করবে, তার দোয়া কবুল করা হবে। আর যদি অজু করে এবং সালাত আদায় করে, তার সালাত কবুল করা হবে। (বুখারি, হাদিস: ১১৫৪)
৪. আকাশের দিকে তাকিয়ে সুরা আলে ইমরানের শেষ ১০ আয়াত পাঠ করবে। (মুসলিম, হাদিস: ৬৭৩)
৫. মিসওয়াক করবে। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘুম থেকে উঠে মিসওয়াক করতেন। (বুখারি, হাদিস: ২৪৫)। মিসওয়াক করতে না পারলে ব্রাশ করে নেবে।
৬. অজু করে নেবে। গোসল ফরজ হলে গোসল করে নেবে।
৭. সম্ভব হলে শেষরাতে উঠে তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করবে। তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করলে কুপ্রবৃত্তি দমন ও শয়তানের প্ররোচনা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। ইরশাদ হয়েছে, ‘অবশ্যই দলনে রাত্রিকালীন উত্থান প্রবলতর এবং বাকস্ফুরণে সঠিক।’ (সুরা: মুজ্জাম্মিল, আয়াত: ৬)
৮. জামাতের সঙ্গে ফজরের সালাত আদায় করবে।
ফজরের নামাজের গুরুত্ব- পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে এশা ও ফজরের জামাতের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। এ দুই সময় মানুষ সাধারণত পরিবারের সঙ্গে সময় কাটায় ও বিশ্রাম করে। ফলে জামাত দুটিতে যথেষ্ট অবহেলা ও গাফিলতি হয়ে থাকে। এজন্য হাদিসে এর প্রতি বিশেষভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে। উবাই ইবনে কাব (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘একবার মহানবী (সা.) আমাদের ফজরের নামাজ পড়িয়েছেন। সালাম ফিরিয়ে জিজ্ঞেস করেন, অমুক কি আছে? লোকেরা বলল, নেই। তারপর আরেকজনের নাম নিয়ে জিজ্ঞেস করেন, অমুক কি আছে? লোকেরা বলল, নেই। তিনি বলেন, এ দুই নামাজ (এশা ও ফজর) মুনাফিকদের জন্য সবচেয়ে কঠিন। তোমরা যদি জানতে যে এই দুই নামাজে কি পরিমাণ সওয়াব আছে, তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তাতে শরিক হতে।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৫৫৪)
সুন্নত নামাজের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ফজরের দুই রাকাত সুন্নত। হাদিসে এর প্রভূত ফজিলত বর্ণিত হয়েছে, যা অন্য সুন্নতের ক্ষেত্রে হয়নি। এক হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘ফজরের দুই রাকাত (সুন্নত) দুনিয়া ও দুনিয়ার মধ্যে যা কিছু আছে তার চেয়ে উত্তম।’ (মুসলিম, হাদিস: ৭২৫)
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘শত্রুবাহিনী তোমাদের তাড়া করলেও তোমরা এই দুই রাকাত কখনো ত্যাগ কোরো না।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ১২৫৮)
অন্য হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি এশা ও ফজর জামাতের সঙ্গে পড়ল, সে যেন সারা রাত দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ল।’ (মুসলিম, হাদিস: ৬৫৬)
মহান আল্লাহ আমাদের আমল করার তাওফিক দান করুন।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/২৪আগস্ট, ২০২০)