দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: ফুসফুস আমাদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর মধ্যে একটি। এর দীর্ঘমেয়াদি কিছু রোগ রয়েছে। যার মধ্যে ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (সিওপিডি) অন্যতম। সিওপিডি হলো কয়েকটি রোগের সমন্বিত একটি নাম। যেমন- ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস, অ্যাজমা, অ্যামফাইসিমা। এ তিনটি রোগের একটি, দুটি বা তিনটি একসঙ্গে থাকতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের রোগে আক্রান্ত থাকলে ফুসফুস উচ্চচাপজনিত কারণে অকার্যকর হয়ে যেতে পারে।

সিওপিডি রোগের অন্যতম কারণ হলো বায়ুদূষণ আর ধূমপান। দীর্ঘমেয়াদি শ্বাসকষ্ট বা সিওপিডি রোগ হওয়ার প্রধান কারণ ধূমপান। এ ছাড়া গ্রামের বাড়িতে রান্নার কাজে ব্যবহারকারী লাকড়ির চুলা থেকে উৎপাদিত ধোঁয়া, ধুলোবালি বায়ুদূষণ, অপরিকল্পিত শিল্পায়নের কারণে সিওপিডি রোগে আক্রান্ত লোকের সংখ্যা বাড়ছে।

প্রায়ই সিওপিডি এবং হাঁপানি একে অপরের সঙ্গে ভুলভাবে নির্ণয় করা হয়। তাই সিওপিডি ও হাঁপানির মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করা জরুরী। এ দুটি রোগের কারণ এবং প্রক্রিয়া ভিন্ন, চিকিৎসার ফলও ভিন্ন। এখন পর্যন্ত সিওপিডির প্রতিকার সম্ভব হয়নি। তবে এর অগ্রগতিকে ধীরসম্পন্ন করা যাবে এবং ক্ষতির পরিমাণও কমানো সম্ভব। সঠিক পথ্য, নিয়মিতভাবে নির্দিষ্ট ধরনের ব্যায়াম, রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য দৃঢ় মনোবল দিয়ে বেশির ভাগ রোগী তাদের ফুসফুসের কর্মক্ষমতা কিছুটা ফিরে পেতে পারেন। ফলে তাদের জীবনযাত্রার মান আগের তুলনায় উন্নততর হতে পারে।

সচেতনতার অভাবে প্রাথমিক পর্যায়ে প্রায় ৫০ শতাংশ সিওপিডি রোগী শনাক্তের বাইরে থাকে এবং তারা পরবর্তীকালে জটিল অবস্থায় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়। সিওপিডি রোগ হলে দীর্ঘমেয়াদি কাশি, কাশির সঙ্গে মিউকাসযুক্ত সাদা, আঠালো শ্নেষ্ফ্মা নির্গত হয় ও শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। এ রোগের কারণে ফুসফুসে জীবাণু সংক্রমণ ও নিউমোনিয়া রোগের হঠাৎ অবনতি ঘটতে পারে।

সিওপিডি সাধারণত প্রাপ্তবয়স্কদের রোগ। ৩৫ বছরের বেশি বয়সী মানুষ এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকেন। তবে সিওপিডি বা অ্যাজমা বড় ও ছোট উভয়ের হয়ে থাকে। শিশু বয়স থেকে অ্যাজমা হয় এবং প্রাপ্তবয়সে এটা দীর্ঘমেয়াদি শ্বাসকষ্টে পরিণত হয়। শিশুদের শ্বাসকষ্টের প্রধান কারণ হলো- সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া, শিশু-অ্যাজমা ও শিশু-যক্ষ্ণা। এগুলো হলো শিশুদের শ্বাসনালির প্রধান রোগ। ইদানীং হাসপাতালগুলোয় যেসব শিশু রোগী বেশি আসে, তার মধ্যে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ শিশুর শ্বাসনালির সমস্যা রয়েছে।

এ রোগে সিগারেটের ধোঁয়া, ক্ষতিকর বালুকণা ও গ্যাস ফুসফুসে দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ সৃষ্টি করে ফুসফুসের শ্বাসনালি ও ফুসফুসের রক্তনালি বারবার ক্ষত-বিক্ষত করে। এভাবে ফুসফুসের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা নষ্ট করে ফেলে। আবার গর্ভাবস্থায় নারীদের শরীরে বড় রকম পরিবর্তন আসে। শ্বাসকষ্ট তখন মারাত্মক আকার ধারণ করে।

সিওপিডি ও হাঁপানির মধ্যে পার্থক্য
সিওপিডি ও হাঁপানির মধ্যে অবশ্যই পার্থক্য আছে। আসলে কোনো রোগী সিওপিডি আক্রান্ত কি না তা নির্ণয় করার সময় রোগীর হাঁপানি আছে কি না, তা পার্থক্য করে নিতে হবে। হাঁপানি এবং সিওপিডির মধ্যে পার্থক্য করা খুবই প্রয়োজনীয়। সিওপিডি সাধারণত মধ্য বয়স্কদের রোগ, ধূমপানের ইতিহাস এখানে সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে কাজ করে। এখানে অ্যালার্জি বা পারিবারিক ইতিহাসের তেমন কোনো ভূমিকা নেই। প্রচুর কফ হয় এ রোগে। শ্বাসকার্য ধীরে ধীরে খারাপের দিকে যেতে থাকে। ব্রংকোডাইলেটর ওষুধ সন্তোষজনক নয় এবং সাধারণত এ রোগে ফুসফুসের প্যারেনকাইমা বিনষ্ট হয়। অপরদিকে হাঁপানি যে কোনো বয়সে হতে পারে। ধূমপান এ রোগের কারণ নয়, তবে ধূমপানে হাঁপানির উপসর্গ প্রকট হতে পারে। রোগীর রাইনাইটিস এবং একজিমা আক্রান্ত হওয়ার ইতিহাস থাকে। এখানে কফ খুবই কম উৎপাদন হয়। ব্রংকোডাইলেটরে এ রোগীর রেসপন্স খুবই ভালো এবং হাঁপানিতে ফুসফুসের প্যারেনকাইমা বিনষ্ট হয় না। তাই আমাদের সচেতন হতে হবে।

পরীক্ষা-নিরীক্ষা
বক্ষব্যাধির সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে এক্স-রে, স্পাইরোমেট্রি, রক্ত, কাশিতে যক্ষ্ণার জীবাণু, ইসিজি, বুকের সিটিস্ক্যান করা যেতে পারে। সিওপিডি রোগের কারণে রক্তনালি নষ্ট হয়ে যায় এবং এতে রক্তচাপ বেড়ে যায়। ফলে হূৎপিণ্ডের ডান প্রকোষ্ঠে চাপ বাড়ে। এ জন্য অনেক সময় ইকো পরীক্ষা করার প্রয়োজন হতে পারে।

চিকিৎসা
সিওপিডি রোগের কারণে ফুসফুস অকার্যকর হয়ে যেতে পারে। ফুসফুস অকার্যকর হলে ট্রান্সপ্লান্ট করাতে হয়। কিন্তু এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল চিকিৎসা পদ্ধতি। আর আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে অনেকটা অকল্পনীয় ব্যাপার। এজন্য সিওপিডির জন্য রোগ প্রতিরোধ তথা সচেতনতা গড়ে তোলাই আসল কাজ। প্রাণায়াম তথা প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে ব্যায়াম আর স্বাস্থ্যকর জীবনাভ্যাস গড়ে তোলা, বদভ্যাস যেমন ধূমপান থেকে বিরত থাকার মধ্য দিয়ে আমরা সিওপিডি থেকে দূরে থাকতে পারি। আর যদি সিওপিডিতে কেউ আক্রান্ত হয়েই পড়েন সে ক্ষেত্রে তাকে পরবর্তী জীবনে ইনহেলার যোগে ব্রঙ্কোডায়েলেটর এবং স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ অত্যন্ত নিয়ম এবং নিষ্ঠার সঙ্গে গ্রহণ করে যেতে হবে।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০)