দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: পিপলস লিজিং কোম্পানি থেকে তিন হাজার ৬০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে লাপাত্তা হওয়া রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার (পিকে হালদার) হালদার দেশে ফিরতে চান। এজন্য তিনি নিজের নিরাপত্তা চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেছেন।

সোমবার বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের হাইকোর্ট বেঞ্চে পি কে হালদারের পক্ষে ব্যারিস্টার মাহফুজুর রহমান মিলন এ আবেদন করেন।

পরে এই আবেদনের শুনানিতে আদালত পি কে হালদারের আইনজীবীকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, কবে, কোন বিমানে দেশে আসতে চান তা আদালতকে জানান। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী, দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবীসহ সব পক্ষের কথা শুনে আইন অনুযায়ী আদেশ দিবেন বলে জানান আদালত। দেশে এসে আইনের হেফাজতে পি কে হালদারকে থাকতে হবে বলেও জানান আদালত।

আদালতের আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদকের আইনজীবী খুরশিদ।

গত ১০ আগস্ট পিকে হালদার ও তার সহযোগিদের ৩ হাজার কোটি টাকা ফ্রিজ (জব্দ) করতে বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি দিয়েছিলেন অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক মো. গুলশান আনোয়ার প্রধান। এরপর ‘বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) টাকাগুলো জব্দ করে।

চিঠিতে বলা হয়, পিকে হালদার রিলায়েন্স ফাইন্যান্সে এমডি থাকা অবস্থায় তার আত্মীয়স্বজনকে দিয়ে আরও বেশ কয়েকটি লিজিং কোম্পানির স্বতন্ত্র পরিচালক বানান এবং একক কর্তৃত্বে অদৃশ্য শক্তির মাধ্যমে পিপলস লিজিংসহ বেশ কয়েকটি লিজিং কোম্পানির টাকা বিভিন্ন কৌশলে বের করে আত্মসাৎ করেন। পিপলস লিজিংয়ের আমানতকারীদের ৩ হাজার কোটি টাকা বিভিন্ন কৌশলে আত্মসাৎ করেন এবং ওই কোম্পানিকে পথে বসিয়েছেন। এসব কোম্পানির স্থাবর সম্পদ বিক্রি করে দেন এবং আমানতকারীদের শেয়ার পোর্টফোলিও থেকে শেয়ার বিক্রি করে সমুদয় টাকা আত্মসাৎ করেন।

এ সংক্রান্ত বিষয়ে পিপলস লিজিং, ইন্টারন্যাশনাল লিজিংসহ পিকে হালদার সংশ্লিষ্ট লিজিং কোম্পানি থেকে রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) থেকে পিকে হালদার ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অর্থ আত্মসাৎ সংক্রান্ত সব নথি এবং গোয়েন্দা প্রতিবেদন সংগ্রহ করা হয়েছে বলেও জানানো হয় ওই চিঠিতে।

এর আগে গত ৮ জানুয়ারি প্রশান্ত কুমার হালদারের বিরুদ্ধে ২৭৪ কোটি ৯১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৫৫ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে দুদক। মামলার এজাহারে ১ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকা পাচারেরও অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে।

আর গত ২১ জানুয়ারি প্রায় ৩৬ শত কোটি টাকা পাচার করার ঘটনায় পিকে হালদারসহ উনিশ জনের সব সম্পদ, ব্যাংক হিসাব জব্দ ও পাসপোর্ট আটকানোর নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

ক্যাসিনো-সংশ্লিষ্টতার মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে প্রথম যে ৪৩ জনের বিরুদ্ধে দুদক অনুসন্ধান শুরু করে, তাদের মধ্যে প্রশান্ত কুমার হালদার ছিলেন একজন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গত বছরের ১৪ নভেম্বর ও চলতি বছরের ১০ আগস্ট হাজির হতে নোটিস পাঠিয়েছিল দুদক। তবে ৩ অক্টোবর বিদেশযাত্রায়ও নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই তিনি দেশ ছাড়েন বলে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/০৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০)