অনুমতি ছাড়া সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা নেয়া যাবে না
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: সরকারি কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগতভাবে দায়ী করে করা কোনো মামলা করার আগে সরকারের অনুমতি নিতে হবে। বিভিন্ন আইন ও বিধি-বিধানে থাকা এমন নিয়ম মনে করিয়ে দিয়ে তা যথাযথভাবে প্রতিপালন নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সচিবের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। মঙ্গলবার (৮ সেপ্টেম্বর) এই চিঠি পাঠানো হয়।
ওই চিঠির অনুলিপি প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব, সব মন্ত্রণালয়ের সচিব/সিনিয়র সচিব, সব বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের কাছেও পাঠানো হয়।
সম্প্রতি দুইজন ঠিকাদারের মাটি ভরাটের কাজে ব্যবহৃত চারটি ড্রেজার মেশিন আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলা ও আটটি অন্য মেশিন পিটিয়ে ভাংচুর করে ক্ষতিসাধন করার অভিযোগ এনে মাদারীপুর জেলা প্রশাসক রহিমা খাতুনসহ ছয়জন সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে করা দুটি মামলার প্রেক্ষাপটে সরকার এই উদ্যোগ নিল।
আইনের শাসন নিশ্চিতে সৎ সাহস এবং প্রভাবমুক্ত মনন ও বিবেচনাবোধের মাধ্যমে যথাযথ সিদ্ধান্ত প্রদান ও দৃঢ়ভাবে তা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কাজের সুরক্ষা দেয়া সংক্রান্ত বিধানাবলীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে জানিয়ে চিঠিতে বলা হয়, সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, বিভিন্ন জেলায় জেলা প্রশাসক/জেলা ম্যাজিস্ট্রেট/কালেক্টর, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ও সরকারি কর্মচারীদের সরকারি দায়িত্ব পালনে কৃতকাজের জন্য তাদেরকে ব্যক্তিগতভাবে দায়ী করে মামলা রুজু করা হচ্ছে।
‘কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরকারের পূর্বানুমোদন নেয়ার আইনি বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা প্রতিপালিত হচ্ছে না। এতে করে আইনের ব্যত্যয় ছাড়াও মাঠ পর্যায়ে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা ও অপরাধ প্রতিরোধ/দমনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ প্রায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিশেষ করে নদী, খাল, বিল, বন, জলাশয়সহ সরকারি সম্পত্তি ও স্বার্থরক্ষা, অবৈধ ক্ষতিসাধন/জবরদখল প্রতিরোধ ও উচ্ছেদ অভিযানে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে।’
চিঠিতে বলা হয়, যেকোনো সরকারি কার্যক্রম বা সিদ্ধান্তের বিষয়ে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি আইনে নির্ধারিত কর্তৃপক্ষের কাছে আপিল দায়ের কিংবা প্রতিকার চেয়ে ঊর্ধ্বতন প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করতে পারেন। কোনো কর্মচারীর আইনের গুরুতর অপপ্রয়োগ, এখতিয়ারবিহীন ক্ষমতা অনুশীলন কিংবা কোনো সিদ্ধান্তে মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ন হওয়ার ক্ষেত্রে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি উচ্চ আদালতের আশ্রয় গ্রহণ করতে পারেন। অন্যদিকে অধঃস্তন আদালতগুলোর এখতিয়ার এবং কোন কোন ক্ষেত্রে সেটি বারিত থাকবে তা আইন দ্বারা সুনির্দিষ্ট রয়েছে।
তাই বিচারক, ম্যাজিস্ট্রেট ও সরকারি কর্মচারীদের সরল বিশ্বাসে করা কাজের সুরক্ষা প্রদান সম্পর্কিত এবং বিচারিক বা সরকারি দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে তাদের ব্যক্তিগতভাবে দায়ী করে ফৌজদারি মামলা আমলে নেয়ার আগে সরকারের পূর্বানুমতি নেয়ার বিধান যথাযথ প্রতিপালন নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয় চিঠিতে।
সরকারি কর্মচারীর দায়িত্ব পালন/সরল বিশ্বাসে করা কাজের সুরক্ষা দেয়ার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন আইনের বিধান রয়েছে উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, বিচারক, ম্যাজিস্ট্রেট বা কোনো সরকারি কর্মকর্তার কর্তব্য/দায়িত্ব পালনে করা বা এ বিষয়ে দাবি করা কোনো কাজের জন্য সরকারের পূর্বানুমতি ছাড়া কোনো অপরাধ আমলে গ্রহণ করা যাবে না বলে ‘কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর, ১৮৯৮’ এর সাব-সেকশন-১ এর বিধান রয়েছে।
‘জুডিশিয়াল অফিসার্স প্রটেকশন অ্যাক্ট, ১৮৫০’ এর সেকশন-১-এ কোনো জজ, ম্যাজিস্ট্রেট বা কালেক্টরকে তার বিচারিক প্রকৃতির কার্যক্রম বা দেয়া কোনো আদেশের কারণে ব্যক্তিগতভাবে দায়ী করে দেওয়ানি আদালতে মামলা দায়ের করা যাবে না বলে উল্লেখ রয়েছে।
আইন সচিবের কাছে পাঠানো চিঠিতে আরো বলা হয়, অপরাধ প্রতিরোধ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কার্যক্রম অধিকতর কার্যকর ও গতিশীলতার সঙ্গে সম্পাদনের জন্য পরিচালিত মোবাইল কোর্টের কার্যক্রমের বিষয়ে ‘মোবাইল কোর্ট আইন, ২০০৯’ এর ১৪ ধারায় রয়েছে যে, ‘এই আইন বা তদধীন প্রণীত বিধির অধীন সরল বিশ্বাসে কৃত বা কৃত বলিয়া বিবেচিত কোনো কাজের জন্য কোনো ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হইলে, তিনি মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকারী এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট বা ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট বা মোবাইল কোর্ট পরিচালনার সহিত সংশ্লিষ্ট অন্য কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বিরুদ্ধে কোনো দেওয়ানি বা ফৌজদারি মামলা বা অন্য কোনো প্রকার আইনগত কার্যধারা রুজু করিতে পারিবেন না।’
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/০৯সেপ্টেম্বর, ২০২০)