দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: দারিদ্র্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারীর অগ্রযাত্রাসহ জীবনমানের উন্নতিতে বাংলাদেশের চেয়ে পাকিস্তান পিছিয়ে থাকায় ক্ষোভ ঝেড়েছেন দেশটির লেখক ও কলামিস্ট মনসুর আহমদ। বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের প্রশংসা করে তিনি লিখেছেন, বাংলাদেশকে দুই দশক আগেও তলাবিহীন ঝুড়ি বলা হতো, অথচ তারা প্রমাণ করেছে ব্যাপক উন্নতির জন্য দেরি করা সাজে না।

দেশটির প্রভাবশালী ইংরেজি দৈনিক দ্য নিউজে শনিবার ‘অ্যা স্টোরি অব নেগলেক্ট’ নামে এক নিবন্ধে মনসুর আহমদ একথা লিখেন। প্রায় সবক্ষেত্রে বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে থাকায় পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর ওপর চরম ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন তিনি।

মনসুর লিখেছেন, ‘অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য সামাজিক ক্ষেত্রে বিনিয়োগ গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ এক্ষেত্রে অনন্য উদাহরণ। দুই দশক আগেও তাদের তলাবিহীন ঝুড়ি বলা হতো অথচ সেই দেশটি এখন দারিদ্র্য হ্রাস করছে। বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় পাকিস্তানের চেয়ে বেশি। ভারতের পর দেশটির অর্থনীতি সবচেয়ে দ্রুত বর্ধমান। অন্যদিকে পাকিস্তানের মাথাপিছু আয় গত দুই বছর ধরে কমতির দিকে। এমনকি আফগানিস্তানের চেয়েও পাকিস্তানের মাথাপিছু আয় এখন কম।’

শিক্ষাক্ষেত্রে বাংলাদেশের উন্নতির বিভিন্ন দিক তুলে ধরে এই ক্ষেত্রে তার দেশের অবস্থার তুলনা টেনে আফসোস করেছেন পাকিস্তানের এই লেখক। বলেন, ‘দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে প্রাথমিকে শিক্ষার্থীর তালিকাভুক্তির হার এখন বাংলাদেশেই সবচেয়ে বেশি। আর পাকিস্তানের সবচেয়ে কম। ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের হারও পাকিস্তানে সবচেয়ে বেশি।’

বাংলাদেশিরা পাকিস্তানিদের চেয়ে গড়ে তিন বছর বেশি বাঁচে উল্লেখ করে মনসুর লিখেছেন, ‘স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের ব্যাপক পার্থক্য। পাকিস্তানে বেশি চিকিৎসক, নার্স এবং ক্লিনিক থাকতে পারে; কিন্তু বাংলাদেশিরা পাকিস্তানিদের চেয়ে গড়ে তিন বছর বেশি বাঁচে। এছাড়া পাকিস্তানের তুলনায় বাংলাদেশে শিশুমৃত্যুও অর্ধেক। আবার বাংলাদেশ পোলিও মুক্ত দেশ। আর আমরা সেই দুই দেশের একটি, যেখানে এখনো পোলিও আছে।’

দক্ষিণ এশীয় দেশগুলির মধ্যে নারীদের জীবনমান উন্নয়নে বাংলাদেশই সবচেয়ে বেশি পদক্ষেপ নিয়েছে বলেও নিবন্ধে উল্লেখ করেছেন পাকিস্তানের এই লেখক। তিনি লিখেছেন, এই অঞ্চলের অধিকাংশ দেশের তুলনায় বাংলাদেশ নারীদের উন্নতির জন্য বেশি পদক্ষেপ নিয়েছে। তাদের জন্য ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাংলাদেশ পরিবার পরিকল্পনা প্রোগ্রামেও সফল। এর মাধ্যমে শুধু গর্ভধারণই কমায়নি, নারীদের জীবনমানেও ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে।’

মনসুর আহমদ লিখেছেন, ১৯৯০ সালের দিকে বাংলাদেশ ব্যাপক আকারে টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি চালু করে। আর এখন দেশটিতে এই খাতে ৮০ শতাংশ কর্মীই নারী। এটি বাংলাদেশের নারীদের আয় এবং জীবনমান দুটোরই উন্নতি করেছে। তারা এখন পারিবারিক সুস্থতা রক্ষায় এবং সন্তানদের লেখাপড়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছেন। আর বিপরীতে পাকিস্তানে এই চিত্রটা একেবারেই ঠিক উল্টো।’

পাকিস্তানের তুলনায় এগিয়ে থাকার জন্য বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন মনসুর আহমদ। নিবন্ধের শেষে তিনি লিখেছেন, দুই দশক আগেও যে দেশ তলাবিহীন ঝুড়ি বলে পরিচিত ছিল তারা প্রমাণ করেছে ব্যাপক উন্নতির জন্য দেরি করা সাজে না। এই ক্ষেত্রে তাদের নীতিনির্ধারকদের কমিটমেন্টই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/১২সেপ্টেম্বর, ২০২০)