দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: জাল এনআইডি তৈরি করে ব্যাংক ঋণের সহায়তাকারী নির্বাচন কমিশনের দুই ডাটা এন্ট্রি অপারেটরসহ চক্রের ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। শনিবার রাজধানীর মিরপুর মডেল থানা এলাকা থেকে জাল, দ্বৈত ও ডুপ্লিকেট জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির অভিযোগে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- সিদ্ধার্থ শংকর সূত্রধর (৩২), আনোয়ারুল ইসলাম (২৬), আব্দুল্লাহ আল মামুন (৪২), সুমন পারভেজ (৪০) ও মজিদ (৪২)। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে সিদ্ধার্থ শংকর নির্বাচন কমিশনের খিলগাঁও এবং আনোয়ারুল ইসলাম গুলশান অফিসে ডাটা এন্ট্রি অপারেটর হিসেবে কাজ করতো।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম গণমাধ্যমকে বলেন, জালিয়াতি করে যারা ব্যাংক ঋণ নিতো তাদের জন্য এই চক্রটি জাল জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে দিতো। প্রত্যেকটি জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা করে নিতো তারা। এখন পর্যন্ত ৩০ থেকে ৩৫টি জাতীয় পরিচয়পত্র জালিয়াতি করে বানিয়েছিল তারা। এর মধ্যে কিছু জাতীয় পরিচয়পত্র জব্দ করা হয়েছে।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, সম্প্রতি একই ব্যক্তির দুটি জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে পলাতক থাকার বেশ কয়েকটি ঘটনা আলোচনায় আসে। এরই ধারাবাহিকতায় গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগের একটি দল অনুসন্ধান শুরু করে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে চিড়িয়াখানা রোডের ডি ব্লক এলাকায় থেকে চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে সিদ্ধার্থ ও আনোয়ারুল নির্বাচন কমিশনে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে ডাটা এন্ট্রি অপারেটর হিসেবে কাজ করতো। সুমন ও মজিদ হলো দালাল। আব্দুল্লাহ আল মামুন নিজের নামে একটি জাল জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে দুই ব্যাংক থেকে প্রায় বিশ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছে। সর্বশেষ স্ত্রীর নামে আরেকটি জাল জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে যেসব ব্যক্তি পরিশোধ করতো না, তাদের প্রোফাইল খারাপ হওয়ার কারণে দ্বিতীয়বার অন্য কোনো ব্যাংক থেকে তারা ঋণ পেতো না। ব্যাংক কর্মকর্তারা সাধারণত ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে নাম-ঠিকানা যাচাই করে ঋণ দিতেন। একারণে ওইসব ব্যক্তিরা নতুন বা জাল পরিচয়পত্র ব্যবহার করে ঋণ নিতো। গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, চক্রের সদস্যরা জাল বা দ্বৈত জাতীয় পরিচয়পত্র করে দিতে এককালীন টাকা নেয়ার পাশাপাশি ব্যাংক লোনের ১০ শতাংশ হারেও টাকা নিতো।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলেন, সিদ্ধার্থ ও আনোয়ারুল ডাটা এন্ট্রি অপারেটর হওয়ায় তারা কৌশলে একই ব্যক্তির দুটি জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করতে পারতো। সাধারণত একই ব্যক্তির আঙুলের ছাপ দ্বিতীয়বার নেয়ার কথা নয়। কিন্তু সিদ্ধার্থ ও আনোয়ারুল কৌশলে আঙুলের ছাপ নেয়ার সময় সার্ভারের অফলাইনে তথ্য সংরক্ষণ করে রাখতো। তাৎক্ষণিক জাতীয় পরিচয়পত্র হলেও সেটি পরবর্তীতে আবার যাচাই-বাছাই করা হতো। কিন্তু এই যাচাই-বাছাই হতে অন্তত দুই মাস থেকে এক বছর সময় লাগতো। এর মধ্যে প্রতারকরা ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার কাজটি সম্পন্ন করে ফেলতো।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/১৪সেপ্টেম্বর, ২০২০)