হঠাৎ ভারত থেকে পেঁয়াজ আসা বন্ধ
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: গত বছরের মতো এবারও হঠাৎ করে রান্নার অন্যতম অনুসঙ্গ পেঁয়াজ বাংলাদেশে রপ্তানি বন্ধ করে দিল ভারত। অতিবৃষ্টি ও বন্যায় সরবরাহে ঘাটতি দেখিয়ে ও দেশীয় বাজারে মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করেছে দেশটি। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো ভারত রপ্তানি বন্ধের কথা জানায়নি।
সোমবার বিকালে ভারতের সিএন্ডএফ এজেন্টদের পক্ষ থেকে বিষয়টি দেশের আমদানিকারকদের জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন হিলি স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হারুন-অর-রশিদ।
ঢাকা টাইমসকে এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, ‘ভারতীয় রপ্তানিকারক ও সিএন্ডএফ এজেন্ট আমাদের জানিয়েছেন যে, ভারত কোনো পেঁয়াজ রপ্তানি করবে না। তবে এটা ভারত সরকারের মৌখিক সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছে। দিল্লিতে পেঁয়াজের বিষয়টি নিয়ে একটি বৈঠক হয়েছে বলেও জেনেছি। শুনেছি রপ্তানি পুরোপুরি বন্ধ নাও করতে পারে। তবে কিছু কিছু শর্ত দিতে পারে।’
তবে ভারত রপ্তানি বন্ধ করলেও এবার আর গত বছরের মতো পেঁয়াজের সংকট হবে না বলে দাবি করেছেন হিলি বন্দরের এই আমদানিকারক।
হারুন অর রশিদ বলেন, ‘আশার বাণী হলো গত বছরের মতো আমরা পেঁয়াজ আমদানিকারকরা বসে নেই। ভারতের ওপর একদম নির্ভরশীল হইনি। ইতিমধ্যে আমাদের অনেক আমদানিকারক পাকিস্তান, মিসর, তুরস্কে বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানির জন্য এলসি খুলেছি। যেগুলো ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছাবে।’
হঠাৎ ভারতের এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে হারুন অর রশিদ বলেন, ‘সরকারের কাছে আমাদের দাবি আমদানিকারকরা ইতিমধ্যে পেঁয়াজের যে এলসি খুলেছে তা যেন বাংলাদেশে আসতে পারে সে ব্যাপারে সহযোগিতা করতে।’
রপ্তানি বন্ধের ব্যাপারে জানেন না বাণিজ্যমন্ত্রী
দিনভর পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলেও বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানিয়েছেন, এখনো এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে তারা কিছু জানেন না। তবে ভারতের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করছেন তারা।
রপ্তানি বন্ধের বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘না, আমরা এখনো জানি না। তবে শুনলাম। আমরা এখন বিষয়টা চেক করছি। তবে বন্ধ করে দিয়েছে এমন খবর আমাদের কাছে নেই। আমরা আজকেই চেক করে জানব আসলে কী হয়েছে।’
পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ইস্যুতে ভারতের সঙ্গে কোনো আলোচনা করবেন কি না- জানতে চাইলে টিপু মুনশি বলেন, ‘আজ মনে হয় ভারত এ বিষয়ে নিজেদের করণীয় ঠিক করতে বৈঠকে বসেছে। হয়তো রপ্তানির মূল্য পরিবর্তন না-কী করবে, দেখা যাক। ভারতের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ অব্যাহত রাখছি।’
যদি ভারত রপ্তানি বন্ধ করে দেয় তাহলে সরকারের কী পরিকল্পনা রয়েছে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ভারত বন্ধ করে দিলে সমস্যা একটু হবে। আমরা বিকল্প মার্কেট হিসেবে অন্যান্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করব। ইতিমধ্যে সে বিষয়ে প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আশা করি আমরা অন্যান্য দেশ থেকে চাহিদা অনুযায়ী পেঁয়াজ আমদানি করতে পারব।’
নিজেদের বাজার সামাল দিতে ভারত গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করেছিল। এরপরই বাংলাদেশের বাজারে লাফিয়ে লাফিয়ে দাম বাড়তে থাকে। একসময় দেশি পেঁয়াজের কেজি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায় পৌঁছেছিল। যা স্মরণকালের মধ্যে সর্বোচ্চ।
প্রায় পাঁচ মাস পর চলতি বছরের মার্চে পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাহার করে নেয় ভারত। ১৫ মার্চ থেকে রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার কার্যকর হয়।
গত কয়েক দিন ধরে দেশের বাজারে আবারো বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। কেজিপ্রতি দেশি পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এই অবস্থার মধ্যে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করলে দাম আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও দেশের বাজারে ইতিমধ্যে খোলাবাজারে বাজারমূল্যের অর্ধেক দামে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করেছে টিসিবি।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/১৪সেপ্টেম্বর, ২০২০)