ভাঙা হাতে যেদিন ইতিহাস গড়েন তামিম
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৮। এশিয়া কাপ গ্রুপ পর্বের ম্যাচ, ভেন্যু আরব আমিরাত। টাইগাররা মুখোমুখি লঙ্কানদের। এই ম্যাচ আর আট-দশটা ম্যাচের মতো সাধারণ কোন ম্যাচ হতে পারতো যদি না টাইগার ওপেনার তামিম ইকবাল এক অনন্য নজির স্থাপন করতেন। তামিমের সেই বীরত্ব ইতিহাসে থাকবে অপরাজেয় কোনো বীরের রূপকথার মতো উজ্জ্বল হয়ে আজীবন। সেই বীরত্বগাঁথা রূপকথার আজ দ্বিতীয় বছর পূর্তি।
সেই ম্যাচে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশের ১ রানে নেই ২ উইকেট। দ্বিতীয় ওভারে সুরাঙ্গা লাকমলের বাউন্সারে পুল করতে গিয়ে কব্জিতে আঘাত পেয়ে আহত তামিম। প্রথম ওভারে দুই উইকেট হারানো দলের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান চোট পেয়ে মাঠ ছেড়ে যাচ্ছেন- তাও আবার সোজা হাসপাতালে। খানিকবাদে জানা গেল হাতের কব্জিই ভেঙে গেছে তামিমের।
দলের সেই বাজে অবস্থা থেকে হাল ধরেছিলেন মুশফিকুর রহিম আর মোহাম্মদ মিঠুন। ব্যাট হাতে দৃঢ়তা দেখিয়ে এক প্রান্ত আগলে রেখেছিলেন মুশফিকুর রহিম। একে একে যখন একপাশে উইকেটের পর উইকেট পড়ছে, তখন অন্য পাশে অপরাজিত থেকে যান সেঞ্চুরি করা মুশফিকুর রহিম। এ পরিস্থিতিতে ম্যাচের ৪৭তম ওভারের পঞ্চম বলে আউট হয়ে যান মুস্তাফিজুর রহমান। টাইগারদের বল তখনও বাকি ১৯টি। দলীয় রান ২২৯। এ পরিস্থিতিতে অপরাজিত থাকা তামিম ইকবাল মাঠে নামলে মুশফিকের সঙ্গে জুটি বাঁধতে পারেন। কিন্তু তামিমের তো হাত ভাঙা। ভাঙা হাত নিয়ে কীভাবে মাঠে নামবেন তিনি?
তখন ড্রেসিং রুমে হাতে ব্যান্ডেজ করা তামিম ইকবালের দিকে টেলিভিশন ক্যামেরা বারবার তাক করছে। আর আম্পায়ার অপেক্ষা করছে বাংলাদেশে দলের সিদ্ধান্তের জন্যে। তামিম ব্যাট করতে না পারলে টাইগারদের দলীয় ইনিংস সেখানেই শেষ হবে। এক প্রান্তে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা সেঞ্চুরিয়ান মুশফিক তখন অসহায়ভাবে তাকাচ্ছে ড্রেসিং রুমের দিকে। কি হবে? ২২৯ এই থামবে বাংলাদেশ? কিন্তু এই পুঁজি তো যথেষ্ট নয়। হঠাত সবাইকে অবাক করে দিয়ে মাঠে নামলেন তামিম। ভাঙা হাত। কব্জিতে ব্যান্ডেজ বাঁধা। এমন পরিস্থিতিতে লঙ্কান পেসার সুরাঙ্গা লাকমালের ওভারের শেষ বল মোকাবেলা করতে হবে ভাঙা হাত নিয়ে।
এই লাকমালের বলেই কবজি ভাঙ্গে তামিমের। তবে এতসব চিন্তা করলে কি হয়? তামিম তো নেমেছেন লাল-সবুজের প্রতিনিধিত্ব করতে। এক হাতে ব্যাট করে ডিফেন্ড করেছেন সুরঙ্গা লাকমলের শর্ট পিচ বল। তাতেই বিপর্যয় থেকে উদ্ধার পাওয়া বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কাকে মানসিকভাবে দিল এক বড় ধাক্কা। এরপর বাকি তিন ওভারে স্ট্রাইকে থাকেন মুশফিক। অন্য প্রান্তে তামিম শুধু তাকে সঙ্গ দেন। মুশফিক দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ব্যাট করে যান। ৪৮তম ওভারে থিসারা পেরেরার কাছ থেকে মুশফিক নেন ১৫ রান। ৪৯তম ওভারে দাসুন সানাকাকেও একটি বাউন্ডারি মারেন তিনি। বাংলাদেশ থামে ২৬১ রানে! তামিমের কাছ থেকে পাওয়া অনুপ্রেরণায় টাইগাররা জয় পায় ১৩৭ রানের বড় ব্যবধানে।
কাগজে-কলমে সেই ম্যাচে তামিমের অবদান ছিল ৪ বলে ২ রান, তবে বাস্তবতা হচ্ছে তামিম সেদিন স্থাপন করেছিলেন দেশপ্রেমের অনন্য এক নজির, তামিম সেদিন উদ্বেলিত করেছিল গোটা বাংলাদেশকে, লাল-সবুজের পতাকাকে নিয়ে গিয়েছিলেন অন্য এক উচ্চতায়। ভাঙা কব্জি নিয়ে মাঠে নামার ফলে সেদিন আজীবনের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করতে পারতেন এই দেশসেরা ওপেনার, তবে জন্মভূমির সামনে এই ঝুঁকি তো নিছক তুচ্ছ।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/১৫সেপ্টেম্বর, ২০২০)