নুর-রাশেদকে বাদ দিয়ে পুরোনো নামে ছাত্র অধিকার পরিষদ
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: নুর, রাশেদ ও ফারুককে বাদ দিয়ে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নতুন নেতৃত্ব ঘোষণা করেছে সংগঠনটির একাংশের নেতারা। তারা বলেছে, বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ নামেই এই সংগঠনের যাত্রা হয়েছিল, যা পরে নূর-রাশেদের রাজনীতিকীকরণের কারণে ভুল পথে পরিচালিত হয়েছে। তাই সংস্কারপন্থীরা সংগঠনের পুরোনো নামেই নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেছে।
বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করে ২২ সদস্যের নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। আগের ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ নামেই নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের সদস্য সচিব ইসমাইল সম্রাট বলেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি এ সংগঠনের চরিত্রটা শাসকগোষ্ঠীর মত হয়ে যাচ্ছে। যাদের সঙ্গে মতামত মিলবে না তাকেই সংগঠন থেকে বের করে দিবে। কখনো জামাত কখনো শিবির কখনো ছাত্রলীগ কখনো ছাত্রদল বা কখনো বাম নামে আখ্যায়িত করে। এই বহুরূপী আচরণ কোনো আদর্শ বহন করে না।’
ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক এবং নতুন কমিটির আহ্বায়ক এ পি এম সুহেল বলেন, ‘মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থেকে সরে গিয়ে মানুষের আবেগ ও বিশ্বাস নিয়ে নোংরা রাজনীতি, আর্থিক অস্বচ্ছতা, স্বেচ্ছাচারিতা, অগণতান্ত্রিকভাবে সংগঠন পরিচালনা, ত্যাগী ও দুঃসময়ের সহযোদ্ধাদের মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে অবমূল্যায়ন করা এবং সম্প্রতি ঢাবি শিক্ষার্থী ধর্ষণের মামলাকে কেন্দ্র করে নোংরা রাজনীতিকিকরণের অপচেষ্টার প্রতিবাদে ও সাংগঠনিক সংস্কারের উদ্দেশ্যে আজকের সংবাদ সম্মেলন।’
সুহেল আরও বলেন, ‘গত ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ তারিখে সংগঠনের তৃতীয় বর্ষে পদার্পণের অনুষ্ঠানে সংগঠনের নাম সংক্ষিপ্ত করা হয়, যার বিরোধিতা করেছিলাম আমরা অনেকেই। ডাকসু’র মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তাড়াহুড়ো করে রাজনীতি করার অভিপ্রায়ে বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদ, শ্রমিক অধিকার পরিষদ ও প্রবাসী অধিকার পরিষদ নামে তিনটি অঙ্গ সংগঠন তৈরি করা হয় ছাত্র অধিকার পরিষদ এর উদ্যোগে। যেখানে এসব সংগঠনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এখন পর্যন্ত অজানা আমাদের কাছে। এর ফলে সংগঠনের অভ্যন্তরে চাপা ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হয় ও এর বিরোধিতা করেন সংগঠনের তৃণমূল থেকে শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ। কিন্তু একক সিদ্ধান্তে রাজনীতি করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। যা একপ্রকার স্বৈরতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত এবং সেই সঙ্গে চরম বিরোধ সৃষ্টি করে সংগঠনের অভ্যন্তরে। বিভিন্ন কারণে তরুণদের রাজনীতি বিমুখতায় তারুণ্যনির্ভর এ দলের আত্মপ্রকাশ সত্যি প্রশংসার দাবি রাখে। কিন্তু গণমানুষের কথা বলে সাধারণ মানুষের আবেগকে পুঁজি করে, মুখের আড়ালে মুখোশ পরে আছে ভয়ঙ্কর কিছু সত্য, যা সংগঠনের প্রায় সবাই জানে, কিন্তু প্রকাশ করতে চায় না।’
এক প্রশ্নের জবাবে কমিটির সদস্য সচিব ও ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ইসমাইল হোসেন সম্রাট বলেন, ‘আমরা কাউকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করিনি কারো বিরোধিতাও করিনা। তাদের সঙ্গে আমাদের নীতির মিল হচ্ছে না। কারণ ছাত্রসমাজ যে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ গড়ে তুলেছিল সেই সংগঠন ইমেজ সংকটে পড়েছে বারবার। অনেক চেষ্টা করার পরেও তাদের বদলানো যায়নি। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা আমাদের পূর্বের নামেই ফিরে যাব। আমরা এখন সরে এসেছি। কারো কোনো প্রচারণা কিংবা কেউ আমাদেরকে বাধ্য করে নাই স্বেচ্ছায় সরে এসেছি।’
কোটা আন্দোলনের মতো একটা জাতীয় ইস্যু নিয়ে সারাদেশে একটা আলোড়ন সৃষ্টি করেছে কিন্তু পরবর্তীতে এই সংগঠন ধীরে ধীরে স্বেচ্ছাচারিতা, জবাবদিহিতার অভাব ও চরম আকারে অগণতান্ত্রিক চর্চার কারণে সরে এসে একই সংগঠনের ২২ সদস্যের নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেছে বলে জানান তারা।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/১৫ অক্টোবর, ২০২০)