শারদীয় দুর্গাপূজার মহাসপ্তমী আজ
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: বৃহস্পতিবার চণ্ডীপাঠ, বোধন এবং দেবীর অধিবাসের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। গতকাল ছিল মহাষষ্ঠী। দেবীর আগমনের মধ্য দিয়ে শুরু হলো এ বছরের দুর্গাপূজা। ষষ্ঠীর দিন দেবী আসনে আসীন হয়েছেন। মহালয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল দেবী দুর্গার আগমনের ক্ষণগণনা। এবার দেবী এসেছেন দোলায়,যাবেন হাতিতে চড়ে।
আজ মহাসপ্তমী। আজ বেলা ১১টা ৫৭ মিনিটের মধ্যে নবপত্রিকা প্রবেশ ও সপ্তমীবিহিত পূজা সম্পন্ন হবে। তাই শুক্রবার (২৩ অক্টোবর) সকাল থেকেই শুরু হয় মহাসপ্তমীর পূজার আনুষ্ঠানিকতা। পঞ্জিকামতে, গতকাল দুপুর ১টা ১৪ মিনিটে সপ্তমী শুরু হয়ে আজ বেলা ১১টা ৫৭ মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হবে। এই সময়ে দুর্গাদেবীর নবপত্রিকা প্রবেশ, স্থাপন ও সপ্তমী পূজা শুরু করে সম্পন্ন করতে হবে। আজ হবে প্রতিমায় প্রাণ প্রতিষ্ঠা। এবার দেবীর আগমন ঘটছে দোলায়। অর্থাৎ পৃথিবীতে মড়ক দেখা দেবে বলে বিশ্বাস সনাতন ধর্মাবলম্বীদের।
শুরুতেই বিশেষ রীতি মেনে স্নান করানো হয় মা দুর্গাকে। এসময় দেবী দুর্গার প্রতিবিম্ব আয়নায় ফেলে বিশেষ ধর্মীয় রীতিতে স্নান সেরে, বস্ত্র ও নানা উপচারে মায়ের পূজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ত্রিনয়না দেবীর তৃতীয় চক্ষুদান করা হয়। নবপত্রিকা প্রবেশ ও স্থাপন শেষে দেবীর মহাসপ্তমী বিহিত পূজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর এবারের পূজার প্রথম অঞ্জলি। উপোস রেখে মায়ের পায়ে ফুলের অঞ্জলি দিয়ে চরণামৃত পান করে দিনের শুরু করবেন ভক্তরা।
দেবীর গমনাগমন রবিবার বা সোমবার হলে তাঁর যানবাহন হয় গজ অর্থাৎ হাতি। শনিবার বা মঙ্গলবার হলে তিনি চড়েন ঘোটকে অর্থাৎ ঘোড়ায়। বৃহস্পতিবার বা শুক্রবার হলে তিনি দোলায় যাতায়াত করেন। আর বুধবার হলে তাঁর যাতায়াতের যানবাহন হয় নৌকা। দেবী যাবেন গজে। দেবী গজে গমনাগমন করলে পৃথিবীতে জলের সমতা বজায় থাকে এবং শস্য ফলন ভালো হয়। সুখ-সমৃদ্ধিতে পরিপূর্ণ থাকে মর্ত্যভূমি।
ষষ্ঠীতে দেবীর অধিবাস ও আবাহনের মধ্য দিয়ে পূজা শুরু হয়েছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঘরে ঘরে এখন পূজার ধুম। রংবেরঙের পোশাক পরে বিভিন্ন বয়সের মানুষ আসছেন মন্ডপে মন্ডপে। তবে করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে উৎসবে ভাটা পড়েছে। মাস্ক পরে মন্ডপে প্রবেশের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সন্ধ্যায় আরতির পরই বন্ধ করে দেওয়া হবে পূজামন্ডপ। থাকছে না সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ধুনুচি নাচের প্রতিযোগিতা। অঞ্জলিও দেওয়া হবে ভার্চুয়ালি। পূজামন্ডপগুলোয় আলোকসজ্জায় তেমন জৌলুস নেই।
গতকাল রাজধানীর গুলশান-বনানী সর্বজনীন পূজামন্ডপে মাস্ক পরে আসতে দেখা গেছে দর্শনার্থীদের। জনসমাগম নিয়ন্ত্রণ করছেন স্বেচ্ছাসেবীরা। বসুন্ধরা সর্বজনীন পূজামন্ডপ সাজানো হয়েছে সাদামাটাভাবে। করোনা মহামারীর কারণে এ বছর কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেনি পূজা কমিটি। এ বছর সাত্ত্বিক পূজায় সীমাবদ্ধ থাকছে, মহামারীর কারণে থাকছে না উৎসব আয়োজন। এ বছর প্রসাদ বিতরণেও থাকছে নিষেধাজ্ঞা।
এ বিষয়ে হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান শ্রী সুব্রত পাল বলেন, সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী সবগুলো দিনই আমাদের জন্য বিশেষ আনন্দের। এবার তো উৎসব হবে না, শুধু নিয়মের পূজাটি আমরা করবো। সকালের পূজো শেষে আমরা মায়ের পায়ে অঞ্জলি দেবো। এসময় স্বাস্থ্যবিধি মেনেই অঞ্জলি দেওয়া হবে এবং এবার ভক্তদের প্রসাদ দেওয়াও বন্ধ রয়েছে।
করোনা মহামারির কারণে এবার অঞ্জলি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে সরাসরি টেলিভিশনে এবং ফেসবুকে। ভক্তদের বাসায় বসেই অঞ্জলি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ। তাছাড়া মহাসপ্তমীর দিন দুপুর ১২টা ১ মিনিটে করোনা মুক্তি এবং দেশ-জাতি ও বিশ্ব শান্তি কামনায় বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/২৩ অক্টোবর, ২০২০)