শারদীয় দুর্গাপূজার মহাঅষ্টমী আজ
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: অনাহূত বৃষ্টির এবং করোনা ভাইরাসের মধ্যেও উৎসবপ্রিয় বাঙালি হিন্দুরা মেতে উঠেছেন পূজার আবহে। মণ্ডপে মণ্ডপে চলছে দেবী দুর্গার আরাধনা। করোনাভাইরাস মহামারী থেকে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব দেশের সব মানুষের মুক্তিতে শুক্রবার মহাসপ্তমীর দিনে বিশেষ প্রার্থনায় ভক্তরা অংশ নেন। দেশের সব মন্দির-মণ্ডপে প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়। আজ দেবী শক্তির বন্দনা এবং অসুর বধে অশুভ খ-নের প্রত্যয়ে আজ দুর্গোৎসবের মহাঅষ্টমী পালিত হবে।
পঞ্জিকা মতে, গতকাল বেলা ১১টা ৫৮ মিনিটে অষ্টমী শুরু হয়ে আজ বেলা ১১টা ২৪ মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হবে। এর মধ্যে বেলা ১১টা থেকে সন্ধি পূজার সময় শুরু হয়ে বেলা ১১টা ৪৮ মিনিটে শেষ হবে। পূজা শেষে অঞ্জলি দেবেন ভক্তরা। এ বছর করোনা মহামারীর কারণে রাজধানীর কোনো পূজামন্ডপে হচ্ছে না কুমারী পূজা।
ঢাকেশ্বরী মন্দিরে সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে পুজো শেষ হয়। পুজো শেষে মায়ের পায়ে অঞ্জলি দেয়া হয়। এতে শত শত ভক্ত অংশ নেন। অঞ্জলি শেষে বিশ্বের শান্তি ও মঙ্গল কামনায় প্রার্থনা করেন কেন্দ্রীয় পূজা মণ্ডপের পুরোহিত রঞ্জিত চক্রবর্তী। তাতে অংশ নেন ভক্তরা। সকালে পরপর বেশ কয়েকটি অঞ্জলি দেয়া হয়।
হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত পাল বলেন, সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী আমাদের জন্য বিশেষ আনন্দের।
মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কিশোর রঞ্জন মণ্ডল বলেন, মায়ের চরণে অঞ্জলি দেয়া, মাকে হৃদয়ে ধারণ করা, এর যে অনুভূতি তা কখনই আসলে ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। এটা সবার কাছে অত্যন্ত আনন্দের ও সুখানুভূতির। তিনি আরও বলেন, এবার পুজো মণ্ডপে সে ধরনের কোনো উৎসবের আয়োজন নেই। সবাই সাত্ত্বিকভাবে পূজা পালন করছেন। এখানে যারা এসেছেন সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছেন। আমরা আশা করছি আগামী কয়েকদিনেও সবাই এভাবে চলবেন।
বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব দেশের মানুষ যাতে করোনা মহামারী থেকে মুক্তি পায় সেজন্য দেশের সব মন্দির ও পূজামণ্ডপে বিশেষ প্রার্থনা করা হয়। শুক্রবার দুপুর ১২টা ১ মিনিটে একযোগে এ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়।
ঢাকেশ্বরী মন্দিরের পুরোহিত বলেন, পূজার বিভিন্ন আচারের মধ্য দিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা কৃষি, খনিজ, বনজ, জলজ, প্রাণিজ ও ভূমিসম্পদ রক্ষার জন্য দেবীর কাছে প্রার্থনা করেন। সপ্তমী লগ্নে নবপত্রিকা প্রবেশ একটি ‘প্রতীকী’ পূজা। ‘নবপত্রিকা’ শব্দটির আক্ষরিক অর্থ নয়টি গাছের পাতা। এ পূজায় কদলী বা রম্ভা (কলা), কচু, হরিদ্রা (হলুদ), জয়ন্তী, বিল্ব (বেল), দাড়িম্ব (দাড়িম), অশোক, মান ও ধান এ নয়টি উদ্ভিদকে পাতাসহ একটি কলাগাছের সঙ্গে একত্র করা হয়। পরে একজোড়া বেলসহ শ্বেত অপরাজিতা লতা দিয়ে বেঁধে লালপাড়ে সাদা শাড়ি জড়িয়ে ঘোমটা দেওয়া বধূর আকার দেওয়া হয়।
তার কপালে সিঁদুর দিয়ে সপরিবার দেবীপ্রতিমার ডান দিকে দাঁড় করিয়ে পূজা করা হয়। প্রচলিত ভাষায় নবপত্রিকার নাম ‘কলাবউ’। নবপত্রিকা প্রবেশের পর দর্পণে দেবীকে মহাস্নান করানো হয়। দুর্গাপ্রতিমার সামনে একটি দর্পণ বা আয়না রেখে সেই দর্পণে প্রতিফলিত প্রতিমার প্রতিবিম্বে বিভিন্ন উপচারে দেবীকে স্নান করানো হয়। এ বছর পূজা শেষে ভক্তবৃন্দের মাঝে প্রসাদ বিতরণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। থাকছে না কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও। সন্ধ্যা আরতির পরেই বন্ধ করে দেওয়া হবে মন্ডপ।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/২৪ অক্টোবর, ২০২০)