মাহমুদুল হাসান, দিরিপোর্ট২৪ প্রতিবেদক : বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের গ্রেফতারের পরও নিবার্চনকালীন সময়ে ‘নির্দলীয়’ সরকারের দাবিতে এখনও অনড় বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া।

একতরফা নির্বাচন প্রতিহত করার জন্য যে কোনো কর্মসূচি দিতে প্রস্তুত বিরোধীদলীয় নেতা। একইসঙ্গে দলীয় নেতা-কর্মীদের আরও কঠোরভাবে কর্মসূচি পালনের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এছাড়া খালেদা জিয়া নিজেও রাজপথে নেমে আসতে পারেন বলে জানা গেছে।

বিএনপিপন্থী চিকিৎসক, সাংবাদিক, পেশাজীবী ও আইনজীবীদের সঙ্গে শনিবার রাতে কথা বলার সময় খালেদা জিয়া এমন মনোভাব ব্যক্ত করেছেন বলে জানা গেছে।

জানা যায়, বিএনপিপন্থী চিকিৎসক, সাংবাদিক, পেশাজীবী ও আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলার সময় খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমরা আলেচনার জন্য এখনও অপেক্ষা করছি। কিন্তু সরকার পরিস্থিতি জটিল করে সমঝোতার পথ বন্ধ করে দিচ্ছে।

তিনি বলেন, এমন একটি নির্বাচন আশা করছি যেন সবদল অংশ নিতে পারে। এদেশে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না, হতে দেয়া হবে না।’

জানা গেছে, ৯০ এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের মতেই চলমান আন্দোলনে নির্দলীয় সরকারের দাবিতে একাত্মতা জানান সাংবাদিক, পেশাজীবী ও আইনজীবী নেতারা।

এর আগে খালেদা জিয়া বিএনপিপন্থী নেতাদের বলেন, সরকার একদলীয় নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশটাকে অস্থির করে তুলছে। এদিকে বিরোধীদলীয় নেতাদের গ্রেফতার করছে। ক্ষমতাসীনরা যতই দমন পীড়ন করুক না কেন এতে করে সরকারের পতন ত্বরান্বিত হবে।

এদিকে দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ইউনিভারসিটি টিচার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রো-ভিসি প্রফেসর আ. ফ. ম ইউসুফ হায়দার। তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে স্বচ্ছ, নিরেপক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও সকল দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা দেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ চাই। এর জন্য নির্দলীয় সরকারের প্রয়োজন।

তিনি বলেন, ‘শিক্ষকদের পক্ষ থেকে বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে থেকে দেখা করতে এসেছিলাম। খালেদা জিয়ার সঙ্গে কুশল বিনিময়, দেশের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা নির্দলীয় সরকারের দাবিতে একাত্মা পোষণ করেছি।

শিক্ষক প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেছেন, বিএনপির শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতারের বিষয়টি দুঃখজনক। এতে করে কিছুটা হলেও আলোচনার পরিবেশ বিঘিœত হয়েছে।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, আগামী রবিবার থেকে ফের টানা ৪ থেকে ৫ দিনের হরতাল দেয়া হতে পারে। এরপর পরিস্থিতি বুঝে টানা কর্মসূচি দেয়া হবে। এমনকি অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেয়া হতে পারে।

জানা গেছে, খালেদা জিয়া এখন থেকে নিজেই জেলা ও থানা পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবেন। ইতোমধ্যে নেতাদের একটি তালিকা তার হতে। হরতালের কর্মসূচি তিনি নিজেই মনিটরিং করবেন। প্রয়োজনে তৃণমূলনেতাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবেন।

খালেদা জিয়ার সঙ্গে যারা দেখা করেন :

শনিবার রাত ১১টার দিকে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) এর যুগ্ম মহাসচিব ডা. রফিকুল ইসলাম বাচ্চুর নেতৃত্বে ড্যাব এর ২০/২৫ জন সদস্য খালেদা জিয়ার বাসভবনে যান। এর পরপরই জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আফজাল আহমদ, বিএফইউজে একাংশের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, ডিইউজে একাংশের সভাপতি আবদুল হাই শিকদার ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খানের নেতৃত্বে সাংবাদিকদের একটি প্রতিনিধি দলও বাসভবনে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান। এর পরপরই আসেন এ জে মোহাম্মদ আলী ও ব্যারিস্টার আমিনুল হক, মাসুদ আহম্মেদ তালুকদারসহ বেশ কয়েকজন আইনজীবী।

রাত ৮টা ৫০মিনিটে বিএনপির সমর্থক শিক্ষকদের সংগঠন ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইউটিএবি) আট সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন। ইউটিএবির সভাপতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আ ফ ম ইউসুফ হায়দার ও সাধারণ সম্পাদক তাহমিনা আক্তার টপি নেতৃত্বে শিক্ষকদের দলটি বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদার বাসভবনে যায়। রাত সোয়া ১০টার দিকে তারা বেরিয়ে যান।

শিক্ষকদের প্রতিনিধিদলটি বেরিয়ে যাওয়ার পরপরই খালেদা জিয়ার বাসভবনে যান চলচ্চিত্র পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম। তিনিও বেশ কিছুক্ষণ অবস্থান করেন।

(দিরিপোর্ট ২৪ ডটকম/এমএইচ/এসবি/এমডি/নভেম্বর ১০, ২০১৩)