শারদীয় দুর্গাপূজার মহানবমী আজ
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: আজ মহানবমী। দেবীকে প্রাণ ভরে দেখার দিন। কারণ পরদিন ভক্তদের কাঁদিয়ে কৈলাশে ফিরে যাবেন দেবী দুর্গা। সোমবার (২৬ অক্টোবর) বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে এ বছরের শারদীয় দুর্গোৎসব।
পঞ্জিকা মতে, গতকাল বেলা ১১টা ৪৯ মিনিটে নবমী তিথি শুরু হয়ে আজ বেলা ১১টা ১২ মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এর মধ্যে নবমী পূজা সম্পন্ন করবেন পূজা মন্ডপের পুরোহিতরা। নবমী পূজার মধ্যদিয়ে বাজবে দেবী দুর্গার বিদায়ের সুর।
গতকাল মহা-অষ্টমীর ঐতিহ্য কুমারীপূজার আয়োজন না থাকায় এবার রাজধানীর রামকৃষ্ণ মন্দিরে দর্শনার্থীদের ভিড় দেখা যায়নি। তবে মহা-অষ্টমীর দিন সকালে ষোড়শ উপাচারে অনুষ্ঠিত হয় দেবীর পূজা। ১০৮ পদ্ম এবং প্রদীপ দিয়ে দেবী দুর্গার আরাধনা করা হয়। সকাল ৫টা ১৬ মিনিটের মধ্যে দুর্গা দেবীর মহাষ্টম্যাদি বিহিত পূজা ও মহা-অষ্টমীর ব্রতোবাস শুরু হয়। এরপর সকাল ৬টা ৩৫ মিনিট থেকে ৭টা ২৩ মিনিটের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয় সন্ধিপূজা। পূজার আনুষ্ঠানিকতার পর ভক্তরা অঞ্জলি দেন। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী ভক্তদের বেশির ভাগই নবাসায় বসে অঞ্জলি দিয়েছেন। বাসায় থেকে অঞ্জলি দেওয়ার জন্য বিভিন্ন টেলিভিশন ও ফেসবুকে সরাসরি অঞ্জলি প্রদান অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হয়।
অন্যবারের মতো উৎসবে ভাটা দেখা গেলেও বৃষ্টি উপেক্ষা করে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে অঞ্জলি দিতে পূজামণ্ডপে আসেন কেউ কেউ। রাজধানীর কলাবাগান মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যেই অনেক ভক্ত অঞ্জলি দিচ্ছেন। তবে ভক্তদের ভিড় করতে দেখা যায়নি। ভিড় না করতে পূজা উদযাপন কমিটির পক্ষ থেকেও নজরদারি রাখা হয়েছে। ওই মণ্ডপে শ্যামলী নামের এক ভক্ত জানান, সরাসরি মণ্ডপে এসে অঞ্জলি দেওয়ার মর্যাদা আলাদা। ভক্তদের প্রার্থনায় মা দুর্গা দ্রুত পুরো পৃথিবীকে করোনামুক্ত করবেন বলে তিনি বিশ্বাস করেন।
অনেকটা একই চিত্র দেখা গেছে, জয়কালী মন্দির, বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দির, রমনা কালীমন্দির, শ্যামবাজার শিবমন্দির, খামারবাড়ি মন্দির, সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দির, স্বামীবাগ লোকনাথ বাবার মন্দিরসহ নগরীর অন্য মণ্ডপগুলোতে। অবশ্য ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে ভিড় ছিল বেশি। সন্ধ্যার পর এই ভিড় কমতে শুরু করে।
এ বছর করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে দেশজুড়ে কমেছে মন্ডপের সংখ্যা। মন্ডপ প্রাঙ্গনে উৎসব আমেজের বদলে রয়েছে করোনা ঠেকাতে সতর্কতা। মাস্ক ছাড়া মন্দিরে প্রবেশে রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। জনাসমগমে সংক্রামক ব্যাধি করোনা ছড়াতে পারে। তাই বয়স্ক ব্যক্তিদের মন্দিরে আসতে অনুৎসাহিত করা হচ্ছে।
করোনা মহামারির কারণে এ বছর বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। উৎসব সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো পরিহার করে সাত্ত্বিক পূজায় সীমাবদ্ধ রাখতে হবে বিধায় এবারের দুর্গোৎসবকে ‘দুর্গাপূজা’ হিসেবে অভিহিত করেছে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ। সন্ধ্যায় আরতির পরই বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে পূজামণ্ডপ। থাকছে না সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আরতি প্রতিযোগিতা। জনসমাগমের কারণে স্বাস্থ্যবিধি যাতে ভঙ্গ না হয় সেদিকে খেয়াল রেখেই দুর্গাপূজায় আগেই প্রসাদ বিতরণ ও বিজয়া দশমীর শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তাছাড়া মন্দিরের আশেপাশে মেলাও নিষিদ্ধ করা হয়।
বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মিজানুর রহমান শামীমের নির্দেশে দুর্গাপূজা উপলক্ষে মণ্ডপের নিরাপত্তায় আনসার সদস্য মোতায়েনের কাজ চলছে। গতকাল বাহিনীর পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, সারাদেশে এবার ৩০ হাজার ২১৩টি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। পূজার জন্য রাজধানীতে প্রস্তুত হয় ২৩২টি মণ্ডপ। বিগত বছর সারাদেশে মণ্ডপের সংখ্যা ছিল ৩১ হাজার ৩৯৮টি, যা তার আগের বছরের চাইতে ৪৮৩টি বেশি। আর এবার মণ্ডপ কমেছে গত বছরের চাইতে ১ হাজার ১৮৫টি।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/২৫ অক্টোবর, ২০২০)