সাংবাদিকদের রিপোর্ট সরকারকে সহযোগিতা করে: প্রধানমন্ত্রী
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: যেকোনো অন্যায়-অনিয়মের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের রিপোর্ট সরকারকে তড়িৎ পদক্ষেপ নিতে সহায়তা করে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়, এমন রিপোর্ট থেকে বিরত থাকতে সাংবাদিক সমাজের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
রোববার (২৫ অক্টোবর) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অনুষ্ঠিত ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির রজতজয়ন্তী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা দায়িত্বশীলতা নিয়ে দেশপ্রেমে উদ্ভুদ্ধ হয়ে মানুষের কল্যাণের কথা চিন্তা করে কাজ করবেন। কারণ আপনাদের রিপোর্ট সরকারকে অনেক সহযোগিতা করে। আপনাদের রিপোর্ট পড়ে পড়ে বিভিন্ন পত্রিকায় অনেক ঘটনা আসে। সাথে সাথে সেগুলো দেখেই কিন্তু আমরা অসহায় মানুষের পাশে যেমন দাঁড়াই, তেমনি অন্যায়ের প্রতিরোধ করতে পারি, অপরাধীদের শাস্তি দিতে পারি। ’
‘আপনারা অনেক ঝুঁকি নিয়ে রিপোর্ট করেন এজন্য আপনাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আবার এমন রিপোর্ট করবেন না যাতে মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। সেদিকে দৃষ্টি দেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি। ’
অন্যায়-অবিচারের প্রতি সরকারের কঠোর মনোভবের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটা সময় ছিল আমাদের দেশে কোনো অন্যায় হলে সেটি ধামাচাপা দেওয়া হতো। আমাদের সরকার সেটা করছে না। কোথাও কোনো দুর্নীতি বা অনিয়ম হলে আমরা এটা চিন্তা করি না যে, এর সঙ্গে আমাদের দল জড়িত কি না, সরকারের বদনাম হবে কি না, এাগে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। ’
তিনি বলেন, ‘দুর্নীতির বীজ বপন করে গেছে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করা জিয়াউর রহমান, এরশাদ তারপর খালেদা জিয়া। দুর্নীতিটাকে প্রশয় দেওয়া শুধু না, নিজেই দুর্নীতির সঙ্গে তারা জড়িত ছিল। আওয়ামী লীগ দুর্নীতি নির্মূল করেছে। পাশাপাশি সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ নির্মূল করেছে। আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসকে প্রশ্রয় দেওয় না। যেই হোক ব্যবস্থা নিচ্ছে। ’
পঁচাত্তর পরবর্তী সরকারগুলোর সময়ে দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি থেমে যাওয়ার উদাহরণ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতায় এসে এমন একটা এলিট শ্রেণি তৈরি করে যায় যাদের ওপর ভর করে তারা ক্ষমতায় থাকতে পারে। আস্তে আস্তে মুক্তিযুদ্ধে ইতিহাস মুছে যেতে থাকে। জাতির জনকের নামটি পর্যন্ত মুছে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা হয়। উল্টোদিকে দেশ চলতে শুরু করে।’
‘দেশের প্রতি কোনো দায়িত্ববোধ ছিল না। ক্ষমতা ছিল ভোগের বস্তু। কিভাবে নিজে দুই পয়সা কামিয়ে বড়লোক হয়ে চলে যাবে এটাই ছিল বাস্তবতা।’
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘গত ১১ বছরে দেশের যদি এত উন্নয়ন করা সম্ভব হয়, দারিদ্র্যের হার যদি ৪০ ভাগ থেকে ২০ ভাগের নামিয়ে আনা যেতে পারে, মাথাপিছু আয় যদি বৃদ্ধি করা যায়, খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্নতা অর্জন করা যায়, তাহলে ২১ বছর ধরে যারা ক্ষমতায় ছিল তারা করতে পারলো না কেন?
‘পারে না সেটা নয়, এটা তাদের নীতির ব্যাপার ছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে ব্যর্থ করে দেওয়া, বাংলাদেশের মানুকে অসম্মান করে রাখা, দরিদ্র করে রাখা, দারিদ্র্যের হার দেখিয়ে বিদেশ থেকে টাকা এনে সেই টাকা পকেটস্থ করা, দুর্নীতিতে নীতি হিসেবে গ্রহণ করা। খুন-গুম-হত্যা থেকে শুরু করে কেউ কথা বললে তাদের ওপর নির্যাতন। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের পুরস্কৃত করেছিল। ’
আওয়ামী লীগের দায়িত্ব পাওয়ার দেশকে অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী করার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়েছেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কারো কাছ থেকে হাত যাতে না পাততে হয়, ভিক্ষা করে না চলতে হয়, নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারি। বাংলাদেশ বললে যেন সম্মানের সঙ্গে দেখে, মর্যাদা দেয় জাতি হিসেবে যেনো বিশ্বের মর্যাদা পায়। বর্তমানে সেই অবস্থাটা আমরা অর্জন করেছি। ’
করোনা পরিস্থিতির কারণে বিশ্বব্যাপী মন্দার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সারা বিশ্বই কিন্তু কেরানার কারণে একটা দুর্যোগের মধ্যে চলছে। আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি যাতে দেশের মানুষ এই দুর্যোগ থেকে রক্ষা পায়। একদিকে করোনা আরেকদিকে বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, বৃষ্টি এগুলো মোকবিলা করেই কিন্তু আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। ’
সাংবাদিক পরিবারের সদস্য প্রধানমন্ত্রী
স্বাধীনতার পূর্বাপর বিভিন্ন সময়ে প্রত্যক্ষভাবে সংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বেশ কয়েকটি পত্রিকা প্রকাশের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট এই বাঙালি। সেসব স্মৃতি তুলে ধরে নিজেকে সাংবাদিক পরিবারের সদস্য হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের সাংবাদিক সমাজকেও নিজের পরিবারের সদস্য হিসেবে দেখেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
বঙ্গবন্ধু স্বাধীন সাংবাদিকতায় বিশ্বাস করতেন এবং বর্তমান সরকারও সাংবাদিকদের স্বাধীন মত প্রকাশে বাধা দেয় না-উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুও কিন্তু সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি যখন কলকাতা পড়াশোনা করতেন তখন একবার একটা পত্রিকা বের করা হয়েছিলো সাপ্তাহিক ‘ইরলা’। তার সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন। সেটি বেশি দিন চলেনি। এরপর ‘ইত্তেহাদ’ নামে একটি পত্রিকা বের হয়। তার সঙ্গে তিনি ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। ’
‘এরপর পাকিস্তান হওয়ার যখন সবাই বাংলাদেশে চলে আসে তখন ইত্তেফাক বের করা হয়। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর অর্থে পত্রিকাটি তোফাজ্জেল হোসেন মানিক মিয়া দায়িত্বে। সেখানেও কিন্তু বঙ্গবন্ধু ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। আবার আওয়ামী লীগের জন্য তিনি আরও এক পত্রিকা তিনি বের করেছিলেন ‘নতুন দিন’ নামে। সেই পত্রিকায় সঙ্গেও তিনি জড়িত ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি ‘বাংলার বাণী’ বের করেন। সাংবাদিকতার সঙ্গে তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন। সেদিক থেকে আমিও দাবি করতে পারি আমিও বঙ্গবন্ধুর সন্তান হিসেবে সাংবাদিক পরিবারের একজন সদস্য। কাজেই সেভাবে আমি আপনাদের দেখি। ’
গণভবন প্রান্ত থেকে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম। গণভবন প্রান্তে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া।
হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল প্রান্তে থেকে রজতজয়ন্তী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সভাপতি, উদযাপন কমিটির চেয়ারম্যান শাহজাহান সরদার।
হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল প্রান্তে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রজতজয়ন্তী উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ও ডিআরইউর সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদ, ডিআরইউর সাবেক সভাপতি শাহেদ চৌধুরী, উদযাপন কমিটির কো-চেয়ারম্যান, ডিআরইউর প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা ফিরোজ, উদযাপন কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও ডিআরইউর সহ-সভাপতি নজরুল কবির, ডিআরইউর সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ চৌধুরী, ডিআরইউর সাংগঠনিক সম্পাদক হাবীবুর রহমান।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/২৫ অক্টোবর, ২০২০)