ই-কমার্সের আড়ালে ‘এসপিসি’ হাতিয়ে নিয়েছে ২৬৮ কোটি টাকা
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: অনলাইনে ই-কর্মাসের ব্যবসার আড়ালে ডেসটিনির মতো এমএলএম (মাল্টি লেভেল মার্কেটিং) ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছিল ‘এসপিসি ওয়ার্ল্ড এক্সপ্রেস লিমিটেড’। পিরামিড পদ্ধতিতে সদস্য ও টাকা সংগ্রহ করতো প্রতিষ্ঠানটি। তাদের এই ব্যবসার পুরোটাই অনলাইনভিত্তিক প্রতারণা।
প্রতিষ্ঠানটি ১০ মাসে মানুষের সরলতার সুযোগ নিয়ে ২২ লাখ ২৪ হাজার ৬৬৮টি সদস্যদের আইডি থেকে ২৬৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ডিএমপির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের একটি টিম বিশেষ অভিযান চালিয়ে এ প্রতারণা ব্যবসায় জড়িত ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
মঙ্গলবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, প্রতিষ্ঠানটির এমডি ও সিইও আল আমিন প্রধান, নির্বাহী অফিসার মো. জসীম, ম্যানেজার (হিসাব) মো. মানিক মিয়া, ম্যানেজার (প্রডাক্টস) মো. তানভীর আহম্মেদ, সহকারী ম্যানেজার (প্রোডাক্টস) মো. পাভেল সরকার ও অফিস সহকারী নাদিম মো. ইয়াসির উল্লাহ।
রাজধানীর কলাবাগান এলাকায় এফ হক টাওয়ারে কোম্পানির অফিসে অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাদের দেয়া তথ্যে মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে মূলহোতা আল আমিন প্রধান ও মো. জসীমকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘এসপিসি ওয়ার্ল্ড এক্সপ্রেস লিমিটেড’ নামের এই কোম্পানি চলতি বছরের ১ জানুয়ারি ই-কমার্সের লাইসেন্স নিয়ে যাত্রা শুরু করে। কোম্পানির এমডি ও সিইও আল আমিন প্রধান একসময় ডেসটিনি-২০০০ লি. এ সক্রিয় ছিল।
ডেসটিনি বন্ধ হয়ে গেলে দীর্ঘদিন গবেষণা করে ডেসটিনির ব্যবসা পদ্ধতি অনুসরণ করে এই অনলাইনভিত্তিক প্রতারণা শুরু করেন তিনি। ১০ মাসে তারা সাধারণ মানুষের সরলতার সুযোগে উচ্চ কমিশনের প্রলোভন দেখিয়ে ২২ লাখ ২৪ হাজার ৬৬৮টি সদস্যদের আইডি থেকে ২৬৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন।
ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, তাদের ব্যবসা কার্যক্রম অনলাইন আ্যপভিত্তিক হওয়ায় বাংলাদেশের বাইরেও ১৭টি দেশের বাংলাদেশি প্রবাসী ও বিদেশি প্রায় পাঁচ লাখ সদস্য রয়েছে।
যেভাবে প্রতারণা করতো তারা
তারা কোম্পানির ওয়েবসাইট http://main.spcworldexpress.com, ফেসবুক পেজ ও ইউটিউবে শত শত পোস্টের মাধ্যমে ই-কমার্সের কথা বলে সাধারণ মানুষকে লোভনীয় কমিশনের লোভ দেখিয়ে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে। আগ্রহীরা গুগল প্লেস্টোর থেকে একটি মোবাইল আ্যপ ডাউনলোড করে রেজিস্ট্রেশন করে। রেজিস্ট্রেশন করার সময় বাধ্যতামূলক আগের রেজিস্ট্রেশনের আপলিঙ্ক আইডির রেফারেন্সে বিকাশ, নগদ, রকেট নম্বরে একাউন্টের প্রতিটি আইডির জন্য ১২০০ টাকা দিতে হয়। কোম্পানিটি বিভিন্ন ধরনের কমিশন যেমন (রেফার কমিশন, জেনারেশন কমিশন, রয়্যাল কমিশন) এর প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা করে।
পিরামিড আকৃতির রেফার কমিশন
যে রেফার করবে সে তার নিচের তিনটি আইডি থেকে ৪০০ টাকা করে কমিশন পাবে। এরপর ওই তিনটি আইডি থেকে যখন ৩x৩=৯ আইডি হবে তখন আপলিঙ্কের আইডি ২০ শতাংশ কমিশন পাবে। এরপর ডাউনলিংকের যত আইডি হবে তার আইডি ১০ শতাংশ হারে কমিশন পাবে। যা মূলত পিরামিড আকৃতির হয়ে থাকে। এ ধরনের ব্যবসা বাংলাদেশের আইনের সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
এলএমএল ব্যবসা আড়াল করার কৌশল
কোম্পানিটি নামেমাত্র কয়েকটি পণ্য যেমন- অ্যালোভেরা শ্যাম্পু, ফেসওয়াশ, চাল, ডাল, মরিচের গুঁড়া ইত্যাদি শুধুমাত্র তাদের রেজিস্টার্ড সদস্যদের কাছে বিক্রি করে থাকে। তার লভ্যাংশ থেকে প্রতি আইডি হোল্ডারকে কোম্পানির বিভিন্ন বিজ্ঞাপন দেখার বিনিময়ে ১০ টাকা করে দেয়ার কথা বলে। গ্রেপ্তারকৃতরা ই-কমার্সের লাইসেন্স দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে বোঝায় যে তারা ই-কমার্স করছে।
গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে একটি হ্যারিয়ার গাড়ি, দুটি পিকাপ ভ্যান, সার্ভারে ব্যবহৃত ৬টি ল্যাপটপ, দুটি রাউটার, দুটি পাসপোর্ট ও বিভিন্ন কাগজপত্র জব্দ করা হয়।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/০৩নভেম্বর , ২০২০)