নীল-লাল রাজ্য নয়, আমি দেখি যুক্তরাষ্ট্র: বাইডেন
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, আমি বিভেদ নয়, ঐক্য চাই। কোন রাজ্য নীল, কোন রাজ্য লাল, তা আমি দেখি না। আমি দেখি যুক্তরাষ্ট্রকে।
দেশটির স্থানীয় সময় শনিবার সন্ধ্যায় ডেলাওয়ার অঙ্গরাজ্যের নিজ শহর উইলমিংটনে জাতির উদ্দেশে বিজয়ী ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।
বাইডেন বলেন, নির্বাচনে হেরে যাওয়ায় হতাশার বিষয়টি আমি বুঝতে পারি। কারণ আমি নিজে কয়েকবার হেরেছি। তবে সবকিছু ভুলে এখন অন্যকে কাজ করার সুযোগ দিন। আসুন চলামান বৈশ্বিক মহামারি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষকে মুক্ত করি।
বাইডেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ আমার প্রতি যে আস্থা ও আত্মবিশ্বাস রেখেছে, তা দেখে বিস্মিত। যারা যুক্তরাষ্ট্রেকে বিভক্তি বা ভাগাভাগি করতে চেয়েছিল, তা থেকে সবাইকে একত্রিত হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি।
বাইডেন বলেন, এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ কথা বলেছেন। তারা আমাদের সুস্পষ্ট বিজয় এনে দিয়েছেন। এটা জনগণের বিজয়।
নব-নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, এই জাতির ইতিহাসে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আমরা সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছি। সাত কোটি ৪০ লাখ ভোট। আমার ওপর আপনাদের এই আস্থা ও বিশ্বাসের জন্য আমি কৃতজ্ঞ।
তিনি বলেন, কোটি কোটি আমেরিকান আমার দৃষ্টিভঙ্গির পক্ষে ভোট দিয়েছেন। এটি আমার জীবদ্দশায় এক অনন্য সম্মান।
তিনি বলেন, যে দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ রায় দিয়েছে তাকে বাস্তবে পরিণত করাই এখন আমাদের কাজ।
নিজের বর্তমান অবস্থানের জন্য স্ত্রী, সন্তান ও নাতি-নাতনিসহ পরিবারের সদস্যদের অবদানের কথা স্মরণ করেন জো বাইডেন। বলেন, পরিবারের সবার ভালোবাসা ও অক্লান্ত সমর্থন ছাড়া আমার পক্ষে এই জায়গায় পৌঁছানো সম্ভব ছিল না। তারা আমার কলিজা।
এই মহামারির মধ্যে যারা স্বেচ্ছাসেবীর কাজ করেছেন এবং যেসব কর্মকর্তা নির্বাচনি দায়িত্ব পালন করেছেন, আপনারা এই জাতির পক্ষ থেকে বিশেষ ধন্যবাদ পাওয়ার দাবিদার। আজকের এই মুহূর্তকে সম্ভব করার জন্য আমার প্রচার টিম এবং সব স্বেচ্ছাসেবীদের অনেক কিছু করতে হয়েছে। তাদের কাছে আমি ঋণী।
বিজয় ভাষণে নব-নির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস বলেন, আমি যুক্তরাষ্ট্রের আত্মাকে পুনর্গঠন, এ জাতির মেরুদণ্ড, মধ্যবিত্তদের পুনর্গঠন এবং যুক্তরাষ্ট্রকে আবার বিশ্বজুড়ে সম্মানিত করার লক্ষ্যে কাজ করতে চেয়েছিলাম।
ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস তার চলমান সাথীর পরিচয় দিয়ে বলেন, প্রয়াত জর্জিয়ার কংগ্রেস সদস্য জন লুইসের উত্তরাধিকারের আহ্বান জানিয়ে এবং রেকর্ড সংখ্যায় পরিণত হওয়ার জন্য প্রচারণার সমর্থকদের প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন, ভোটাররা বাইডেনকে পরবর্তী একজন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করে আশা, বিজ্ঞান এবং সত্যকে বেছে নিয়েছিলেন। তাকে নিরাময়কারী এবং একক হিসাবে অভিহিত করেছেন তিনি।
চলমান সাথী হিসাবে একজন মহিলাকে (কমলা) বেছে নেওয়ার ঝুঁকি নেওয়ার জন্য তিনি বাইডেনের কাছে কৃতজ্ঞ।
তিনি বলেন, যদিও আমি প্রথম মহিলা ভাইস প্রেসিডেন্ট হতে পেরেছি তবে আমি শেষ হতে পারব না, কারণ আজকের রাতের প্রতিটি ছোট্ট মেয়ে দেখছে যে এটি সম্ভাবনার দেশ।
এদিকে, শনিবার পেনসিলভানিয়ায় জয়ের মাধ্যমে বাইডেনের চূড়ান্ত বিজয় নিশ্চিত হতেই রাস্তায় নেমে আসেন সমর্থকেরা। ডেমোক্র্যাটদের বিজয়ী হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়তেই ব্যাপক উন্মাদনা দেখা যায় তাদের মধ্যে।
তুমুল হর্ষধ্বনি আর হাততালি শোনা গেছে ওয়াশিংটনজুড়ে। বহু মানুষ ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে, গাড়ির হর্ন বাজিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। আওয়াজ আসছিল সেখানকার ক্যাপিটল ভবনের চারপাশ থেকেও। এ সময় অনেককেই অশ্রু মুছতে দেখা গেছে।
বাইডেনকে জয়ী ঘোষণার পর ব্রুকলিনের রাস্তায়ও ছিল আনন্দ-উল্লাস। অনেকেই বাড়ির ছাদে উঠে নাচ শুরু করেন। রাস্তা দিয়ে চলাচলরত পথচারীদের তাতে সমর্থন দিতে দেখা যায়।
অপরদিকে, শনিবার বাইডেনের বিজয় ভাষণের এক বিবৃতিতে ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি হার মেনে নেবেন না, বরং আইনি লড়াই চালিয়ে যাবেন।
ট্রাম্প বলেন, খেলা এখনও শেষ হয়ে যায়নি। জো বাইডেন এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও রাজ্যে বিজয়ী হয়নি। তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ রাজ্যগুলোতে ফল পুনঃনিরীক্ষণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আমাদের বৈধ আইনি চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যা চূড়ান্ত বিজয়ী নির্ধারণ করতে পারে।
ট্রাম্প বলেন, নির্বাচনি আইন পুরোপুরি বহাল রয়েছে এবং প্রকৃত বিজয়ীই হোয়াইট হাউজে আসন গ্রহণ করেছেন; এটি নিশ্চিত করতে সোমবার আমাদের প্রচার শিবির বিষয়টি আদালতে নিয়ে যাবে।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/০৮নভেম্বর, ২০২০)