মি. বেকারের বিরুদ্ধে ৮০ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকির মামলা
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: মি. বেকার কেক অ্যান্ড পেস্ট্রি শপ লিমিটেডের বিরুদ্ধে ৮০ কোটি ১৬ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগে মামলা করেছে ভ্যাট নিরীক্ষা গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। ২৬৫ কোটি টাকার পণ্য বিক্রয়ের তথ্য গোপন করেছে মি. বেকার।
রোববার (৮ নভেম্বর) ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আজ ভ্যাট গোয়েন্দা মি. বেকারের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। ভ্যাট ফাঁকির সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে গত ২০ অক্টোবর মি. বেকার কেক অ্যান্ড পেস্ট্রি শপ লিমিটেডের মোকদাম আলী সরকার রোডের কারখানায় অভিযান চালানো হয়।’
ভ্যাট গোয়েন্দা জানায়, রাজধানীতে প্রতিষ্ঠানটির ২৯টি বিক্রয়কেন্দ্র আছে। অভিযানকালে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি কোনো ধরনের হিসাব সংরক্ষণ ছাড়াই ব্যবসা করছে। অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের দুটো ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে। মি. বেকারের ফিন্যান্সিয়াল প্রতিবেদন পর্যালাচনায় তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম সম্পর্কে জানা গেছে। অভিযানে নেতৃত্ব দেন ভ্যাট গোয়েন্দার উপ-পরিচালক নাজমুন নাহার কায়সার এবং ফেরদৌসী মাহবুব।
অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সচিব আসিফ জামান গত ১৮ অক্টোবর তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের ৪ নম্বর রোডে অবস্থিত মি. বেকারের বিক্রয়কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ভ্যাট চালান না দেওয়ার অভিযোগ করেন। তিনি ওই স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেন, ভোক্তারা ভ্যাট দিলেও তা সরকার পাচ্ছে না। এ বিষয়ে এনবিআরের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের কাছে প্রতিকার চান তিনি। এ অভিযোগ ও অন্যান্য গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তদন্ত করার জন্য ভ্যাট গোয়েন্দাকে নির্দেশ দেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।
ভ্যাট গোয়েন্দা দলের আকস্মিক পরিদর্শনকালে প্রতিষ্ঠানটিতে ভ্যাট আইনের বাধ্যবাধকতা অনুসারে ক্রয় হিসাব পুস্তক (মূসক-৬.১) ও বিক্রয় হিসাব পুস্তক (মূসক-৬.২) পাওয়া যায়নি। ভ্যাট আইন অনুযায়ী, উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এই দুটো হিসাব সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতা আছে।
পরিদর্শনকালে ভ্যাট সংক্রান্ত অন্যান্য দলিলাদি দেখাতে বলা হলে মি. বেকারের মালিকপক্ষ তা দেখাতে পারেনি এবং এগুলো সংরক্ষণ না করার বিষয়ে কোনো সদুত্তরও দিতে পারেনি। প্রতিষ্ঠানে নিজস্ব বাণিজ্যিক দলিলাদিও রাখেন না তারা। এতে ভ্যাট গোয়েন্দা দলের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে, মনগড়া ও কাল্পনিক হিসাবের ভিত্তিতে মি. বেকার স্থানীয় ভ্যাট সার্কেলে রিটার্ন দাখিল করে আসছে। এমনকি অভিযানের আগের দিন যেসব পণ্য ফ্যাক্টরি থেকে বের করেছে তার মূসক-৬.৫ চালান দেখাতে বলা হলেও প্রতিষ্ঠানটি তা দেখাতে পারেনি।
অভিযানকালে কারখানা ভবনের বিভিন্ন তলায় ও ছাদে কর্মচারীদের থাকার কক্ষ তল্লাশি করে কাগজপত্র জব্দ করে গোয়েন্দা দল। জব্দকৃত কাগজপত্র এবং অনুসন্ধানের মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্য ও দলিলাদির ভিত্তিতে ২০১৪ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে বিক্রয়ের ওপর ৩৪ কোটি ৬০ লাখ ৫৬ হাজার ৩৩৯ টাকার ভ্যাট ফাঁকি উৎঘাটন করা হয়। যেখানে সুদ প্রযোজ্য ২৫ কোটি ৩৭ লাখ ৮৭ হাজার ৯১ টাকা। এছাড়া, ২০১৯ সালের সেপ্টম্বর থেকে ২০২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অপরিশোধিত উৎসে ভ্যাট ১৭ লাখ ৩৩ হাজার ৯৬৮ টাকা এবং জরিমানা সুদ ৩৪ হাজার ৬৭৯ টাকা।
অন্যদিকে, ২০১৪ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত বিভিন্ন শোরুম ভাড়ার ওপর অপরিশোধিত ভ্যাট ১ কোটি ৫৬ লাখ ৩৯ হাজার ৪০ টাকা ও সুদ ৯৮ লাখ ৪৮ হাজার ৮১৪ টাকা।
একই প্রক্রিয়ায় মি. বেকার কেক অ্যান্ড পেস্ট্রি শপ লিমিটেডের বিক্রয় এবং উৎসে কর্তন বাবদ মোট অপরিশোধিত ভ্যাট ৪৬ কোটি ৫৫ লাখ ৪ হাজার ৫৩১ টাকা। যেখানে জরিমানা সুদ প্রযোজ্য ৩৩ কোটি ৬১ লাখ ২৫ হাজার ৭২৫ টাকা। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানটি মোট ৮০ কোটি ১৬ লাখ ৩০ হাজার ২৫৬ টাকা ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে।
প্রকৃত বিক্রয় তথ্য গোপন এবং উৎসে ভ্যাট না দেওয়ায় ভ্যাট আইন অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে আজ ভ্যাট গোয়েন্দা মামলা দায়ের করেছে। মি. বেকারের আরেকটি সুইটমিটের ব্যবসা আছে। রাজধানীতে এর পাঁচটি বিক্রয়কেন্দ্র আছে। এসব বিক্রয়কেন্দ্রের তথ্যও অনুসন্ধান করা হচ্ছে।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/০৮নভেম্বর, ২০২০)