হালাল পণ্যের বাজার : লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে পিছিয়ে বাংলাদেশ
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: বিশ্ববাজারে দেশীয় হালাল পণ্যের বিপুল চাহিদা থাকলেও প্রয়োজনীয় মান সনদের অভাবে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে পিছিয়ে পড়ছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে হালাল পণ্যের বড় বাজারগুলো অমুসলিম দেশগুলো দখল করে রাখলেও মুসলিম দেশ হিসেবে আমাদের সম্ভাবনা কাজে লাগানো যাচ্ছে না। অথচ এই সুযোগ কাজে লাগানো গেলে কৃষিপণ্য হিসেবে বর্তমান রপ্তানিকে আরো ১০ গুণ বাড়ানো সম্ভব। বর্তমানে কৃষি খাতে বাংলাদেশের রপ্তানি প্রায় ১০০ কোটি ডলার। যার মধ্যে রয়েছে হালাল পণ্যও। আয়োজিত এক কর্মশালায় এসব তথ্য জানান বক্তারা।
বক্তারা বলেন, হালাল পণ্যের দুই লাখ কোটি ডলারের বেশি বিশ্ববাজার ধরতে এখনই বিশ্বমানের মানসনদ প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে একটি ওয়ানস্টপ কর্তৃপক্ষ (একমুখী কর্তৃপক্ষ) করার উদ্যোগ নিতে হবে। গতকাল বুধবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আয়োজিত ‘হালাল পণ্যসহ সব পণ্যের সার্টিফিকেশন সক্ষমতা ও হালাল পণ্য রপ্তানির সম্ভাবনা’ শীর্ষক কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্যসচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক রুমানা হক।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, হালাল পণ্যের বিশ্ববাজার ২.১ ট্রিলিয়ন ডলার। ২০২৪ সালের এই বাজার হবে ১০.৫১ ট্রিলিয়ন ডলার। বিশ্বের মুসলিম জনগণ ২০১৭ সালে হালাল পণ্যে ব্যয় করে ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলার। এটা প্রতিবছর ৮.১৪ শতাংশ হারে বাড়ছে।
এতে আরো বলা হয়, হালাল পণ্যের গুণগত মান এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি না থাকায় নিরাপদ খাদ্য হিসেবে শুধু মুসলিম জনগোষ্ঠী নয়; যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের অমুসলিম জনগোষ্ঠীর মাঝেও জনপ্রিয়তা বাড়ছে। এ ছাড়া এসব খাদ্যের বাজারেও নেতৃত্ব দিচ্ছে অমুসলিম দেশ ব্রাজিল, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, সিঙ্গাপুর এবং থাইল্যান্ড। তাই হালাল পণ্যে রপ্তানিকারক দেশগুলো কী কী মানদণ্ড বিবেচনায় নিয়ে বিশ্ববাজারে চাহিদা পূরণ করছে ওই সব দেশের মতো বাংলাদেশে একটি একমুখী কর্তৃপক্ষ তৈরি করার পরামর্শ দেন তারা।
কর্মশালায় বক্তারা আরো বলেন, ‘বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতিম দেশ সৌদি আরব। দেশটির আমাদের হালাল পণ্যে আগ্রহ থাকলেও মানসনদের অভাবে বাজার ধরতে পারছেন না উদ্যোক্তারা। অথচ বাংলাদেশে দক্ষ জনবলসহ রপ্তানিযোগ্য পণ্যও আছে। বিশেষ করে গবাদি পশু শিল্পে বাংলাদেশ এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ।’
সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে তারা আরো বলেন, ২০২৪ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হবে। এ সময় বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উত্তরণ হলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে এলডিসি হিসেব রপ্তানিতে ৭০০ কোটি ডলারের শুল্কমুক্ত সুবিধা হারাবে। অন্যদিকে সম্ভাবনাময় হালাল পণ্যে রপ্তানি করা গেলে এ সময় কৃষি রপ্তানিতে এক হাজার কোটি ডলারের বেশি আয় করা সম্ভব। ফলে ঘাটতি পূরণ করে আরো ৩০০ কোটি ডলারের বেশি আয় হবে বলে ধারণা করছেন তারা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যসচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী হালাল পণ্যের বিশাল বাজার সৃষ্টি হয়েছে। দিন দিন এ বাজার আরো বড় হচ্ছে। আমাদের হালাল পণ্য রপ্তানির সক্ষমতা রয়েছে, এ সুযোগ কাজে লাগাতে হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘রপ্তানি বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য নতুন রপ্তানি পণ্য ও বাজার সম্প্রসারণের বিকল্প নেই। হালাল পণ্যসহ সকল পণ্যের সার্টিফিকেশন সক্ষমতা অর্জন ও রপ্তানি বৃদ্ধি করতে হবে।’
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আইআইটি) মো. হাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে কর্মশালায় মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামানের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) মো. ওবায়দুল আজম প্রমুখ।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/১২নভেম্বর, ২০২০)