লালমনিরহাটে পিটিয়ে হত্যা: কোরআন অবমাননার প্রমাণ মেলেনি
লালমনিরহাট প্রতিনিধি: লালমনিরহাটের বুড়িমারীতে শহিদুন্নবী জুয়েলকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় প্রতিবেদন জমা দিয়েছে জেলা প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটি। জুয়েলের বিরুদ্ধে কোরআন অবমাননার প্রমাণ মেলেনি বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক আবু জাফরের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি। প্রতিবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
উল্লেখ্য, গত ২৯ অক্টোবর লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে কোরআন অবমাননার অভিযোগে শহিদুন্নবী জুয়েলকে পিটিয়ে হত্যা করেন স্থানীয়রা। পরে তার লাশ পুড়িয়ে ফেলা হয়।
এ ঘটনায় ৩০ অক্টোবর লালমনিরহাটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট টিএমএ মমিনকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন—অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম এবং ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক সাইদুল ইসলাম। কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। পরে প্রতিবেদন দাখিলের সময় নয় দিন বাড়ানো হয়।
গতকাল বুধবার (১১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় তদন্ত কমিটির প্রধান টিএমএ মমিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘সময়মতো তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে। কিন্তু জেলা প্রশাসক মহোদয় অফিসের বাইরে থাকায় বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) সকালে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে। বুড়িমারীর ওই মসজিদে কোরআন অবমাননার সত্যতা পাওয়া যায়নি। এটি স্রেফ গুজব ছিল। গুজব ছড়িয়ে জুয়েলকে পিটিয়ে হত্যা করে তার মরদেহ পোড়ানো হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘৫০ জনের লিখিত ও মৌখিক বক্তব্য নিয়ে তদন্ত কমিটি সাতটি সভা করে প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে। ৬ পাতার তদন্ত প্রতিবেদনের সঙ্গে আরও ৭৩ পাতা সংযুক্ত করা হয়েছে। প্রতিবেদনে চারটি সুপারিশ করা হয়েছে।’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তদন্ত কমিটির সদস্য সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘বিচারকাজের প্রয়োজনে তদন্ত সংস্থা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে প্রতিবেদনটি নিতে পারবে।’
সাংবাদিকদের অপর প্রশ্নের জবাবে তদন্ত কমিটির আরেক সদস্য রবিউল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনার গভীরে যেতে এবং নিবিড় পর্যবেক্ষণের জন্য আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া প্রায় ২০টি ভিডিও ক্লিপ সংগ্রহ করেছি। এসব দেখে অনেক তথ্য-উপাত্ত পেয়েছি।’
জুয়েল হত্যার ঘটনায় নিহতের চাচাত ভাই সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে ৩১ অক্টোবর একটি মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় ৩২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ১০ জনকে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। সব আসামিই বুড়িমারী এলাকার বাসিন্দা।
ওই ঘটনায় আরও দুটি মামলা হয়েছে। সরকারি কাজে বাধা ও পুলিশ সদস্যদের আহত করার অভিযোগে একটি মামলা করেছে পুলিশ। ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে ভাঙচুরের অভিযোগে আরেকটি মামলা করা হয়েছে।
শহিদুন্নবী জুয়েল রংপুর শহরের শালবন মিস্ত্রীপাড়া এলাকার আব্দুল ওয়াজেদ মিয়ার ছেলে।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/১২নভেম্বর, ২০২০)