সাগর আনোয়ার, দিরিপোর্ট২৪ : বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় বেড়ে গেছে কূটনীতিকদের তৎপরতা। বিভিন্ন সেমিনার-সিম্পোজিয়ামে বক্তব্যের পাশাপাশি বিবৃতির মাধ্যমেও বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে তাদের উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার কথা জানাচ্ছেন। প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে ঘন ঘন বৈঠকসহ নানা তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে যখন দেশের প্রধান দুইদল সাংঘর্ষিক অবস্থানে তখন হঠাৎ করেই বিদেশি কূটনীতিকদের এমন তৎপরতা ও দৌড়ঝাপে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন দেশের বিশিষ্ট নাগরিক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা।

পশ্চিমা দুইটি প্রভাবশালী দেশ শনিবারও বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের দূতাবাস থেকে পৃথক বিবৃতিতে বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে গঠনমূলক সংলাপের মাধ্যমে দুই দলকেই অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনকালীন সরকার পদ্ধতি বের করার আহ্বান জানিয়েছে।

এছাড়া দুই দলের মধ্যে সমঝোতার জন্য চলতি মাসের ১৬ তারিখ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিশাল ঢাকা আসছেন। এমনকি দেশের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থার বিস্তারিত জানাতে যুক্তরাষ্ট্র সফরে রয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনা।

এমনকি দুই প্রধান দলের নেত্রীকে সমঝোতায় আসার জন্য ইতোমধ্যে টেলিফোন করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন। আর ৮ সেপ্টেম্বর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি দুই নেত্রীকে চিঠি পাঠান ও টেলিফোনে আলাপ করেন।

এদিকে একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের রাজনীতিতে বিদেশি রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রদূতরা এমন হস্তক্ষেপ করতে পারেন কি না এ প্রশ্নটি এখন উঠে এসেছে সচেতন নাগরিকদের মনে। তারা বলছেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক সমস্যা এদেশের রাজনীতিবিদরাই সমাধান করবেন। বিদেশি রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ এদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নুরুল আমীন বেপারি দিরিপোর্ট২৪কে বলেন, ‘ভারত যেভাবে একটি বিশেষ দলকে সমর্থন দিচ্ছে তা সরাসরি বাংলাদেশের রাজনীতিতে নগ্ন হস্তক্ষেপ। ভারত মুক্তিযুদ্ধে আমাদের সহযোগিতা করেছে সত্য। তাই বলে ভারতের সঙ্গে আমাদের প্রভু আর ভৃত্যের সম্পর্ক হতে পারে না। সম্পর্কটা হওয়া উচিত সম-মর্যাদার।’

তিনি বলেন, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাই কমিশনাররা ও তাদের পত্রিকা যেভাবে বাংলাদেশের একটি বিশেষ দলকে সমর্থন দিচ্ছে তাতে মনে হওয়াটা স্বাভাবিক ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক রাষ্ট্রীয় না দলীয়। এটা আমাদের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ।’

একই বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন দিরিপোর্ট২৪কে বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিদেশিদের হস্তক্ষেপ সত্যিই দুঃখজনক এবং জাতি হিসেবে আমাদের জন্য লজ্জাজনক। কিন্তু এটাও সত্য আমরা রাজনীতিবিদরাই বিদেশিদের সে সুযোগ করে দিচ্ছি। আমাদের দেশের রাজনৈতিক সমস্যা আমাদের রাজনীতিবিদদেরই সমাধান করা উচিত। অন্যথায় বর্তমান অবস্থায় একে অন্যকে মারার জন্য খাল কাটলে যে কোনো সময় কুমিরও চলে আসতে পারে।’

(দিরিপোর্ট২৪/এসএ/এনডিএস/এমডি/নভেম্বর ১০,২১০৩)