ইউএনওকে হুমকি, উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে জিডি
লালমনিরহাট প্রতিনিধি: লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিনকে প্রাণনাশের হুমকি ও যৌথ স্বাক্ষরের চেকের পাতা ছিড়ে ফেলার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েসের বিরুদ্ধে। এসব ঘটনায় উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে থানায় দুটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে।
রবিবার বিকেলে আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের স্ট্যানোটাইপিস্ট হাবিবুর রহমান জিডি দুটি করেন।
ইউএনও মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন তাকে হুমকি দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
অন্যদিকে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
জিডি সুত্রে জানা গেছে, আদিতমারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে বিধিবিধান ও নীতিমালা লংঘন করে বিভিন্ন কাজের জন্য কর্মকর্তাদের চাপ দিয়ে আসছেন। তার কথা না শুনলে সেই দপ্তরের কর্মকর্তাকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দসহ প্রাণনাশের হুমকি দেন তিনি। উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড, ভিজিডি, মাতৃত্বভাতা, কৃষি প্রণোদনা, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর সুবিধাভোগীর তালিকায় নিজের অংশ দাবি করেন চেয়ারম্যান।
বিধি বহির্ভূতভাবে পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ না দেয়ায় এবং প্রাক্কালন কাজ সমাপ্ত না হতেই বিল পরিশোধ না করায় সম্প্রতি উপজেলা প্রকৌশলী ও সহকারী প্রকৌশলীকে রুমে বেঁধে পেটানোর হুমকি দেন চেয়ারম্যান। শুধু তাই নয়, তার কথামত কাজ না করায় একজন মহিলা কর্মকর্তাকে বহিরাগতদের দিয়ে মানহানী করার হুমকি দিয়েছেন বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। সব দপ্তরের কর্মকর্তাদের সাথে ঘটে যাওয়া অপ্রীতিকর ঘটনা তুলে ধরা হয় অভিযোগে।
অভিযোগে আরো বলা হয়, বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) মাসিক সমন্বয় সভায় ভিজিডি ও মাতৃত্ব ভাতার তালিকায় নিজের অংশ দাবি করেন উপজেলা চেয়ারম্যান। যা বিধি সম্মত না হওয়ায় ইউএনও নাকচ করে দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সভা অসমাপ্ত রেখে চলে যান চেয়ারম্যান। এরপর চেয়ারম্যান ইউএনও অফিসের সিসিটিভি ক্যামেরা লোক মারফত খুলে ফেলেন। ক্যামেরা খুলে ফেলার কারণ জানতে চাইলে ইউএনওকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস।
এ সময় চেয়ারম্যান ইউএনওকে বলেন, বেশি কথা বললে পিটিয়ে নরসিংদী পাঠিয়ে দেবো। উপজেলা পরিষদ কি তোর বাবার সম্পত্তি? উপজেলা পরিষদ কি তুই চালাবি? এভাবে গালমন্দ করে হত্যার হুমকি দেয়া হয় ইউএনওকে।
এ ঘটনায় ওই দিন রাতে ১৭জন কর্মকর্তা ও ইউএনও মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।
এসব ঘটনায় নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তা চেয়ে রবিবার বিকেলে আদিতমারী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন ইউএনও মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন। যার নং –৫৫৮। জিডিতে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
ঘটনার পর থেকে উপজেলা পরিষদ চত্বরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এ দিকে রবিবার সকালে উপজেরা পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস অফিসে এসে তার স্টানোটাইপিস্ট হাবিবুর রহমানের কাছ থেকে ফাইলপত্র নিয়ে ১৯ টি চেকের পাতা প্রকাশ্যে ছিঁড়ে ফেলেন। উপজেলা পরিষদের রাজস্ব তহবিলের যৌথ স্বাক্ষরিত সোনালী ব্যাংক আদিতমারী শাখার হিসাব নং ৩৩০০৪৯৬৪ এর ১৯টি চেক পাতা ছিঁড়ে ফেলেন তিনি।
এ ঘটনায় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের স্টানোটাইপিস্ট হাবিবুর রহমান রবিবার (১৫ নভেম্বর) আদিতমারী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। যার নং ৫৫৯।
আদিতমারী থানার ওসি সাইফুল ইসলাম বলেন, ইউএনও মহোদয় নিরাপত্তা চেয়ে একটি ও চেক পাতা ছিঁড়ে ফেলার ঘটনায় অপর একটি জিডি করা হয়েছে। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ছাড়াও উপজেলা পরিষদে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
অপর দিকে ইউএনওসহ ১৭জন কর্মকর্তার দেয়া অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। রবিবার তদন্ত কর্মকর্তা লালমনিরহাটের স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব রফিকুল ইসলাম উপজেলা পরিষদ হলরুমে বিভিন্নজনের স্বাক্ষাৎকার নেন। তবে তিনি সাংবাদিকদের সামনে কোনো মন্তব্য করেননি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন বলেন, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বিভিন্ন সময় আমাকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছেন। গত বৃহস্পতিবার প্রকাশ্যে হুমকি দিয়েছেন। তাই আমি নিরাপত্তা চেয়ে থানায় জিডি করেছি। এছাড়াও আমার ও চেয়ারম্যানের যৌথ স্বাক্ষরিত ১৯টি চেকের পাতা তিনি ছিঁড়ে ফেলেছেন। সেটা নিয়েও জিডি করা হয়েছে।
সোমবার দুপুরে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, কর্মকর্তাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/১৬নভেম্বর, ২০২০)