কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: দেশ স্বাধীন হওয়ার ৪৯ বছর পরেও সম্মানিভাতা হয়নি কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা চাঁন্দ প্রামাণিকের। তিনি ফিলিপনগর ইউপির বাহিরমাদী গ্রামের বীশু প্রামাণিকের ছেলে। দিনমজুরি করেই দিনাতিপাত করছেন চাঁন্দ প্রামাণিক।

দেশ স্বাধীন হবার বছর খানেক পরে চাঁন্দ প্রামাণিক নিজ গ্রাম দৌলতপুর উপজেলার বাহিরমাদী ছেড়ে চলে যান পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার সাহাপুর নামক গ্রামে। সেখানে সংসার পেতে তিনি জীবনযাপন শুরু করেন।

চাঁন্দ প্রামাণিক এখন এক ছেলে ও তিন মেয়ের বাবা। বৃদ্ধ বয়সেও দিনমজুরি করেই অভাব অনটনে চলছে তার সংসার। ২০১৭ সাল থেকে সারাদেশে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই শুরু হলে খোঁজ শুরু হয় ভারতীয় তালিকাভুক্ত দৌলতপুরের মুক্তিযোদ্ধা এফ-৬৬ নম্বর ধারী ব্যক্তির, আর সেখান থেকেই উঠে আসে চাঁন্দ প্রামাণিকের নাম।

কিন্তু নাম উঠে এলেও বাদ সাধে নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা প্রমাণ করার যুদ্ধ। দীর্ঘ তিন বছর বারবার দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর ইউনিয়ন পরিষদের প্রত্যয়নপত্রসহ জন্ম নিবন্ধন কার্ড জমা দিয়েও নতুন করে নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা প্রমাণ করার যুদ্ধে হেরে গেছেন ভারতীয় তালিকাভুক্ত এই বীর মুক্তিযোদ্ধা চাঁন্দ প্রামাণিক।

এদিকে বাংলাদেশ সরকারের স্বীকৃতি হিসেবে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে ভারতীয় তালিকা (সেক্টর-৮)-এ কুষ্টিয়ার যে তালিকা দেয়া হয়েছে সেখানে তার নাম ৫১২ নম্বর ক্রমিকে লেখা আছে। কিন্তু ওই তালিকা প্রকাশ হওয়ার পরে আজ পর্যন্ত সম্মানী ভাতা পাননি এই অসহায় বীর মুক্তিযোদ্ধা।

মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সম্মানিভাতা না পাওয়ার কারণ জানতে চাইলে চাঁন্দ প্রামাণিক কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে আমার দেশ স্বাধীন করার জন্য যুদ্ধে গেছিলাম। কিন্তু সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান করে স্বীকৃতি স্বরূপ যে সম্মানিভাতা দিচ্ছে, যেটা আমি প্রাপ্য সেটা আজ পর্যন্ত পাইনি।

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, সম্মানিভাতা চালু করার জন্য দৌলতপুর উপজেলা সমাজসেবা অফিসে তিন-চার বার আমার সব কাগজপত্রসহ আবেদন করার পরেও ভাতা চালু হয়নি। তাই আর সম্মানিভাতার জন্য আবেদন করব না। তবে যারা মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সম্মানিভাতা উত্তোলন করছে এবং বেআইনিভাবে এসব ভাতা উত্তোলন করতে যারা সাহায্য করেছে সবার বিচার চাই।

এ ব্যাপারে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ছানোয়ার হোসেন বলেন, হয়ত তার নাম ঠিকানার বানানে কোনো সমস্যা আছে। সে কারণেই বারবার আবেদন করা হলেও আবেদনটি মঞ্জুর করা হয় না।

নাম ঠিকানার বানানে সমস্যা না থাকার পরেও সম্মানিভাতার আওতায় না আসার কারণ জানতে চাইলে সমাজসেবা কর্মকর্তা বলেন, আমি শুধু আবেদন গ্রহণ করি। এর বেশি কিছু করার ক্ষমতা আমার নেই।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আক্তার বলেন, কোনো সমস্যার কারণে হয়ত তার সম্মানি ভাতার আবেদন মন্জুর হয়নি। তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে জানান।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/২২নভেম্বর, ২০২০)