দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নেতা মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার দুই মামলায় আগামী ৭ জানুয়ারি পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আজ সোমবার ঢাকা মহানগর হাকিম সত্যব্রত শিকদারের আদালত শুনানি শেষে এই আদেশ দেন।

এর আগে রাষ্ট্রদ্রোহিতার দুই মামলার দুই বাদীর জবানবন্দি গ্রহন করেন আদালত। এরপর শুনানি শেষে আদালত পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আদেশ দেন।

এদিন সকালে আদালত মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কেন্দ্রীয় সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল বাদী হয়ে মামুনুল হক, মোহাম্মদ জোনায়েদ ওরফে জুনায়েদ বাবুনগরী ও সৈয়দ ফয়জুল করিমকে আসামি করে তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার একটি মামলা করেন। এ মামলার অভিযোগে বলা হয়, 'আসামিরা ভিরু, মিথ্যুক, জ্ঞানপাপী, ধর্মের অপব্যবহারকারী, রাষ্ট্র ও সার্বভৌমত্ব বিনষ্টকারী বিদেশি জায়নবাদী শক্তির দালাল চক্র বটে। যারা তাদের অর্জিত জ্ঞানকে বাতিলের পথে পরিচালিত করে পবিত্র ধর্ম ইসলামকে ঢাল হিসাবে ব্যবহার নিজেদেরকে ধর্মগুরু হিসাবে আখ্যা দিয়ে দেশের অগনিত শান্তিপ্রিয় মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতি পবিত্র ধর্ম ইসলামের প্রতি অগাধ বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে তাদের সামনে এবং ফেসবুক ইউটিউব মারফত অগনিত বাঙালি মুসলমানদের কাছে নিজেদের বক্তব্য, ওয়াজ নসিহত মাহফিলের নামে প্রচার করে পবিত্র ধর্ম ইসলামের মিথ্যা আজগুবি বর্ণনা দিয়ে ইসলাম, মহানবী (সঃ) ও মদিনা সনদকে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানকে বিপরীত ও মুখোমুখি দাড় করে বিদেশি প্রপাগান্ডা বাস্তবায়নের হীন উদ্দেশ্যে নিজেদের জনপ্রিয়তা কাজে লাগিয়ে চটকদার, বিদ্বেষপূর্ণ কাল্পনিক, উত্তেজনাকর ও উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে বাঙ্গালী মুসলমান সমাজের মধ্যে দেশের মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও সংবিধান সম্পর্কে ঘৃণা বিদ্বেষ সৃষ্টি করে যোগসাজশে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে রাষ্ট্রদ্রোহমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত রয়েছে।'

অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয়, 'আসামি মামুনুল হক গত ১৩ নভেম্বর রাজধানীর তোফখানা রোডের বিএমএ ভবনের মিলনায়তনে বলেন, 'যারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের নামে মূর্তি স্থাপন করে তারা বঙ্গবন্ধুর সুসন্তান হতে পারে না। এই মূর্তি স্থাপন বন্ধ করুন। যদি আমাদের আবেদন মানা না হয়, আবারও তৌহিদী জনতা নিয়ে শাপলা চত্ত্বর কায়েম হবে।'

একইদিন আসামি সৈয়দ ফয়জুল করিম ধোলাইখালের নিকটে গেন্ডারিয়া নামক স্থানে তার নসিহত শুনতে আসা সাধারণ মুসলমানদের হাত উচু করে শপথ পড়িয়ে নেন যে, ' আন্দোলন করব, সংগ্রাম করব, জেহাদ করব। রক্ত দিতে চাই না, দেওয়া শুরু করলে বন্ধ করব না। রাশিয়ার লেলিনের বাহাত্তর ফুট মূর্তি যদি ক্রেন দিয়ে তুলে সাগরে নিক্ষেপ করতে পারে তাহলে আমি মনে করি শেখ সাহেবের এই মূর্তি আজকে হোক, কালকে হোক খুলে বুড়িগঙ্গায় নিক্ষেপ করবে বলে সবাইকে শপথ পড়ান। আসামি মোহাম্মদ জোনায়েদ ওরফে জোনায়েদ বাবুনগরী হাটহাজারীতে বলেন, 'মদিনা সনদে যদি দেশ চলে তাহলে কোনো ভাস্কর্য থাকতে পারে না।' তিনি সরকারকে হুশিয়ারি করে বলেন, ' ভাস্কর্য নির্মাণ পরিকল্পনা থেকে সরে না দাড়ালে তিনি আরেকটি শাপলা চত্ত্বরের ঘটনা ঘটাবেন এবং ঐ ভাস্কর্য ছুড়ে ফেলবেন।'

অভিযোগে আরো বলা হয়, 'আসামিরা এরূপ ভাস্কর্য বিরোধী বক্তব্য দিয়ে ইসলাম ধর্মকে কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা ও সুযোগ সুবিধা লাভের হীন উদ্দেশ্যে বিদেশী শক্তির সাথে হাত মিলিয়ে ধর্মের লেবাসে সাধারণ মুসলমানদের উস্কানি দিয়ে, ক্ষেপিয়া তুলে রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে ঘৃণা ও শত্রুর ভাব সৃষ্টি করেছে। যার ফলশ্রুতিতে আসামিদের নির্দেশে মধুর ক্যান্টিনে অবস্থিত মধুদার ভাস্কর্য ও কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর নির্মিত ভাস্কর্যসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভাস্কর্য ভাঙা হচ্ছে বিধায় এরূপ প্রচারণা ও উস্কানী রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল। তাই বাদী আদালতে এসে মামলা আবেদন করে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেন।'

অনুদিকে বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠা ও নির্বাহী সভাপতি এডভোকেট আবদুল মালেক বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নেতা মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হককে আসামি করে আরেকটি মামলা করেন। এ মামলার অভিযোগে বলা হয়, 'আসামি মামুনুল হক গত ১৩ নভেম্বর রাজধানীর তোফখানা রোডের বিএমএ ভবনের মিলনায়তন অনুষ্ঠানে এক আলোচনাসভায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙে ফেলে দেওয়ার হুমকি দেন। এসময় তিনি তার বক্তব্যে বলেন, 'লাশের পর লাশ পড়বে, তবুও বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য গড়তে দেওয়া হবে না।' আর এই বক্তব্যের ফলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাবমূর্তি ও সম্মান ক্ষুণ্ণ করা হয়েছে।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/০৭ডিসেম্বর, ২০২০)