নোয়াখালী প্রতিনিধি: নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার মেঘনা নদীতে বর যাত্রীবাহী ট্রলার ডুবির ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ৮যাত্রী নিখোঁজ রয়েছে। যার মধ্যে ৭ জনই শিশু। ঘটনার পর নববধূ, তিন শিশুসহ ৭জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় অন্তত ৫৫জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানা গেছে। হতাহতের ঘটনায় উপকূলের স্বজনহারা পরিবারে চলছে শোকের মাতম।

বুধবার সকালে হাতিয়া থানার ওসি আবুল খায়ের বলেন, স্থানীয় ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ট্রলার ডুবির ঘটনায় এখনো ৮জন নিখোঁজ রয়েছে। নিখোঁজদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খবর নেয়া হচ্ছে। উদ্ধার অভিযান অব্যহত রয়েছে।

নিখোঁজ যাত্রীরা হচ্ছেন, হাতিয়ার নলেরচর (চানন্দি) ইউনিয়নের আল আমিন গ্রামের নাছির উদ্দিনের স্ত্রী জাকিয়া বেগম (৫৫), একই গ্রামের কাদের উদ্দিনের ছেলে মোহাম্মদ হাসান (৭), নার্গিস বেগম (৪), রুবেল হোসেনের মেয়ে হালিমা বেগম (৫), পূর্ব আজিমপুর গ্রামের রিয়াজ উদ্দিনের মেয়ে নিহা বেগম (১), ভয়ারচর গ্রামের ইলিয়াস উদ্দিনের ছেলে আমির হোসেন (২), ভোলার মনপুরার কলাতলী গ্রামের মাইন উদ্দিনের মেয়ে লামিয়া বেগম (৩) ও একই গ্রামের আব্দুর রহিমের ছেলে আলিফ উদ্দিন (২)।

নিহতরা হচ্ছেন, আল আমিন গ্রামের গ্রামের ইব্রাহিম সওদাগরের মেয়ে ও বিয়ের কনে তাসলিমা বেগম (২১), নোয়াখালী সদর উপজেলার বদরপুর গ্রামের আকবর হোসেনের মেয়ে আফরিন আক্তার লামিয়া (২), আলমগীরের মেয়ে লিলি আক্তার (৮) ও একই গ্রামের আক্তার হোসেনের মেয়ে আসমা বেগম (১৯), হাতিয়ার নাছিরপুর কালাদুর বাজার এলাকার ফয়েজ উল্যার মেয়ে হোসনে আরা বেগম রুপা (৫), পূর্ব আজিম নগর গ্রামের আলা উদ্দিনের স্ত্রী রাহেনা বেগম (৩০) ও একই গ্রামের খোরশেদ আলমের স্ত্রী নূর জাহান (৬৫)। নলেরচর (চানন্দি) প্রশাসক আব্দুর রহিম জানান, ট্রলার ডুবির পর ট্রলারে থাকা যাত্রীদের পরিবার ও আত্মীয় স্বজনদের সাথে কথা বলে ৮জন নিখোঁজের বিষয়টি আমরা নিশ্চিত হয়েছি। নিখোঁজদের সন্ধানে প্রশাসনের পাশাপাশি স্থানীয় লোকজন কাজ করছে।

হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান হোসেন বলেন, নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে সরকারের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা করে নগদ অর্থ সহায়তা দেয়া হবে। এছাড়াও নিখোঁজদের মধ্যে কারো লাশ পাওয়া গেলে ওই পরিবারকেও আর্থিক সহায়তা দেয়া হবে।

প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার দুপুরে ভোলার মনপুরা উপজেলার কলাতলী গ্রামের বেলাল মেস্ত্রী ছেলে ফরিদ উদ্দিন বিয়ে করতে হাতিয়ার চানন্দি ইউনিয়নের আল আমিন গ্রামে আসেন। বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর বিকাল ৩টার দিকে ৭০-৭৫জন যাত্রী নিয়ে ট্রলারযোগে চানন্দি ঘাট থেকে মনপুরার কলাতলী গ্রামের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন তারা। পথে বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে মেঘনা নদীর টাংকিরখাল-ঘাসিয়ারচরের মাঝামাঝি এলাকায় তীব্র স্রোতের কবলে পড়ে তাদের ট্রলারটি উল্টে যায়। এসময় ট্রলারে থাকা বর ও নববধূসহ সব যাত্রী নদীতে পড়ে যায়।

এদের মধ্যে কয়েকজন সাঁতরে কূলে উঠে আসলেও বেশির ভাগ যাত্রী নিখোঁজ হয়। পরে স্থানীয় লোকজন, পুলিশ, নৌ-পুলিশ ও কোস্টগার্ড সদস্যরা ট্রলার ও নৌকার মাধ্যমে রাত পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান চালিয়ে বরসহ অন্তত ৫৫জনকে জীবিত ও নববধূসহ ৭জনের লাশ উদ্ধার করে।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/১৬ডিসেম্বর, ২০২০)