রাতদুপুরে চায়ের কেটলি হাতে এএসপি, চালকেরা হতবাক
রাত তিনটা। পুলিশ সদস্যরা বেছে বেছে নৈশ কোচ এবং লং-রুটের ট্রাকগুলোকে দাঁড় করাচ্ছেন একের পর এক। এরপর গাড়ি থেকে নামানো হচ্ছে চালক ও তার সহকারীকে। বেশিরভাগ চালকই হয়তো এটাকে পুলিশের ‘চাঁদাবাজির নয়া কৌশল’ ভেবে বিভিন্ন অজুহাতে নামতে চাচ্ছেন না। কিন্তু পরে যখন দেখছেন- কেটলি হাতে চা-কফি নিয়ে এগিয়ে আসছেন পুলিশ সদস্যরা, তখনই ভুল ভাঙে তাদের।
সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে এবং যানজট ও সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস করতে গত বেশ কিছুদিন ধরেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (রাউজান-রাঙ্গুনিয়া সার্কেল) মো. আনোয়ার হোসেন শামীম। এবার রাত্রিকালীন সড়ক দুর্ঘটনার প্রধানতম কারণ চালকদের ঘুমঘুম চোখে গাড়ি চালানো বন্ধে তিনি চালু করলেন নতুন এক সচেতনতামূলক উদ্যোগ 'রিফ্রেশমেন্ট কর্ণার'। নৈশ কোচ ও ট্রাক চালকদেরকে এই অস্থায়ী বিশ্রামাগারে থামিয়ে গরম পানিতে মুখ ধোয়া, চা-বিস্কুট খাওয়ানোর পাশাপাশি চোখে ঘুম জড়ানো অবস্থায় গাড়ি চালানোর বিপদ সম্পর্কে উপদেশ দিচ্ছেন সার্কেল এএসপি।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়- মূলত গত ১ মাস ধরেই উত্তর চট্টগ্রামের প্রাণ খ্যাত চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক এবং চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি আঞ্চলিক মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্ট জুড়ে এই ব্যতিক্রমী কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। শুক্রবার (১৮ ডিভেম্বর) রাত ৩টার সময় এই প্রতিবেদক চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে গিয়ে দেখতে পান যে, রাউজান পাহাড়তলী বাজার সংলগ্ন এলাকায় রাস্তার পাশে তৈরি হয়েছে পুলিশের এই বিশেষ অস্থায়ী বিশ্রামাগার। গাড়ি থেকে নামানোর পর বেশ কিছুক্ষণ চালক ও সহকারীদের সঙ্গে গল্প জুড়ছেন সার্কেল এএসপিসহ অন্য পুলিশ সদস্যরা। তাদের ঝিমুনি প্রতিরোধে সেখানে রাখছেন হাত-মুখ ও ঘাড়ে পানি দিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থাও। তারপর ওয়ানটাইম কাপে চা, সঙ্গে বিস্কুট খাইয়ে, সাবধানে গাড়ি চালানোর পরামর্শ দিয়ে তবেই গন্তব্যস্থলের দিকে রওনা করিয়ে দিচ্ছেন তাদেরকে।
এ প্রসঙ্গে এএসপি মো. আনোয়ার হোসেন শামীম জানান, "শীতের রাতে গাড়ি চালাতে চালাতে অনেক চালকেরই চোখ বন্ধ হয়ে আসে। অসাবধানতায় প্রায়ই ঘটে যায় ছোট-বড় দুর্ঘটনা। এ প্রেক্ষিতে চালকদের সচেতন করার লক্ষ্যেই মূলত মুখ ধোয়ার জন্য গরম পানি এবং চা-বিস্কিটের ব্যবস্থা সহযোগে আমাদের এই রিফ্রেশমেন্ট কর্ণার। কিন্তু আমাদের পক্ষে তো সকল চালকের মুখোমুখি হওয়া বা সবার সাথে কথা বলা সম্ভব নয়। তাই যাদেরকে পাচ্ছি, তাদেরকেই অনুরোধ করছি, তারা যেন তাদের সকল সহকর্মীর নিকট আমাদের বার্তটি পৌঁছে দেন।"
এই গভীর রাতে চোখেমুখে পানি দেওয়ার পর হাতে গরম চা ও বিস্কুট পেয়ে স্বাভাবিকভাবেই হাসি ফুটছে চালকদের মুখে। তাঁরা জানান, “এটা পুলিশের খুবই ভালো উদ্যোগ। অনেক সময়ই ঘুম চলে আসে গাড়ি চালানোর সময়। পুলিশ যে আমাদের জন্য এতটা ভাবছে- এটা সত্যিই গর্বের ব্যাপার”।
দেশের সকল গুরুত্বপূর্ণ সড়ক-মহাসড়কে স্থায়ীভাবে এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন বলেও মত গাড়ি চালকদের।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/১৯ ডিসেম্বর, ২০২০)