দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: করোনা মহামারি মোকাবিলায় জীবন বাজি রেখে চিকিৎসাসেবা দেওয়া চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সংবর্ধনা দিয়েছে দেশের ইলেকট্রনিক্স জায়ান্ট ওয়ালটন।

শুক্রবার (ডিসেম্বর ২৫) বিকেলে রাজধানীর ওয়ালটন করপোরেট অফিসে ‘হেলথকেয়ার হিরোস’ শীর্ষক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের পরিচালক এস এম মাহবুবুল আলম। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন—প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ, বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি‘র সভাপতি অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খান, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেনসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসক, পরিচালক ও নার্স।

করোনা মহামারির মধ্যে জীবন বাজি রেখে দায়িত্ব পালনকারী দেশের সব চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞাস্বরূপ ৩০ জন চিকিৎসক ও ৫ জন নার্সকে সম্মাননা ক্রেস্ট দেয় ওয়ালটন। সেই সঙ্গে প্রত্যেককে দেওয়া হয় অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ওয়ালটন ওয়াশিং মেশিন। দায়িত্ব পালনের সময় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া দুই চিকিৎসকের পরিবারকে দেওয়া হয় ১ লাখ টাকা করে।

অনুষ্ঠানে ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের পরিচালক এস এম মাহবুবুল আলম বলেন, ‘সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে জীবন বাজি রেখে করোনাভাইরাস মহামারির বিভীষিকাময় পরিস্থিতি মোকাবিলা করছেন চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। এ সময় কয়েক হাজার চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ‌্যকর্মী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ১৫৯ জন চিকিৎসক। তাদের এই বিশাল আত্মত্যাগ প্রশংসার দাবিদার। তাই প্রাতিষ্ঠানিক দায়বদ্ধতা থেকে হেলথকেয়ার হিরোদের সংবর্ধনার দেওয়ার এই উদ্যোগ। যারা সংবর্ধনা পেলেন তাদের বাইরে দেশের সব ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী ও টেকনিশিয়ানদেরও ধন্যবাদ জানাচ্ছে ওয়ালটন।’

করোনা মহামারিতে চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের বিশাল ত্যাগের কথা বিবেচনা করে তাদের বিশেষ সম্মানানা দেওয়ায় ওয়ালটনকে ধন্যবাদ জানান বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ সৈয়দ আনোয়ার হোসেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, ওয়ালটনকে অনুসরণ করে অন্যান্য ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোও আগামীতে এ ধরনের প্রশংসনীয় উদ্যোগ নেবে।

অনুষ্ঠানে চিকিৎসক ও নার্সরা করোনা মহামারি মোকাবিলায় তাদের আত্মত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ বিশেষ সম্মাননা দেওয়ায় ওয়ালটনকে ধন্যবাদ জানান।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, করোনা সংক্রমণের শুরুতেই সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে ওয়ালটন। চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সাংবাদিকদের মধ্যে বিনামূল্যে বিপুল পরিমাণ প্রোটেকটিভ স্যুট, মেডিক্যাল মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস, হেড কভার ও স্যু-কভার, সেফটি গগলস ইত্যাদি সুরক্ষা সরঞ্জাম ও পিপিই সরবরাহ করেছে ওয়ালটন। লকডাউনের সময় ওয়ালটন প্লাজা ও পরিবেশকদের মাধ্যমে দেশের সর্বত্র খাদ্য সামগ্রীসহ হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও সাবান বিতরণ করা হয়। এছাড়া, প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে ৩ কোটি টাকা অনুদান দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনকেও অর্থ সহায়তা দিয়েছে ওয়ালটন। প্রত্যেক কর্মীর চাকরির নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি লকডাউনের শুরুতেই কর্মীদের মধ্যে ৭৭ কোটি টাকা প্রফিট বোনাস দিয়েছে ওয়ালটন।

ওয়ালটনের কাছ থেকে সংবর্ধনাপ্রাপ্ত চিকিৎসকরা হচ্ছেন- বাংলাদেশ আর্মড ফোর্সেস, ঢাকা হাসপাতালের কনসালটেন্ট ফিজিসিয়ান জেনারেল মেজর জেনারেল (ডা) মো. আজিজুল ইসলাম, ঢাকা সিএমএইচ এর কমান্ডেন্ট ব্রিগ. জেনারেল অধ্যাপক ডা তৌফিকুল হাসান সিদ্দিকী, ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিন বিভাগের উপদেষ্টা বিশেষজ্ঞ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অধ্যাপক (ডা.) মো. মাসুদুল আলম মজুমদার, পালমোনোলজি বিভাগের লে. ক. (ডা.) এ কে এম ফাইজুল হক এবিপি, এসপিপি, পালমোনোলজির উপদেষ্টা বিশেষজ্ঞ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (ডা.) মো. আজিজুর রহমান, ঢাকা কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ও অ্যানেসথেসিয়োলজি অ্যান্ড আইসিইউ বিভাগের প্রধান ডা. শাহজাদ হোসেন, পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (ডা.) জামিল আহমেদ, ঢাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি’র (বিএসএমএমইইউ) ইন্ট্যারনাল মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ আরাফাত, হেপাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নিল), ইন্ট্যারনাল মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ তানভীর ইসলাম ও সহকারী অধ্যাপক ডা. নাজমুল হাসান, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সুদীপ রঞ্জন দেব, অধ্যাপক ডা. মুজিবুর রহমান, অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির, অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ রোবেদ আমিন, পেডিয়াট্রিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সায়ীদা আনোয়ার, চট্টগ্রাম ফিল্ড হসপিটাল, চট্টগ্রামের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া, মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. উজ্জল মল্লিক, শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রো লিভার ইন্সটিটিউট অ্যান্ড হাসাপাতাল, ঢাকা’র পরিচালক অধ্যাপক ডা. ফারুক আহমেদ, কুয়েত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ সরকারি হাসপাতাল উত্তরা, ঢাকা সার্জারি বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. সাদিয়া সাইমিন সিদ্দিকা, ইন্সটিটিউট অব এপিডমায়োলজি, ডিজেজ কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ (আইডিসিআর) মহাখালি, ঢাকা পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন, সেন্ট্রাল পুলিশ হাসপাতাল, ঢাকা ডেপুটি ডিরেক্টর ও সুপারিন্টেন্ডেন্ট অব পুলিশ ডা. মো. এমদাদুল হক, বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজ, ঢাকা’র মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. তারেক আলম, সিলেট কিডনী ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. জিয়াউদ্দিনের পক্ষে জেনারেল সেক্রেটারি আলী রেজা চৌধূরী, ইব্রাহীম কার্ডিয়াক হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইন্সটিটিউট, ঢাকা’র ভাসকিউলার সার্জারি বিভাগের প্রধান সহযোগি অধ্যাপক ডা. এসএমজে সাকলায়েন রাসেল, বগুড়া টিএমএসএস হসপিটালের পরিচালক মো. আব্দুল বাশার ভুঁইয়া, বাংলাদেশ পাবলিক এডমিনিস্ট্রেশন অ্যান্ড ট্রেইনিং সেন্টার, সাভারের মেডিক্যাল অফিসার মো. মোরশেদ, র‌্যাব ফোর্সেস হেডকোয়ার্টার্স উত্তরা, ঢাকা’র অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর জেনারেল (অপারেশন) কর্নেল তোফায়েল মুস্তফা সরওয়ার বিপিএম, পিএসসি।

ওয়ালটনের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেয়া নার্সদের মধ্যে রয়েছেন- স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিমান বন্দর হেলথ ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র স্টাফ নার্স নাসরিন খানম, ঢাকা সিএমএইচের ক্রিটিক্যাল কেয়ার সেন্টারের সিনিয়র নার্স মেজর (এএফএনএস) ক্রইফুর মংগচু খায়াং সুপ, ঢাকা এমএইচ শমরিতা হসপিটাল অ্যান্ড মেডিক্যাল কলেজের ল্যাব টেকনিশিয়ান এম এ কুদ্দুস আকন্দ, ঢাকার টিবি হসপিটাল শ্যামলীর সিনিয়র স্টাফ নার্স জাবেদা ভূঁইয়া, ঢাকা স্যার সলিমুল্লাহ মেক্যিাল কলেজের সিনিয়র স্টাফ নার্স নাসরিন আক্তার।

অনুষ্ঠানে করেনাভাইরাসের আক্রান্ত হয়ে মৃতুবরণকারী বাংলাদেশ পাবলিক এডমিনিস্ট্রেশন অ্যান্ড ট্রেইনিং সেন্টার, সাভারের মেডিক্যাল অফিসার মরহুম ডা. রাশেদ সরওয়ার আলম এবং বগুড়া টিএমএসএস হসপিটালের মেডিসিন ইউনিট বিভাগের প্রধান মরহুম অধ্যাপক ডা. একেএম মাসুদুর রহমানের পরিবারকে ১ লাখ টাকা করে দেওয়া হয়।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/২৭ ডিসেম্বর, ২০২০)