সংসদে দুদক বিল পাস
অনুমোদন ছাড়া সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা নয়
দিরিপোর্ট২৪ প্রতিবেদক : সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, জজ ও ম্যাজিস্ট্রেটদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে সরকারের পূর্বানুমোদনের বিধান রেখে বহুল আলোচিত ‘দুর্নীতি দমন কমিশন (সংশোধন) বিল- ২০১৩’ জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। সংসদ কার্যে রোববার রাতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বিলটি পাসের জন্য উত্থাপন করলে এটি কণ্ঠভোটে পাস করা হয়। বিলটি পাসের সময় সংশোধনী প্রস্তাব গ্রহণের মাধ্যমে এ সংক্রান্ত বিধান যুক্ত করা হয়েছে।
সংসদ অধিবেশনের কার্যসূচি থেকে দু-দফা প্রত্যাহারের পর রবিবার তা আবারও কার্যসূচিভুক্ত করা হয়। বিলটির উপর বিরোধীদলের সদস্যরা জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব জমা দিলেও অনুপস্থিতির কারণে তা উত্থাপিত হয়নি।
তবে বিলটি পাসের আগে বেশকিছু সংশোধনী গ্রহণ করা হয়। আওয়ামী লীগের সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী ও নুরুল ইসলাম সুজন এবং জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু সংশোধনী প্রস্তাবগুলো উত্থাপন করেন।
উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর সংশোধনী প্রস্তাব ছিল ‘২০০৪ সালের ৫ নম্বর আইনের ধারা ৩২-এর পরিবর্তে নিম্নরূপ ৩২ ধারা প্রতিস্থাপিত হবে। ৩২ (ক) তে বলা হয়েছে, ‘সরকারি কর্মচারী, জজ ও ম্যাজিস্ট্রেটদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ১৯৭ এর বিধান আবশ্যিক প্রতিপালন করতে হবে’। অর্থাৎ সরকারি কর্মচারী, জজ ও ম্যাজিস্ট্রেটদের বিরুদ্ধে সরকারের অনুমোদন ছাড়া দুর্নীতির মামলা দায়ের করা যাবে না।
জানা যায়, সংসদে উত্থাপিত বিলে একই বিধান রাখা হলেও বিভিন্ন মহলের দাবির মুখে সংসদীয় কমিটি ধারাটি বাতিলের সুপারিশ করে। আর এ সংক্রান্ত সুপারিশ চূড়ান্ত করার আগে সংসদীয় কমিটির সদস্যরা অষ্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়া সফর করে অভিজ্ঞতা অর্জন করে। এমনকি এ বিধানের পক্ষে অবস্থানকারী মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী ও বিধানের বিরুদ্ধে অবস্থানকারী অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের পরামর্শ গ্রহণ করেন। তবে সরকারি কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে এ ধারা বাতিলে আপত্তি জানানো হয়। এ নিয়ে টানাপোড়নের কারণে গত প্রায় তিন বছর বিলটি ফাইলবন্দী ছিলো।
গৃহীত সংশোধনী প্রস্তাব অনুযায়ী, দুদক কমিশনের মেয়াদ চার বছরের স্থলে পাঁচ বছর হবে। নতুন আইন অনুযায়ী নির্দিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠান দুদককে তথ্য দিতে বাধ্য থাকবে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুমোদন ছাড়া দুর্নীতি সংক্রান্ত কোন মামলা আদালত আমলে নেবে না। আর আদালতে অভিযোগ দাখিলের ক্ষেত্রে দুদকের অনুমোদন পত্রের কপিও দাখিল করতে হবে।
বিলে বলা হয়েছে, পুলিশের মহাপরিদর্শক, র্যাবের মহাপরিচালক, মহা-হিসাবনিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, এনবিআর চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সরকার ঘোষিত প্রতিষ্ঠান নিজ উদ্যোগে দুর্নীতি প্রতিরোধের জন্য দুদককে তথ্য দিবে। কোন প্রতিষ্ঠান যদি তথ্য না দেয় তবে দুদক তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারবে।
পাস হওয়া আইনে দুর্নীতি সংক্রান্ত অপরাধ আমলযোগ্য, অ-আপোষযোগ্য এবং অ-জামিনযোগ্য রাখার বিধান রাখা হয়েছে। মিথ্যা তথ্য দিয়ে কিংবা অনিশ্চিত তথ্য দিয়ে কোন তদন্ত বা বিচার পরিচালনা করলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে সর্বনিম্ন দুই থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারদণ্ড ভোগ করতে হবে। দুদকের কোন কর্মকর্তা-কর্মচারীর ক্ষেত্রেও একই দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। তথ্য প্রদানকারী নিজের পরিচয় গোপন রাখার বিধান এবং অভিযোগকারীর পরিচয় প্রকাশে বাধ্য করা যাবে না বলেও বলা হয়েছে।
বিলে আরো বলা আছে, কমিশন নিজে তাদের অপরাধ তদন্ত করতে পারবে না। দুদক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অপরাধ তদন্তের দায়িত্ব পুলিশ বা অন্য কোন সংস্থাকে দিতে হবে। দুদক সরকারের কাছে তথ্য চেয়ে না পেলে নিজ উদ্যোগে তদন্ত করতে পারবে। এছাড়া বিলে অভিযোগকারী ও তথ্য প্রদানকারীর পরিচয় প্রকাশে বাধ্য করা যাবে না- এমন বিধান রাখা হয়েছে।
বিলে বলা হয়েছে, তদন্তকারী কর্মকর্তাকে ১২০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে হবে। কোন কর্মকর্তা এটা করতে ব্যর্থ হলে আবেদনসাপেক্ষে অনধিক ৬০ কার্যদিবস বাড়ানো যাবে। এরপরেও ওই কর্মকর্তা ব্যর্থ হলে নতুন করে অন্যকোন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিয়ে ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে হবে। ব্যর্থ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার বিধান রাখা হয়েছে আইনে।
বিলের উদ্দেশ্য ও কারণসম্বলিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দুর্নীতি প্রতিরোধে দুদককে আরও শক্তিশালী, জবাবদিহিতাসম্পন্ন ও কার্যকর প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪- এর অধিকতর সংশোধনের উদ্দেশ্যে বিলটি আনা হয়েছে। প্রস্তাবিত সংশোধনের মাধ্যমে দুদকের কার্যক্রমের স্বচ্ছতা, দায়বদ্ধতা ও গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পাবে।
২০১১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি বিলটি সংসদে উত্থাপনের পর তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়। বিলটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর সংসদে প্রতিবেদন আকারে জমা দেওয়া হয়।
(দিরিপোর্ট২৪/আরএইচ/আরএইচ/এমএআর/নভেম্বর ১০, ২০১৩)