কিশোরগঞ্জে ৭৮ পাউন্ড কেকে রাষ্ট্রপতির জন্মদিন উদযাপন
কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি: নিজ জেলা কিশোরগঞ্জে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ৭৮তম জন্মদিন উদযাপন করা হয়েছে। এ সময় ৭৮ পাউন্ডের একটি কেক কাটা হয়। শুক্রবার গুরুদয়াল সরকারি কলেজ সংলগ্ন নরসুন্দা নদীর তীরের মুক্তমঞ্চে এই জন্মদিন উদযাপন করা হয়।
জন্মদিন উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত কেককাটা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের আহ্বায়ক কিশোরগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সভাপতি শাহ আজিজুল হক।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান, পুলিশ সুপার মাশরুকুর রহমান খালেদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) দুলাল চন্দ্র সুত্র ধর, কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র পারভেজ মিয়া, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কামরুল আহসান শাহজাহান, রাষ্ট্রপতিপুত্র রাসেল আহমেদ তুহিন, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বকুল, জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বাচ্চু, চিত্রনায়ক সাইমন সাদিক, সাবেক পৌর চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম নুরু, জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আমিনুল ইসলাম সোহেল, সাংবাদিক সাইফুল হক মোল্লা দুলু, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শহীদুল ইসলাম হুমায়ুন, যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম রানাসহ রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন শ্রেণি পেশার ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গ।
পরে রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে লেখা বেতার ও টিভি শিল্পী আবুল হাশেম বাঙালি সংগীত পরিবেশন করেন। এছাড়াও ঢাকা থেকে আসা শিল্পীদের নিয়ে একটি মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার আয়োজন করা হয়।
১৯৪৪ সালের ১ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জ জেলার হাওর উপজেলা মিঠামইনের কামালপুর গ্রামে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ জন্মগ্রহণ করেন। হাওরের জল-হাওয়ায় বেড়ে ওঠা ‘ভাটির শার্দুল’ খ্যাত আবদুল হামিদ দেশের টানা দুইবারের রাষ্ট্রপতি। তার বাবা তায়েবউদ্দিন এবং মা তমিজা খাতুন।
কামালপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তার শিক্ষাজীবন শুরু। এরপর ভৈরব কেবি স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েন। এসএসসি পাস করেন নিকলী উপজেলার গোড়াচাঁদ হাইস্কুল থেকে।
কিশোরগঞ্জ গুরুদয়াল কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক পাস করার পর ঢাকার সেন্ট্রাল ল’কলেজ থেকে এলএলবি ডিগ্রি নিয়ে কিশোরগঞ্জ বারে আইন পেশায় যোগ দেন আবদুল হামিদ।
১৯৬৯ সালে ছাত্রলীগে যোগদানের মাধ্যমে রাজনীতিতে তার হাতেখড়ি। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত পছন্দে মাত্র ২৬ বছর বয়সে বিস্তীর্ণ হাওরের দুর্গম এলাকা থেকে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়নে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে (ময়মনসিংহ-১৮) সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি অসামান্য অবদান রাখেন। ভারতের মেঘালয়ে রিক্রুটিং ক্যাম্পে এবং সে সময়ে সুনামগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জ জেলার বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্সের (মুজিব বাহিনী) সাব-সেক্টর কমান্ডার পদসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন আবদুল হামিদ।
১৯৭৩ সালের সাধারণ নির্বাচনে জাতীয় সংসদ সদস্য হিসেবে তিনি পুনর্নিবাচিত হন। স্বাধীনতার পর তিনি তার নির্বাচনী এলাকা থেকে সাতবার জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে বিজয়ী হয়ে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যার পর চরম বৈরী রাজনৈতিক পরিবেশেও আবদুল হামিদ তার বিশ্বাস এবং আদর্শের জায়গা থেকে তিলমাত্র বিচ্যুত হননি। এ কারণে ১৯৭৬ সালে তাকে কারাবরণ করতে হয়। তবে কোনো নিপীড়নই তাকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে সরাতে পারেনি।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে আবদুল হামিদ জাতীয় সংসদে ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হন। পরে তিনি একই সংসদে স্পিকারের দায়িত্ব পান। জাতীয় সংসদে সকল দলের কাছেই তিনি হয়ে ওঠেন অত্যন্ত জনপ্রিয়।
২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে গেলে তিনি সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতার দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদে আবারও তিনি স্পিকার নির্বাচিত হন।
প্রথম মেয়াদে ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল দেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে আবদুল হামিদ শপথ গ্রহণ করেন। ২০১৮ সালের এপ্রিলে তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে দেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/০১ জানুয়ারি, ২০২১)