জামিন বাতিল সংক্রান্ত হাইকোর্টের নির্দেশনা আপিল বিভাগে স্থগিত
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: উচ্চ আদালত থেকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য জামিন পাওয়ার পর তার অপব্যবহার না করলে সেই জামিন বাতিল করতে পারবেন না অধস্তন কোনো আদালত-এমন নির্দেশনা সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায় স্থগিত করেছে আপিল বিভাগ।
রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চ মঙ্গলবার এ আদেশ দেন।
চট্টগ্রামের মো. ইব্রাহিম নামের এক ব্যক্তির জামিন বিষয়ে ২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর চার দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেন হাইকোর্ট। ওই রায়ে চার দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়।
নির্দেশনাসমূহ হচ্ছে-
১। হাইকোর্ট বিভাগ থেকে কোনো আসামি যদি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য জামিনে মুক্তি পান, তবে জামিনের অপব্যবহারের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া অধস্তন আদালত তার জামিন বাতিল করতে পারবেন না।
২। নির্দিষ্ট সময়ের জন্য জামিনে মুক্তি পাওয়া ব্যক্তির জামিনের মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে হাইকোর্টের আদেশ দাখিল না করার কারণে অধস্তন আদালত তার জামিন বাতিল করে তাকে কারাগারে পাঠাতে পারবেন না।
৩। সংশ্লিষ্ট আসামি বা ব্যক্তির জামিন বাতিল করতে হলে হাইকোর্টের যে রুল বা আপিলে জামিন পেয়েছেন, সেই রুল বা আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
৪। হাইকোর্ট যে রুলে বা আপিলে জামিন দিয়েছেন, তা খারিজ না হওয়া পর্যন্ত অধস্তন আদালত তার জামিন বাতিল করতে পারবেন না। তবে হাইকোর্টের দেওয়া জামিনের শর্ত ভঙ্গ করলেই শুধু জামিন বাতিল করা যাবে।
বিচারপতি মো. হাবিবুল গণি ও বিচারপতি মো. বদরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এক রায়ে এই চার দফা নির্দেশনা দেন। নির্দেশনাটি প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করতে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রারকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
হাইকোর্ট বলেছে, ইদানীং লক্ষ করা যাচ্ছে হাইকোর্ট থেকে জামিনের পর নিয়মিত সংশ্লিষ্ট আদালতে (অধস্তন আদালত) হাজিরা দিচ্ছেন, এমন আসামির জামিন বাতিল করে তাকে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে। জামিনের অপব্যবহার না করলেও শুধু জামিনের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য হাইকোর্টের আদেশের কপি দাখিল না করার কারণে এই জামিন বাতিল করা হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন অধস্তন আদালত থেকে প্রায়ই এমনটি করা হচ্ছে। দিনের পর দিন এই প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে হাইকোর্ট ও বিচারপ্রার্থীরা আর্থিক ও শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
হাইকোর্টের এই নির্দেশনা স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। মঙ্গলবার আবেদনের পক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন শুনানি করেন। শুনানি শেষে আপিল বিভাগের চার বিচারপতি হাইকোর্টের রায়ের নির্দেশনা স্থগিতের পক্ষে মত দেন। এরপরই নির্দেশনাসমূহ স্থগিত করে দেন প্রধান বিচারপতি। আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এই স্থগিতাদেশ বহাল থাকবে। তবে আসামির জামিন বহাল রাখা হয়েছে।
আবু বকর চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি তার আট বছরের ছেলেকে বলাৎকারের অভিযোগে মো. ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানায় ২০১৮ সালের ১৬ মে একটি মামলা করেন। এ মামলায় ওই দিনই পুলিশ ইব্রাহিমকে গ্রেপ্তার করে।
ইব্রাহিম চট্টগ্রামের নারী ও শিশু নির্যাতন বিশেষ ট্রাইব্যুনালে জামিনের আবেদন করেন। ওই আদালত তাকে জামিন না দিলে তিনি হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করেন। হাইকোর্ট ওই বছরের ৭ সেপ্টেম্বর তাকে ছয় মাসের জামিন দেন এবং রুল জারি করেন। এরপর তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান।
এ অবস্থায় পুলিশ তদন্ত শেষে ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে। এরপর ইব্রাহিম ২০১৯ সালের ১৯ জুন চট্টগ্রামের ৫ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। কিন্তু ওই আদালত তার আবেদন খারিজ করে তাকে আবারও কারাগারে পাঠিয়ে দেন। এরপর তিনি হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করেন। হাইকোর্ট গত বছর ২৬ জুন তাকে তিন মাসের জামিন দেন।
একইসঙ্গে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারককে তলব করেন। ওই বিচারক ১৪ জুলাই হাইকোর্টে হাজির হয়ে ইব্রাহিমকে কারাগারে পাঠানোর আদেশের ব্যাখ্যা দেন। পরে ২১ জুলাই লিখিতভাবে হাইকোর্টের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চান। শুনানি শেষে আদালত ২০১৯ সালে চার দফা নির্দেশনা জারি করেন। গত বছর এই রায় প্রকাশ পায়।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/০৫ জানুয়ারি, ২০২১)