ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় রাজনৈতিক জোটের দলগুলো কাগজ- কলমে থাকলেও বাস্তবে নেই। আছে মাত্র ৬টি দল। দ্য রিপোর্টের অনুসন্ধানে এ তথ্য জানা গেছে।

১৯৯৮ সালের শেষের দিকে বিকল্প রাজনৈতিক জোট হিসেবে বাম গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের ৭টি দলের সঙ্গে চারটি দল মিলে বামপন্থী ও প্রগতিশীল ১১ দলীয় জোট গঠিত হয়। দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় ইস্যুতে ১১ দল মাঠে আন্দোলন সংগ্রাম পরিচালনা করছিল। এরই মধ্যে ২০০৪ সালে ৯ দফা দাবিতে ১১ দল, আওয়ামী লীগ, ন্যাপ (মোজাফফর) ও জাসদ মিলে একত্রে কর্মসূচি পালন শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৪ দলীয় জোট গঠিত হয়েছিল। বর্তমানে ১১ দলীয় জোটে রয়েছে মাত্র তিনটি দল। এ পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ, ন্যাপ ও জাসদ মিলে ১৪ দলীয় জোটে বর্তমানে দলের সংখ্যা মাত্র ৬টি।

জানা গেছে, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের অবহেলা, জোটের শরিক দলের অভ্যন্তরীণ সঙ্কট, জোটের নেতৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্ব, আদর্শগত মতপার্থক্য, ছোট ছোট ‘ব্যক্তি কেন্দ্রিক’ দলে বার বার ভাঙন এ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। ১১ দলের অনেক দল অবশ্য ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের সঙ্গে নির্বাচনী জোটের আগেই বেরিয়ে গেছে। বর্তমানে ১১ দলীয় জোটে থাকা তিনটি দল হচ্ছে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল ও গণতন্ত্রী পার্টি। এদের মধ্যে আবার ওয়ার্কার্স পার্টি ছাড়া বাকি দুই দলের অস্তিত্ব যেন নামসর্বস্ব। এমনকি এদের মধ্যে ওয়ার্কার্স পার্টি (মেনন অংশ) ও সাম্যবাদী দলেরই কেবল নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন রয়েছে।

জানা গেছে, ১১ দলীয় জোটের দলগুলো হল- বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), গণফোরাম, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ (খালেকুজ্জামান), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মাহবুব), গণতন্ত্রী পার্টি, সাবেক শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়ার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এমএল), শ্রমিক কৃষক সমাজবাদী দল, কমিউনিস্ট কেন্দ্র, বাংলাদেশ গণআজাদী লীগ ও গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি। জোট গঠনের শুরুতে জোটের ঘোষণাপত্রে বলা ছিল, তারা বিএনপি ও আওয়ামী লীগের দ্বি-দলীয় মেরুকরণের বাইরে বাম শক্তিকে একতাবদ্ধ করে একসঙ্গে আন্দোলন, নির্বাচন ও সরকার গঠন করবে।

২০০৪ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে জোট গঠনের ডাক এলে ওই বছরই ৯ সেপ্টেম্বর সাম্যবাদী দলের কার্যালয়ে বৈঠকে বসে আওয়ামী লীগ ও ১১ দলের নেতারা। সে সময় ২৩ দফা ঘোষণা করেছিল ১১ দল ও আওয়ামী লীগ। পরে জোটে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে ১১ দলে মতবিরোধ দেখা দেয়। ১১ দলের ৭ দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটে শরিক হওয়ার পক্ষে মত দিলে জোটে ভাঙ্গন দেখা হয়। আওয়ামী লীগের সঙ্গে নির্বাচনী জোটবদ্ধ হয় রাশেদ খান মেননের বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়ার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল, প্রয়াত নুরুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ গণতন্ত্রী পার্টি, হাজী আব্দুস সামাদের নেতৃত্বাধীন গণআজাদী লীগ, অজয় রায়ের নেতৃত্বাধীন কমিউনিস্ট কেন্দ্র, জাকির হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি ও ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরাম।

১১ দলের মধ্যে উল্লেখিত ৭ দল ২০০৫ সালে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করলেও দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে গণফোরাম ও গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টির নুরুল ইসলাম ও আবু তাহেরের নেতৃত্বে একটি অংশ আবার জোট থেকে বেরিয়ে যায়। ফলে মহাজোটের শরিক ১১ দলে তখন ছিল ৫ দল।

এ ছাড়া ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে ও পরে আওয়ামী লীগ গুরুত্ব না দেওয়ায় ও নিজেদের সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে জোটে নিষ্ক্রিয় রয়েছে গণতন্ত্রী পার্টি ও কমিউনিস্ট কেন্দ্র। ফলে জোটে ১১ দলের রাশেদ খান মেননের বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, দিলীপ বড়ুয়ার সাম্যবাদী দল ও হাজী আব্দুস সামাদের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ গণআজাদী লীগ, আওয়ামী লীগ, ন্যাপ ও জাসদ মিলে ১৪ দলে সর্বসাকল্যে এখন দল রয়েছে ৬টি।

এদিকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ চৌধুরী ১৪ দলীয় জোটে ১৪টি দল না থাকার তথ্য অস্বীকার করেন।

খালেদ মাহমুদ চৌধুরী বুধবার সন্ধ্যায় দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) দীর্ঘদিন পরে ১৪ দলের বৈঠক হতে যাচ্ছে। ১৪ দল একটি রাজনৈতিক আদর্শ ও প্ল্যাটফর্মের নাম। অসাম্প্রদায়িক-জঙ্গিবাদমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণের লড়াই সংগ্রামের নাম। এই জোটে ১৪টি দলই আছে।’

বর্তমানে ১৪ দলের কার্যকারিতা সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স দ্য রিপোর্টকে বলেন, বিএনপি ও আওয়ামী লীগের বাইরে দ্বি-দলীয় রাজনৈতিক ধারা সৃষ্টির লক্ষ্যে ১১ দলীয় জোট করা হয়েছিল। কিন্তু এই লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয়ে দুই দলের একটিতে যোগ দিলে তো আর সে জোটে থাকা যায় না। তাই আদর্শ ত্যাগ করে কেউ যদি ১১ দলের সাইনবোর্ড ব্যবহার করে তাকে আমি নৈতিক মনে করি না।

১১ দলের কার্যক্রমের বিষয়ে বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘সময়ই বলে দেবে আবার কখন ১১ দল সক্রিয় হবে।’

সাম্যবাদী দলের পলিটব্যুরো সদস্য লুৎফর রহমান দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘নির্বাচনের পর একবার মাত্র ১৪ দলের বৈঠক হয়েছে, তবে ১১ দলের হয়নি। অনেকে নেই। চলে গেছেন। সামনে বৈঠক ডাকা হবে।’

গণআজাদী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসকে শিকদার বলেন, ‘১৪ দল চাঙা থাকলে তো আর ১১ দলের প্রয়োজন পড়ে না। শুনেছি এ মাসে একটি বৈঠক ডাকা হবে।’

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির একজন শীর্ষ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ওদের (আওয়ামী লীগ) যখন মর্জি হয় তখন ডাকে। প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে ডাকে না।’

(দ্য রিপোর্ট/ সাআ/এইচএসএম/এনআই/মার্চ ১৯, ২০১৪)