দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: সন্তানকে শুদ্ধাচারী আলোকিত মানুষ করতে হলে আপনাকে জানতে হবে ভালো-মন্দ সম্পর্কে, ন্যায়-অন্যায় সম্পর্কে, করণীয়-বর্জনীয় সম্পর্কে। নৈতিকতার কষ্টিপাথরে যাচাই করে নিতে হবে প্রতিটি কথা ও কাজকে। ব্যক্তির শুদ্ধাচার চর্চার লালনভূমি তার পরিবার। পরিবারে শুদ্ধাচারের চর্চা শুরু হলে তা ছড়িয়ে পড়বে চারপাশে, সমাজে। তার প্রভাব পড়বে জাতীয় জীবনে। ব্যক্তি, পরিবার এবং সমাজ শুদ্ধাচারী হলেই দুর্নীতি ও অনাচারমুক্ত স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে উঠবে। সম্পদের সুষম বণ্টন হবে। সাধারণ মানুষ ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক অগ্রগতি থেকে লাভবান হবে। সন্তানকে পরিবারের অংশ করে তুলতে তাই বাবা-মায়েরা কিছু ছোট ছোট করণীয় অনুসরণ করতে পারেন-

১. ছোটবেলা থেকেই তাকে পরিবারের কাজের অংশীদার হতে শেখান। সংসারের যে কাজগুলো বাবা-মা হিসেবে আপনাদের করতে হয়, সময়-সুযোগমতো সেসব কাজে তাকেও শরিক করে তুলুন। কষ্ট হবে, পারবে কি না, ইত্যাদি ভেবে এসব থেকে তাকে দূরে সরিয়ে রাখবেন না। নিজের কাজগুলো তাকে নিজেকেই করতে দিন। নিজের বই, কাপড়চোপড় গুছিয়ে রাখা, নিজের খাবার নিজে নিয়ে খাওয়া, স্কুলের জন্যে তৈরি হওয়া, গোসল করা ইত্যাদি কাজগুলো যাতে সে নিজে নিজেই করতে পারে, সেভাবে তৈরি করুন।

২. ছোট থেকেই একা একটা ঘরে থাকার অভ্যাস করতে দেবেন না। অন্য ভাইবোনদের সাথে শেয়ার করতে দিন। বা পরিবারের অন্য কোনো সদস্যকেও সে রুমে রাখুন। বড় হবার পর একা থাকতে হলেও সারাক্ষণ দরজা বন্ধ করে ভেতরে থাকার অভ্যাস যাতে না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখুন।

৩. সারাক্ষণই মোবাইল, ট্যাব, ল্যাপটপ বা কম্পিউটার অর্থাৎ এ জাতীয় ইলেকট্রনিক গ্যাজেট নিয়ে তাকে থাকতে দেবেন না। বরং আপনারা তাকে সময় দিন। তার পছন্দ, শখ এসব নিয়ে গল্প করুন। বেড়াতে নিয়ে যান। পছন্দের কাজে ব্যস্ত রাখুন। সবসময় মনে রাখবেন আপনার সন্তানের বিকাশের জন্যে আপনার স্নেহ-মমতা ও সমমর্মিতাই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। তাই মমতা ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন কল্যাণকামিতায় তাকে বড় করে তুলুন।

৪. বাড়িতে আত্মীয় বন্ধুরা এলে তাদের সাথে তাকে পরিচয় করিয়ে দিন। কারো বাড়িতে গেলে বা কোনো নিমন্ত্রণে গেলে তাদেরকেও সাথে নিয়ে যান। অন্য ভাইবোন, কাজিন বা সমবয়সীদের সাথে খেলনা, চকোলেট বা পছন্দের যে-কোনো জিনিস ভাগ করে নিতে শেখান।

৫. সারাক্ষণ শুধু পড়া পড়া বা কোচিং, ট্রেনিং ইত্যাদিতে তাকে ব্যস্ত রাখবেন না। কথা বলার সময়ও সারাক্ষণ শুধু এসব নিয়েই কথা বলবেন না। তার সাথে নানান বিষয় নিয়ে গল্প করুন। সন্তানের ওপর জীবনের লক্ষ্য চাপিয়ে দেবেন না। সিদ্ধান্ত নিতে তাকে সহযোগিতা করুন। চাকরির পরিবর্তে তাকে স্বাধীন পেশা গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করুন।

৬. নিজ নিজ ধর্মবিশ্বাস অনুসারে সন্তানকে ধর্মীয় শিক্ষা দান করুন। সঠিক ধর্ম জ্ঞানের অভাব সন্তানকে ধর্মান্ধ করতে পারে। ধর্মগ্রন্থের মর্মবাণী অনুধাবনে, অনুশীলনে তাকে উদ্বুদ্ধ করুন। নিজ নিজ ধর্মের মহামানব এবং সমাজকর্মে অবদান রাখা বিশিষ্টজনদের জীবনী পাঠ করান এবং এ সম্পর্কে আলোচনা করুন।

৭. ছোটবেলা থেকেই সন্তানকে ভালো কাজে, ভালো বা সৎসঙ্ঘের সাথে সম্পৃক্ত করুন। নৈতিক, মানসিক, আত্মিক ও সৃজনশীল গুণাবলি বিকাশের সুযোগ সৃষ্টি করুন। খেলাধূলা, বইপড়া, মেডিটেশন, যোগব্যায়াম, গাছ লাগানো ও তার পরিচর্যা, সঙ্গীত চর্চা, ছবি আঁকা, সামাজিক সেবামূলক কাজে অংশগ্রহণ এবং অন্যকে সহযোগিতা, অন্যের প্রতি মমতায় তাকে উদ্বুদ্ধ করুন।

৮. সন্তানকে নেতিবাচক কথা বলে তিরস্কার করবেন না। ধমকে কথা বা রাগের মাথায় অভিশাপ দেবেন না। সবসময় আদেশ না করে তার করণীয় কাজ যুক্তি দিয়ে বুঝিয়ে দিন। অন্যদের সামনে তাকে বকা বা তার ভুল ধরিয়ে দেয়া থেকেও বিরত থাকুন। পরে শুধরে দিন। সন্তানের কোনো ভুলকে অপরাধ বা পাপ হিসেবে তুলে ধরবেন না। তাকে শোধরাবার চেষ্টা করুন। তবে ভুলের মাশুল তাকে মাঝে মাঝে পেতে দিন। যা তাকে ভুল থেকে শিক্ষা নিতে সাহায্য করবে।

৯. সন্তান কোনো কিছু চাওয়ার সাথে সাথেই তাকে তা দেয়ার অভ্যাস পরিহার করুন। তার অন্যায় আব্দার পূরণ করবেন না। পরিবারের আর্থিক সামর্থ্য ও বাস্তব অবস্থা সম্পর্কে সন্তানকে যথাযথ ধারণা দিন। ছেলে মেয়ে নির্বিশেষে সন্তানকে সমান দৃষ্টিতে দেখুন। এক সন্তানকে অন্য সন্তানের সাথে তুলনা করবেন না।

১০. সন্তানের মধ্যে কোনো বদভ্যাস তৈরি হতে দেবেন না। বদভ্যাসকে প্রথমেই শনাক্ত করুন ও তা দূর করুন। বিনোদনের নামে সন্তান অপসংস্কৃতি ও ড্রাগ এডিকশনের শিকার হচ্ছে কি না লক্ষ্য রাখুন। বড় হওয়ার সাথে সাথে তার বন্ধুদের ব্যাপারে সজাগ থাকুন।

এছাড়া সন্তানের সামনে নিজেকে আদর্শ হিসেবে উপস্থাপন করুন। তবে একেবারে নিষ্পাপ, নির্ভুল হিসেবে তুলে ধরবেন না। ভুল করে ফেললে দুঃখ প্রকাশ করুন। সন্তানকে আদরের নামে প্রশ্রয় দেবেন না ও শাসনের নামে অত্যাচার করবেন না। আদর ও শাসনের সমন্বয়ে তাকে বিকশিত হতে দিন। বিষয় ও বয়স বুঝে তাদেরকেও পারিবারিক পরামর্শে অংশীদার করুন।
-ড. সালেহা কাদের

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/০২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১)